ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘শামসুর রাহমানের কবিতা ছিলসত্যের শক্তিতে শাণিত’

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

‘শামসুর রাহমানের কবিতা ছিলসত্যের শক্তিতে শাণিত’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বদেশের ভাবনাতাড়িত কবি শামসুর রাহমানের জন্মদিন ছিল সোমবার। ৮৯তম জন্মদিনে কবিকে জানানো হয়েছে শ্রদ্ধা-ভালবাসা। এদিন আলোকচিত্রীর আলোকচিত্রে অমলিন হাসি নিয়ে ধরা দিয়েছেন কবি। বাংলাদেশের কবির মমত্ববোধের কথা উচ্চারিত হয়েছে বিশিষ্টজনের আলোচনায়। কার্তিকের বিকেলে বাংলা একাডেমি ও জাতীয় জাদুঘরে উচ্চারিত হলো কাব্য রচনায় কবি শামসুর রাহমানের কীর্তির কথা। প্রদর্শিত হলো তাঁর নানা আলোকচিত্র। কবির জন্মদিনের কথনে বক্তারা বলেছেন, শামসুর রাহমানের কবিতা ছিল সত্যের শক্তিতে শাণিত। হৃদয়জুড়ে বাংলাদেশকে এঁকে নিয়ে শামসুর রাহমান কবিতার সঙ্গে সংসার সাজিয়েছিলেন। তার মতো করে আর কেউ বাংলাদেশকে দেখেননি। কবির জন্মদিন উপলক্ষে এদিন বিকেলে জাতীয় জাদুঘরে তার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ছিল আলোকচিত্রী এমএ তাহেরের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। একই সময়ে বাংলা একাডেমির আয়োজনে ছিল আলোচনা সভা। জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনের সামনের খোলা আঙ্গিনায় অনুষ্ঠিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে নানা অভিব্যক্তিতে ধরা দিয়েছেন শামসুর রাহমান। আর সেসব ছবিতে কবির সূত্র ধরে উঠে এসেছে বাংলাদেশের আন্দোলনমুখর দিনগুলি। কবির সঙ্গে ফ্রেমবন্দী হয়েছেন সমসাময়িক শিল্পী ও কবিরা। কবির একান্ত মুহূর্তের ছবির সঙ্গে শোভা পেয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিংবা সভা-সমিতিতে তার অংশ নেয়ার ছবি। একটি ছবিতে ১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বরে স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনন্দঘন মূহূর্তে দেখা যায় শামসুর রাহমানকে। এছাড়া নানা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ছবিতে কবির সঙ্গে ফ্রেমবন্দী হয়েছেন কলিম শরাফী, সৈয়দ শামসুল হক, রফিক আজাদ, কাইয়ূম চৌধুরী, নাসিরউদ্দিন ইউসুফসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ছিল আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। পরে তিনি প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করেন। আলোচনায় অংশ নেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কবি নাসির আহমেদ, কবি মাহবুব আজিজ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। হাসানুল হক ইনু বলেন, ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতির কোন বিরোধ নেই। তাই যারা সংস্কৃতিচর্চার বিরোধিতা করে তারা সমাজের শত্রু, দেশের শত্রু। তিনি বলেন, শামসুর রাহমান নাগরিক কবি ছিলেন। মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, ক্ষোভ উঠে এসেছে তার কবিতায়। তিনি সরকারের পোষা কবি ছিলেন না। সেজন্য তার কবিতা ছিল সত্যের শক্তিতে শাণিত। জঙ্গীবাদ, ধর্মান্ধ মৌলবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তিনি কবিতায় সোচ্চার ছিলেন, সেজন্য তাঁকে জঙ্গী হামলার শিকার হতে হয়েছিল। কবি শামসুর রাহমানের কবিতা বর্তমান সময়েও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, শামসুর রাহমান প্রথম থেকেই ব্যক্তির অনুভূতির কথা, দেশের কথা, মানুষের কথা কবিতায় বলেছেন। তার কবিতা জাতির কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছে। শামসুর রাহমান আমাদের সময়ের শ্রেষ্ঠ কবি। কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, আবেগ কাটিয়ে কবি শামসুর রাহমানকে খুঁজে নেয়ার সময় এসেছে। বাংলা ভাষার জন্য, আধুনিক কবিতার জন্য কবির শক্তি ও স্বরূপ উন্মোচন প্রয়োজন। কবি নাসির আহমেদ বলেন, সমকালীন জীবনের সকল প্রান্তকে তিনি কবিতায় স্পর্শ করেছেন। কবি মাহবুব আজিজ বলেন, কবি শামসুর রাহমান ভিন্নমাত্রার কবি ছিলেন। প্রথম থেকেই তিনি যে বিশেষ গোত্রের কবি তা তার কবিতায় উঠে এসেছে। তার কবিতায় প্রেম, দেশপ্রেম, দ্রোহ সব উঠে এসেছে। কিন্তু তা কবিতার শিল্পকে অস্বীকার করে নয়। কবিকে নিবেদিত বাংলা একাডেমির আয়োজন ॥ শামসুর রাহমানের ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার বিকেলে আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘শামসুর রাহমানের কবিতার দেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. তারেক রেজা। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল এবং ড. অনু হোসেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবি কাজী রোজী এবং ড. আলী আসগর। মূল প্রবন্ধে ড. তারেক রেজা বলেন, হৃদয়জুড়ে বাংলাদেশকে এঁকে নিয়েই শামসুর রাহমান কবিতার সঙ্গে সংসার সাজাতে নেমেছিলেন। তার কবিতায় যে বাংলাদেশ বারবার উঁকি দেয়, তা তার মতো করে আর কেউ দেখেননি। কেউ যদি দেখতেন, তাহলে বারবার শামসুর রাহমানের কবিতার কাছে ফিরে যাওয়ার আকুতি আমাদের মধ্যে এমন তীব্র হতো না কিছুতেই। শামসুর রাহমান তাঁর মতো করে দেখতে চেয়েছেন, দেখাতে চেয়েছেন তাঁরই দৃষ্টিস্নাত অন্য এক বাংলাদেশকে এবং এ চাওয়ার সঙ্গে তার শিল্পসত্তার সংযোগসাধনের কাজটিও তিনি অত্যন্ত নিপুণভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছেন। আলোচকদ্বয় বলেন, শামসুর রাহমান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর কবিতায় ব্যক্তি ও সমষ্টিকে যুগপৎ ধারণ করেছেন। বাংলা কবিতায় তিনি সংযোজন করেছেন এক নিজস্ব নতুন স্বর। গত শতকের ষাটের দশকে রচিত কবিতার পর কবিতায় শামসুর রাহমান অঙ্কন করেছেন আসন্ন বাংলাদেশের মানচিত্র। স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার কণ্ঠ কবিতার টেবিল থেকে রাজপথের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। খেলাঘরের ‘রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত’ জয়ন্তী ॥ কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর সোমবার সন্ধ্যায় এক আয়োজনে বাংলা সাহিত্যের তিন প্রধান কবির জন্মজয়ন্তী উৎসবের আয়োজন করে। এ কবিত্রয়ী হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। তাদের স্মরণে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী ২০১৭’ শিরোনামে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান প্রধান অতিথি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সৌমিত্র শেখর বিশেষ অতিথি ছিলেন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতিমন্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন খেলাঘরের সভাপতিম-লীর সদস্য প্রণয় সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ। অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে সংগঠনের শিল্পীরা একক ও সমবেত সঙ্গীত, একক ও সমবেত আবৃত্তি এবং সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করেন।
×