ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সফল আয়োজনে লেটার মার্কস বাংলাদেশকে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

সফল আয়োজনে লেটার মার্কস বাংলাদেশকে

রুমেল খান ॥ কোন আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করাটাই শেষ কথা নয়। এর আগে আরও অনেক কিছুই করতে হয়। সদিচ্ছা, পরিকল্পনা, অর্থ, পরিশ্রম, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা ... এ রকম আরও অনেক কিছুই। এর একটিতে ঢিল পড়লেই পুরো আয়োজন মাটি হয়ে যেতে পারে। ভেস্তে যেতে পারে সবকিছু। আয়োজকদের তখন বদনামের ভাগীদার হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। মোট কথা, পুরো বিষয়টিই হচ্ছে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জটি অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সফলভাবেই মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন (বাহফে)। তারা সফলভাবেই আয়োজন করতে পেরেছে ঢাকার মওলানা ভাসানী জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘এশিয়া কাপ হকি’র দশম আসরটি (১১-২২ অক্টোবর)। ৩২ বছর পর আবারও এই আসরটি আয়োজন করল তারা। ১৯৮৫ সালে সেবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বসেছিল এশিয়া কাপ হকির দ্বিতীয় আসরটি। অথচ এবারের দশম আসরটি শুরুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যথেষ্ট সংশয় ছিল আসরটি ঠিকমতো শুরু করা যাবে কি না। কেননা শুরুর শেষ মুহূর্তেও চলেছে সংস্কার কাজ! এ নিয়ে যথেষ্ট গলদঘর্মই হয়েছে বাহফে। কিন্তু একেবারে শেষ সময়ে বাহফে সবকিছুই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে তাক লাগিয়ে দেয়। তবে খেলা শুরু হওয়ার পর আবার কিছুটা সমস্যায় পড়ে বাহফে। কারণটা আবহাওয়াজনিত। ১৯-২১ অক্টোবর এই তিনদিন উপকূলীয় অঞ্চলে নি¤œচাপ সৃষ্টির প্রভাবে দেশজুড়ে হয় অবিরাম বর্ষণ। এতে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। নিম্নচাপের কুপ্রভাব পড়ে এশিয়া কাপ হকি আসরেও। টার্ফে ও স্টেডিয়ামে ঢোকার প্রবেশপথের মুখে জল জমে গেলে তা নিষ্কাশন করে খেলার উপযোগী করতে দেরি হওয়ায় প্রতিটি ম্যাচ বিলম্বে শুরু করতে হয়। টুর্নামেন্ট শেষ হবার আগের দিন এই আসর এবং টুর্নামেন্টের আয়োজন ও ভেন্যু নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন এএইচএফ-এর প্রধান নির্বাহী তৈয়ব ইকরাম। তিনি জানান সামনে বাংলাদেশকে আরও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবার পরিকল্পনা আছে এএইচএফের। এবারের এশিয়া কাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ফাইনালে তারা ২-১ গোলে মালয়েশিয়াকে হারায়। এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো ফাইনাল খেলে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জিতল ভারত। মালয়েশিয়া এর আগে সর্বাধিক পাঁচ চতুর্থ হলেও এবারই প্রথম ফাইনাল খেলে। দশ বছর পর আবারও এশিয়া কাপ হকির শিরোপা পুনরুদ্ধার করে ভারত। এছাড়া গতবারের চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ কোরিয়াকে ৬-৩ গোলে হারিয়ে পাকিস্তান তৃতীয় হয়। ২৪ ম্যাচে মোট ১২৬ গোল হয়। সবচেয়ে বেশি গোল করে ভারত, ২৮টি। সবচেয়ে বেশি গোল হজম করে ওমান এবং বাংলাদেশ, ২৪টি করে। ব্যক্তিগত সর্বাধিক গোল করেন ভারতের হারমানপ্রীত সিং এবং মালয়েশিয়ার ফাইজাল সারি, ৭টি করে। হ্যাটট্রিক হয় চারটি (পাকিস্তানের এজাজ আহমেদ এবং আবু মাহমুদ, মালয়েশিয়ার ফাইজাল সারি এবং চীনের দু তালাকে)। এই আসরে বাংলাদেশ ষষ্ঠ স্থান লাভ করে। এর ফলে পরবর্তী এশিয়া কাপের আসরে বাছাইপর্বে না খেলে সরাসরি মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। এই আসরে সেরা বাংলাদেশী খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ফরহাদ আহমেদ সিটুল। বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস এ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) এই পুরস্কার দেয়। দীর্ঘ ৩২ বছর পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া কাপ। আর এই ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে বিএসপিএ শুরু থেকেই উদ্যোগী ছিল। তারই অংশ হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে হকি স্টারস: ১৯৮৫ ও ২০১৭ শীর্ষক একটি ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেছিল সংগঠনটি। এছাড়া এএইচএফের দৃষ্টিতে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় হন ফাইজাল সারি (মালয়েশিয়া), সর্বোচ্চ গোলদাতা (৭টি) ফাইজাল সারি (মালয়েশিয়া) এবং হারমানপ্রীত সিং (ভারত), সেরা গোলরক্ষক হন আকাশ চিকতে (ভারত), সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হন আরশাদ হোসেন (বাংলাদেশ), সেরা গোলদাতা হারমানপ্রীত সিং (ভারত) এবং ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হন আকাশদীপ সিং (ভারত)। গ্রুপ ম্যাচে জাপানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ খেলে তাদের তৃতীয় ম্যাচ। এতে বাংলাদেশ হেরে যায় ১-৩ গোলে। এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল দুই ম্যাচ (পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে ম্যাচ খেলার পর) এবং দীর্ঘ ১৪৮ মিনিট পর প্রথম কোন পেনাল্টি কর্নার (পিসি) পায় এবং তা থেকেই চলতি আসরে প্রথম গোল আদায় করে। মজার ব্যাপার পুরো ম্যাচে তারা ওই একটিই পিসি পেয়েছিল! আসর শুরুর আগে একটি দুঃসংবাদ পা বাংলাদেশ। ওয়াল্ড হকি লীগে লাল কার্ডের কারণে তিন ম্যাচের জন্য নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে ছয় ম্যাচ করায় বাংলাদেশ দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় সারোয়ার হোসেন এই আসরে খেলতে পারেননি। এই আসর আয়োজন উপলক্ষে বাহফে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুল আলোচিত ফ্লাডলাইট স্থাপন ছাড়াও স্টেডিয়াম, গ্যালারি, প্রেসবক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনা সংস্কার করে। সব মিলিয়ে এই আসরটি বাংলাদেশ তথা বিশ^ হকিপ্রেমীদের হৃদয়ে যে আলোড়ন তুলেছে, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
×