ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী দায়ী ॥ রাশিয়া

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ড্রেসডেনের মতোই রাকা এখন ধ্বংসস্তূপ

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ড্রেসডেনের মতোই রাকা এখন ধ্বংসস্তূপ

মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী সিরিয়ার রাকা শহরে যে অবিরাম বোমা হামলা চালিয়েছে তাকে রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির ড্রেসডেনের সঙ্গে তুলনা করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একই ভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন উভয়েই জার্মানির ড্রেসডেন শহরে বোমা হামলা চালিয়েছিল। খবর ইন্ডিপেন্ডেন্টের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে ১৯৪৫ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মিত্রবাহিনী পূর্ব জার্মানির ঐতিহাসিক শহর ড্রেসডেনে বোমাবর্ষণ করেছিল। ওই সময়ে বোমাবর্ষণের বিষয়টি খুবই বিতর্কিত ছিল। কেননা বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ড্রেসডেন শহরটি যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ, উৎপাদন বা কোন বড় শিল্প কেন্দ্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাপক বিমান হামলা হওয়ার আগে এটি বড় ধরনের কোন হামলার সম্মুখীন হয়নি। তবে ১৫ ফেব্রুয়ারি নাগাদ শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং হামলায় অগণিত বেসামরিক লোক নিহত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ড্রেসডেন শহর ইঙ্গ-মার্কিনীদের সবচেয়ে বড় ধরনের বোমাবর্ষণের শিকার হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জার্মানির অধিকাংশ শহর মিত্রবাহিনীর বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। রাশিয়া রবিবার এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, সিরিয়ার রাকায় মার্কিন জোট বাহিনী যেভাবে বোমা হামলা চালিয়েছে তাতে শহরটিকে পৃথিবীর বুক থেকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটা দেখে মনে হচ্ছে যে, রাকা শহরে পশ্চিমারা নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য খুবই তৎপর। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগোর কোনাশেনকোভ বলেন, সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রাকা শহরে প্রায় দুই লাখ লোক বাস করত। এখন সেখানে ৪৫ হাজারের বেশি নেই। রাকা এখন ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ড্রেসডেন শহরের ভাগ্য বরণ করেছে। যদিও তিনি রাকা পুনঃনির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তার বিষয়ে পশ্চিমা প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। সিরিয়ায় বেসামরিক লোকদের ওপর অবিরামভাবে বোমা হামলা করার জন্য রাশিয়াকে মানবাধিকারকর্মীরা ও পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা সব সময়ই অভিযুক্ত করে আসছে। রাশিয়া প্রতিবারই সেটি অস্বীকার করেছে। গত সপ্তাহে সিরিয়ার রাকা শহরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিলিশিয়া বাহিনী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে নিজেদের বিজয় ঘোষণা করে। শহরটি আইএসের রাজধানী ছিল। চার মাসব্যাপী যুদ্ধ শেষে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট মিলিশিয়ারা তাদের বিজয়ের পতাকা সেখানে উত্তোলন করতে সক্ষম হয়। মেজর জেনারেল কোনাশেনকোভ অভিযোগ করেন, অতীতে সিরিয়ার অন্যান্য অংশের বেসামরিক লোকদের জন্য মানবিক সহায়তা দেয়া নিয়ে রাশিয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, শুধুমাত্র রাকায় আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর এত তাড়াহুড়ো করার পেছনে কারণ কী? তিনি নিজেই বলেছেন, এর একমাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে এই যে, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা জোট রাকায় বোমাবর্ষণের মাধ্যমে যে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা যত দ্রুত সম্ভব ঢাকার চেষ্টা করছে তারা। পাশাপাশি তারা হাজার হাজার বেসামরিক লোকের লাশ দাফন করতে চায়। এদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট জানিয়েছে, তারা সিরিয়া ও ইরাক উভয় দেশেই আইএসের বিরুদ্ধে বোমা হামলা চালানোর সময় বেসামরিক হতাহত এড়াতে সাবধানতা অবলম্বন করেছে। তারপরও যে কোন অভিযোগের যথাযথ তদন্ত করা হবে। এর আগে জোট বাহিনী বেসামরিক লোক হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেছিল।
×