ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টঙ্গীতে ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুট, আহত ৩

প্রকাশিত: ০০:৫২, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

টঙ্গীতে ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুট, আহত ৩

নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী ॥ টঙ্গীতে একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে দুই ঘণ্টাব্যাপী সশস্ত্র ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে ফ্ল্যাটের সদস্যদের হাত,পা, মুখ বেঁধে ৭০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও সাড়ে ৫ লাখ টাকাসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে। রবিবার রাতে স্থানীয় দত্তপাড়া হোসেন মার্কেট এলাকায় সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মহিলা কমিশনার ফিরোজা আক্তারের দুই ভাইয়ের বাড়িতে এই দুর্ধর্ষ ডাকাতির পর এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাসা-বাড়িতে এতো বড় ডাকাতির ঘটনা স্মরণকালে টঙ্গীতে ঘটেনি বলে স্থানীয়রা জানান। ডাকাতদের আঘাতে ফ্ল্যাটের ৩ বাসিন্দা আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- ফ্ল্যাট মালিক মনিরুজ্জামান ভূইয়ার ছেলে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিয়ামুল বশির নাবিল (১৭), মেয়ে ফাতেমা (১২) ও গৃহপরিচারিকা জুবেদা (৪৫)। বাড়ির মালিক মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া জানান, তারা দুই সহোদর নিজস্ব ৬ তলা ফ্ল্যাটের দ্বিতীয় তলায় পাশাপাশি দুই ফ্ল্যাটে বাস করেন। রবিবার মাগরিবের নামাজের পর এক ব্যক্তি তার বড় ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন ভূইয়ার খোঁজ জানতে কৌশলে বাসায় ঢুকে পরে। এর পর একে একে আরো ১৪/১৫ জন সশস্ত্র ডাকাত বাসায় ঢুকে যায়। বাসায় তখন গৃহপরিচারিকা ছাড়া কেউ ছিলেন না। ডাকাতরা প্রথমেই গৃহপরিচারিকা নার্গিসকে হাত, পা ও মুখ বেঁধে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। এর পর পাশের ফ্ল্যাটে (মনিরুজ্জামানের বাসায়) ঢুকে তার স্ত্রী নাজমা ইসলাম, শিশু কন্যা ফাতেমা, মাহদিয়া ও গৃহপরিচারিকা বিলকিসকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হাত-পা, মুখ বেঁধে মোয়াজ্জেমের ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে সকলকে একটি কক্ষে নিয়ে মুখ ও হাত-পা বেঁধে ফ্লোরে শুইয়ে রাখে। ইতিমধ্যে মনিরুজ্জামানের ছেলে নাবিল এবং মোয়াজ্জেম ও তার স্ত্রী জেসমিন বাহির থেকে বাসায় এলে তাদেরকেও অস্ত্রের মুখে মুখ, হাত-পা বেঁধে সকলকে একই কক্ষে ফেলে রাখে। এর পর ডাকাতরা দুটি ফ্ল্যাটের আলমিরা, ওয়াড্রপসহ সকল আসবাবপত্রের তালা ভেঙ্গে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কারের খোঁজে তল্লাশি চালায় এবং উভয় ফ্ল্যাট থেকে মোট ৭০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, সাড়ে ৫ লাখ টাকা ও এইচপি ব্র্যান্ডের একটি ল্যাপটপসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ডাকাতরা প্রতি দুই জন করে ফ্ল্যাট ত্যাগ করে এবং রাত ৮টা নাগাদ সকল ডাকাত চলে যায়। ডাকাতরা যাওয়ার সময় একটি শিশুর চোখের বাঁধ খুলে যায়। পরে ওই শিশু বহু কষ্টে নিজের হাতের বাঁধ ফসকে প্রথমে তার মাকে মুক্ত করে। এর পর একে একে সবার বাঁধ খুলার পর সকলে চিৎকার চেচাঁমেচি শুরু করে এবং মনিরুজ্জামানের ছেলে দৌড়ে ফ্ল্যাট থেকে নেমে প্রতিবেশীদের সাহায্য চেয়ে ডাক চিৎকার শুরু করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ভয়াবহ এ ডাকাতির ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকেলে টঙ্গী মডেল থানায় মামলা হয়েছে। ইদানিং টঙ্গীতে প্রায় প্রতিদিনই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই সংঘটিত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর নগরির কয়েকটি রোড ছিনতাইকারীদের দখলে চলে যায়। পরিস্থিতি বর্তমানে চরম বিপদজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। থানা পুলিশের ঢিলে ঢালা দায়িত্ব পালনের কারণে পেশাদার সন্ত্রাসীরা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। পুলিশের সহায়তায় পেশাদার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা সম্প্রতি হোসেন মার্কেট এলাকায় একটি বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং মিলগেট এলাকার নামা বাজার বস্তি জবর দখল প্রচেষ্টার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে এখনো রীতিমত আতঙ্ক বিরাজ করছে। একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীর টাকায় থানা কম্পাউন্ডে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পেশাদার ওই সন্ত্রাসী থানায় মাসে ৩০ হাজার টাকার বখরা দিয়ে টঙ্গীর চেরাগ আলী ও নগর ভবন এলাকার ফুটপাতের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করায় সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদেরকেও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
×