ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মধুপুর বনের নয় কিলোমিটার সড়ক অপরাধীদের অভয়ারণ্য

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

মধুপুর বনের নয় কিলোমিটার সড়ক অপরাধীদের অভয়ারণ্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মধুপুর বনাঞ্চলের নয় কিলোমিটার সড়ক যেন অপরাধীদের অভয়ারণ্য। বহুজাতিক কোম্পানীর কর্মী রুপা খাতুনকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করে এই এলাকায় ফেলে রাখা হয়। এরপর থেকে আলোচনায় এসেছে অপরাধ প্রবন এই মহাসড়কটি। স্থানীয়রা এই সড়কে পুলিশি টহল জোরদার এবং সন্ধ্যার পর পুলিশ প্রহরায় যানবাহন এই নয় কিলোমিটার পারাপারে দাবি করেছে। স্থানীয়রা জানান, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মধুপুর উপজেলার পঁচিশমাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে রসুলপুর পর্যন্ত নয় কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে বনাঞ্চল। মহাসড়কের এই অংশটুকুর একমাত্র টেলকি বাসস্ট্যান্ড ছাড়া রাস্তার পাশে কোন বাড়ি-ঘর বা লোকালয় নেই। ফলে নির্জন এলাকা অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। ছিনতাই, ডাকাতির মত ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ওই অঞ্চল থেকে অপরাধীরা এসে খুব সহজেই অপরাধ করে বনের ভিতরের রাস্তা দিয়ে চলে যায়। মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে অনেক সময়। বিগত ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সন্ধ্যার পর বাসে যাওয়ার সময় বাসন্তি মাংসাং নামক আদিবাসী এক শিক্ষিকা ডাকাতদের ছুড়িকাঘাতে নিহত হন। এই হত্যার প্রতিবাদে এলাকার আদিবাসীরা আন্দোলন শুরু করেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে পঁচিশমাইল থেকে রসুলপুর পর্যন্ত সন্ধ্যার পর যানবাহন পুলিশি প্রহরায় পারাপারের ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু গত প্রায় আড়াই বছর ধরে পুলিশ প্রহরায় যানবাহন পারাপার বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়ে পুলিশ সূত্র। তবে এ রাস্তায় সবসময় পুলিশি টহল থাকে। পুলিশ সূত্র জানায়, গত দু’বছরে এই সড়কের আশপাশ থেকে অন্তত পাঁচটি লাশ উদ্ধার করা হয়। অপরাধিরা অন্যস্থানে হত্যা করে অথবা এই নির্জন এলাকায় এনে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়। ছিনতাই-ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটে প্রায়ই। গত বছর পহেলা এপ্রিল ধনবাড়িতে বিনিময় পরিবহনের একটি বাসে নারী পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণের পর এই রাস্তার কাছেই ফেলে রেখে যায় ধর্ষকরা। গত ২৭ জুলাই এই সড়কের পাশ থেকেই তানিম (৮) নামক এক মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে মুক্তিপনের দাবিতে ময়মনমিংহের মুক্তাগাছা থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। গত ২২ জুলাই জলছত্র বাজার থেকে দেড় লাখ টাকা ছিনতাই করে পালানোর সময় পুলিশ এই মহাসড়ক থেকে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে। মধুপুর জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, এখানে অনেক লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। মহাসড়কটি যেন অপরাধিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। খুন, ছিনতাই প্রায়ই ঘটছে। ফলে এ রাস্তায় মানুষের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে চলাচল করতে হয়। মুলত মধুপুর থানার অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির মাধ্যমে এ মহাসড়কের নিরাপত্তা দেয়া হয়। আগে সন্ধ্যার পর পুলিশ প্রহরায় এ সড়কটুকুতে যানবাহন পারাপার করা হতো। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে প্রহরা দিয়ে যানবাহন পারাপার করানো হয় না। তবে রাস্তায় সবসময় পুলিশি টহল থাকে। রুপার লাশ ফেলে যাওয়ার দিনও এই সড়কে পুলিশি টহল ছিল। এ বিষয়ে অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম জানান, পুলিশের টহলদল যে এলাকায় থাকে শুধু সে এলাকাতেই নজরদারি করা যায়। পাঁচশ মিটার দুরের খবর রাখা সম্ভব হয় না। মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম জানান, এখন পুলিশ প্রহরায় যানবাহন পারাপারের ব্যবস্থা নেই। তবে কেউ নিরাপত্তা চাইলে ফাঁড়ির মাধ্যমে তাদের প্রহরা দিয়ে বনের রাস্তা পার করানো হয়। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম জানান, অরনখোলা পুলিশ ফাঁড়িতে একটি পিকআপ ভ্যান দেয়া হয়েছে। এটি দিয়ে বনাঞ্চলের রাস্তায় টহল আরো জোরদার করা হবে।
×