ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টাইগারদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার

ইস্ট লন্ডনেও বেহাল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

ইস্ট লন্ডনেও বেহাল বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সফরের শুরু থেকেই বেহাল বোলিং নিয়ে ছিল আলোচনা। সেটা সময়ের সঙ্গে আরও দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশী বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত ও আলগা বোলিংয়ের সুবাদে রবিবার ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ভেন্যুর সর্বাধিক রানের রেকর্ড গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬ উইকেটে ৩৬৯ রান তোলে তারা। এটি আবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। বাফেলো পার্কে এর আগে হওয়া ৪৩ ওয়ানডেতে মাত্র ৩টি তিন শতাধিক রানের দলীয় ইনিংস দেখা গেছে। ২০০৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটে ৩১১ রান করেছিল প্রোটিয়ারা। সেটাই ছিল এই ভেন্যুর সেরা। এবার সেটিকে ছাড়িয়ে গেল তারা। ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে কোন প্রতিপক্ষের চতুর্থ সর্বাধিক সংগ্রহ। অর্থাৎ সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে সফরকারী বোলাররা নিজেদের দৈন্যদশা আরও প্রকটভাবেই ফুটে তুলেছেন। হাশিম আমলাকে বিশ্রাম দেয়াতে কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে প্রথম উইকেটে জুটি বাঁধেন টেমবা বাভুমা এবং টস হারলেও তাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। উদ্বোধনী জুটিই বাংলাদেশের বোলারদের হতাশায় পোড়ান। মাশরাফির বোলিং সঙ্গী হয়েছিলেন অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। কিন্তু তারা কোন প্রভাব ফেলতে পারেননি। ১১৯ রানের জুটি গড়েন বাভুমা-কক দ্রুত সময়ের মধ্যে। বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মিরাজ। ৪৭ বলে ৫ চারে ৪৮ রান করে লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন বাভুমা। কক বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মিরাজ তাকেও শিকার করেন। আগ্রাসী মনোভাবে ব্যাট চালানো কক ৬৮ বলে ৯ চার ও ১ ছয়ে ৭৩ রান করেন। জোড়া দুই আঘাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি প্রোটিয়া ব্যাটিং, উল্টো তারা ঠিক আগের ছন্দেই ব্যাট চালাতে থাকে। টানা দুটি উইকেট শিকার করেও বাংলাদেশের বোলাররা চাপ বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন আলগা বোলিং করে। বাঁহাতি স্পিনে সাকিব আল হাসান কিছুটা রানের গতি আটকে রাখতে পারলেও বাকিদের তুলোধুনো করেছেন ফাফ ডু প্লেসিস ও অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নামা এইডেন মার্করাম। তারা দু’জনই অর্ধশতক হাঁকান এবং দলের রানও বাড়িয়ে নেন। মাশরাফি, রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদের পেস বোলিংকে ছেলেখেলায় পরিণত করেছেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা। এ কারণে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাব্বির রহমানকে দিয়েও বোলিং করানো হয়েছে। কিন্তু তাদের আরও পিটিয়েছেন প্লেসিস-মার্করাম। মাশরাফির অষ্টম আর ইনিংসের ৪১তম ওভারে প্লেসিস বাঁ পায়ের পেশিতে টান পড়ায় মাঠ ছাড়েন। তাকে ঘাড়ে তুলে নিয়ে মাঠ ছাড়েন দক্ষিণ আফ্রিকান ফিজিও। ফলে নিশ্চিত সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন তিনি। মাত্র ৬৭ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৯১ রান করেছিলেন প্লেসিস। তৃতীয় জুটিতে হয়েছিল ১৫১ রান। এরপর এবি ডি ভিলিয়ার্স মাঠে এসে খুব দ্রুতই ৫ রান করে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৯৫০০ রান পেরিয়ে যান তিনি। ঘটনাবহুল সেই ওভারের শেষ বলে দ্রুত রান নিতে গিয়ে ইমরুল কায়েসের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন মার্করাম। অভিষেক ম্যাচে চার নম্বরে নেমে তিনি অর্ধশতক হাঁকিয়ে করেছিলেন ৬০ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৬৬ রান। খুব দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন ভিলিয়ার্স (২০)। ৪০ ওভারে ২৮২ রান তোলা প্রোটিয়ারা বিশাল সংগ্রহ গড়বে তা বোঝাই যাচ্ছিল। তবে স্লগ ওভারের শুরুতেই রুবেল ভিলিয়ার্সকে শিকারে পরিণত করেন। একেবারে খাটো লেন্থের বলে টাইমিংয়ের ভুলেই উইকেট বিলিয়েছেন ভিলিয়ার্স। রুবেলও স্লগ ওভারে জ্বলে ওঠার যে প্রবণতা আগে দেখা গেছে সেটা এদিন দেখা যায়নি। তবে তাসকিন ভালভাবে ফেরেন। প্রথম ৫ ওভারে তিনি ৪৮ রান দিয়েছিলেন। পরের ২ ওভারে আরও ১৮ রান দিলেও অভিষিক্ত উইলিয়েম মুলডার ও আন্দিলে ফেহলুকোয়াওয়ের উইকেট তুলে নেন। কিন্তু রানের গতি কমেনি রুবেলের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে। ফারহান বেহারডিয়েন ২৪ বলে ৪ চারে ৩৩ এবং কাগিসো রাবাদা ১১ বলেই করেন ২৩ রান। ফলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিজেদের সর্বাধিক ওয়ানডে সংগ্রহ পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের শুরু থেকেই বাংলাদেশের বাজে বোলিং নিয়ে ছিল আলোচনা। ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে যেন সেটা আরও প্রকট আকার ধারণ করল। প্রথম ওয়ানডেতে বোলারদের চরম ব্যর্থতায় সর্বাধিক রান তাড়া করে বিনা উইকেটে জিতে যাওয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়ে প্রোটিয়ারা। পার্লে হওয়া দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তোলে ৬ উইকেটে ৩৫৩ রান। এবার সেটিকেও ছাড়িয়ে ৬ উইকেটে ৩৬৯ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা। ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে আজ পর্যন্ত এটিই ওয়ানডের সেরা সংগ্রহ কোন দলের। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এটি প্রোটিয়াদের সর্বাধিক সংগ্রহ। এর আগে ২০০৮ সালের ৯ নবেম্বর বেনোনিতে ৪ উইকেটে ৩৫৮ রান তুলেছিল তারা। তবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে সর্বাধিক ৪ উইকেটে ৩৯১ রান করে ইংল্যান্ড আছে সবার ওপরে। ২০০৫ সালের ২১ জুন নটিংহ্যামে সেটি করেছিল তারা। এছাড়া পাকিস্তানের ৭ উইকেটে ৩৮৫ (ডাম্বুলা, ২০১০), ভারতের ৪ উইকেটে ৩৭০ (ঢাকা- ২০১১) এগিয়ে আছে দক্ষিণ আফ্রিকার এই ইনিংসের চেয়ে। তবে এমন বেহাল বোলিংয়ের দিনেও দুই স্পিনার মিরাজ (১০ ওভারে ৫৯ রান, ২ উইকেট) ও সাকিব (১০ ওভারে ৫৬ রান) প্রত্যাশা মাফিক বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। বাকিদের বোলিং বিশ্লেষণ ছিল ভয়াবহ রকমের বাজে। মাশরাফি ৯ ওভারে ৬৯, রুবেল ১০ ওভারে ৭৫ (১ উইকেট), তাসকিন ৭ ওভারে ৬৬ (২ উইকেট), মাহমুদুল্লাহ ৩ ওভারে ৩৩ ও সাব্বির ১ ওভারে ৮ রান দিয়ে রান উৎসব করার সুযোগ দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের।
×