ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আশ্বস্ত করলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন

আগামী এক বছরেই দূর হবে ঢাকার জলাবদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

আগামী এক বছরেই দূর হবে ঢাকার জলাবদ্ধতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী এক বছরের মধ্যেই ঢাকার জলাবদ্ধতা আর থাকবে না বলে রাজধানীবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। একই সঙ্গে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসাসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া রাজধানীর নাগরিকদের ব্যবহৃত হাজার হাজার টন বর্জ্য রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে পুড়িয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন। রবিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং বেসরকারী সংস্থা প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষক এক সেমিনার শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্যানেল মেয়র ওসমান গণির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্মল পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবান প্রজন্ম গড়তে মেডিক্যাল বর্জ ব্যবস্থাপনা শীর্ষক সেমিনারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেক বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণ ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাগণ ও সংশ্লিষ্ট সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন দফতরের উর্ধতন কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। নিম্নচাপের প্রভাবে গত দু’দিনের বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতায় সৃষ্ট নাগরিক ভোগান্তি কবে শেষ হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তাদের বলছি, জলাবদ্ধতার কী দেখেছেন? কলকাতা বোম্বে যান। দেখবেন সেখানকার কী পরিস্থিতি। পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান সিটিতে এটা একটা সমস্যা। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। আমরা এর সমাধান করব। এছাড়া ঢাকার ভেতরে থাকা ৪৭টি খালের সবগুলো পুনরুদ্ধার হলেই সরকার সেগুলো খননের মাধ্যমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। আশা করি আগামী এক বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতার সমস্যা ঢাকায় আর থাকবে না বলে তিনি আশ্বাস দেন। এক বছর আগেও এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন- এক সাংবাদিকের এমন মন্তব্যে মন্ত্রী বলেন, আমি এটা তিন মাস আগে বলেছি। আমাদের সময় দিন। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো বিরাট ব্যাপার। আজ যদি আপনি হিসাব দেখেন, ঢাকায় জনসংখ্যা হওয়া উচিত ছিল ৭৫ লাখ থেকে এক কোটি। সে জায়গায় ঢাকার জনসংখ্যা তিনগুণ বেড়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে ঢাকা মহানগরীর বৃদ্ধির কারণেই পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসা তাল মেলাতে পারছে না। মোশাররফ হোসেন বলেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সিটি কর্পোরেশনকে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের নেতৃত্বে ওয়াসা কাজ করলে পর্যায়ক্রমে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে সক্ষম হবে এবং করতেই হবে। এর কোন ব্যাখ্যা দেয়া উচিতও নয়। জলাবদ্ধতার প্রতিটি ঘটনার সময় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের লোকজন সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছে এবং তা নিরসনের উপায় খুঁজে বের করছে। তাই আমাদের সময় দিন। সমস্যা নিরসনে মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজগুলো করে যাওয়ার জন্য। তবে আইনানুযায়ী মূল দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। এ সময় আইন থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, আমি যদি ভুল না করে থাকি, বর্ষণজনিত পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। অবশ্যই সিটি কর্পোরেশন ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট করে থাকে এবং কিছু ড্রেনেজও তাদের আছে। আরও ছয়টি সংস্থা কিন্তু ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশনের কাজে জড়িয়ে আছে। কিন্তু এটার মূল দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। মেয়র বলেন, যেসব কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে, সমন্বয়ের মাধ্যমে সেগুলো নিরসনের বিষয়ে তিনি আশাবাদী। তবে তা সময়সাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু তার চেয়ে বড় বিষয় হলো, দু’দিনে যদি ২শ’ ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় এত অধিক বর্ষণে জলাবদ্ধতা হবে- এটা স্বাভাবিক। মেয়র বলেন, বৃষ্টি কমে গেছে, পানিও নেমে গেছে। তারপরও নাগরিক ভোগান্তি আগামীতে যাতে তীব্র না হয়, মানুষ যাতে সুন্দরভাবে চলতে পারে, সেজন্য মন্ত্রীর (স্থানীয় সরকার) নেতৃত্বে কমিটি আছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে এ পরিস্থিতি ‘দুই, চার, পাঁচ দিনে’ হয়নি, ‘পঁচিশ, ত্রিশ, চল্লিশ বছরে’ সমস্যা এ পর্যায়ে এসেছে। তাই আমাদের একটু সময় দিন। ওয়াসার সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের সমম্বয়হীনতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাঈদ খোকন বলেন, মন্ত্রীর নেতৃত্বে সবগুলো সংস্থা একসঙ্গে কাজ করে। কিন্তু সবাই যে একসঙ্গে কাজ করবে তা নয়। হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান নয়। তিনটি সংস্থা এ্যাক্টিভলি কাজ করলে আরেকটি সংস্থা দুর্বল হতে পারে। সে জায়গাটুকু মাননীয় মন্ত্রীর নেতৃত্বে সময়মতো ঠিক হয়ে যাবে। এর আগে সেমিনারে মেয়র বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ অত্যন্ত দুরূহ বিষয়। আমরা প্রতিদিন দুই থেকে তিন শ’ মেট্রিক টন বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারি না। এমনকি সঠিক সময় পেরিয়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত কাজ করেও তা ব্যবস্থাপনা করতে পারছি না। তিনি নাগরিকদের বসবাসের ঘরের ন্যায় শহরটিকে পরিষ্কার রাখার অনুরোধ করেন। এজন্য ব্যবসায়ীদের সকালে নয়, রাতে ঘুমানোর আগে ঘর পরিষ্কারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঢাকায় দৈনিক আট টন ও মাসে প্রায় ২শ’ ৮০ টন মেডিক্যাল বর্জ্য জমা হয়। এর মাঝেও স্যালাইনের ব্যাগ, সিরিঞ্জসহ বেশকিছু মেডিক্যালসামগ্রী জমা করা হয় না, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তাই বর্জ্যকে পুড়িয়ে ফেলার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। মেয়র স্বাস্থ্যকর, সবুজ ও পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে সকলের সহযোগিতা চান। সেমিনারে উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহুল ইসলাম মেডিক্যাল বর্জ্যরে বর্তমান চিত্র তুলে ধরে বলেন, সকল প্রকার বর্জ্য সংগ্রহের জন্য আমরা মোট ৫২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করেছি। আরও আটটি নির্মাণাধীন রয়েছে। কিন্তু এতেও কাজ হচ্ছে না। রাজধানীতে মোট তিন হাজার ৮শ’ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চার হাজার ৯শ’টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। ২০০৮ সালের মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি নীতিমালা রয়েছে কিন্তু কেউ তা পালন করছেন না। এছাড়া পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াও প্রতিটি হাসপাতালে মেডিক্যাল বর্জ্যরে জন্য ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হলেও কেউ তা মানছেন না। ফলে রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা মেডিক্যাল বর্জ্য জৈব আকারে চক্রাকারে মানুষের পেটেই প্রবেশ করছে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে। ফলে নানান রোগে স্বাস্থ্যহানি ঘটছে। প্রতিদিন জমানো সকল মেডিক্যাল বর্জ্যও আমাদের কাছে জমা পড়ছে না। কোন কোন বর্জ্য পুনঃব্যবহার করা হচ্ছে। তাই মেডিক্যাল বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনা করা অতিজরুরী। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকল সরকারী প্রতিষ্ঠানকেই একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র ওসমান গণি বলেন, মেডিক্যাল বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকদের সচেতন করতে ব্যাপক আকারে প্রচার বাড়াতে হবে। এজন্য তিনি অন্যদের পাশপাশি সবার আগে সকল মিডিয়াকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
×