ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইসির সংলাপে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিনিধিদের পরামর্শ

দলের হয়ে নয়, নির্বাচনে নিরপেক্ষভাবেই পর্যবেক্ষণ করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

দলের হয়ে নয়, নির্বাচনে নিরপেক্ষভাবেই পর্যবেক্ষণ করা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন দলের হয়ে নয়, আগামী নির্বাচনে নিরপেক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিভিন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে তারা নির্বাচনের আগে নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যেন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হতে না পারেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান। চলমান সংলাপের অংশ হিসেবে রবিবার দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা এবং ইসির পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। বেলা এগারোটায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের ষষ্ঠ তলার সম্মেলনকক্ষে এই সংলাপে ৩০ পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সংলাপের শুরুতে বৈঠকে পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদের উদ্দেশে স্বাগত ভাষণ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। এ সময় তিনি পর্যবেক্ষকদের পক্ষপাতহীন এবং নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। বলেন, দায়িত্ব পালনকালে সামগ্রিকভাবে ভোট কার্যক্রম যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে। পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, যাদের নির্বাচনী দায়িত্বে পাঠাবেন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠাতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় দলগুলোর পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষকরা যাতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে সিইসি উল্লেখ করেন। বলেন, নির্বাচন চলাকালে মাঠে-ময়দানে বিচরণ করবেন। সঠিক সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ পাবেন। কমিশনের পক্ষ থেকেও আপনাদের পরামর্শ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে বের হয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, প্রশিক্ষণ যথাযথভাবে না নিয়ে মাঠে গিয়ে নানা রকমের আনাড়িপনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এর পুনরাবৃত্তি ভবিষ্যতে দেখতে চাই না। সংলাপে পর্যবেক্ষক সংস্থার পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ইলেক্টোরাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ট্রেনিং অব ট্রেনারের যেন আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে পর্যবেক্ষক প্রধানদের ডেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। পর্যবেক্ষণের সময় কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, কতক্ষণ করা যাবে সেটা যদি হাতে-কলমে বুঝিয়ে দেয়া হয় তাহলে ভাল হবে। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন দলের হয়ে পর্যবেক্ষকদের কাজ করার অভিযোগ বিষয়ে বলেন, এ ধরনের অভিযোগের মাধ্যমে আত্মসমালোচনার সুযোগ হয়। পর্যবেক্ষকদের বদলে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি সম্ভব নয়। কারণ মানুষের বদলে রোবট দিয়ে কাজ করার মতো পরিস্থিতি দেশে নেই। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আবদুল আলিম বলেন, পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে পর্যবেক্ষকরা যে ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, ইসির সংলাপে মূলত সে বিষয়গুলোই তুলে ধরা হয়েছে। নির্বাচনের আগের দিন পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র দেয়া হয়। সংলাপে আরও আগে কার্ড দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমরা তার একটু আগে কার্ড দেয়ার জন্য বলেছি। এছাড়া কেন্দ্রে স্বল্প সময়ে থাকার জন্য বলা হয়। এ স্বল্প সময়টা কতটুকু তা নির্ধারণ করতে বলেছি। ইসির ইলেক্টোরাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে প্রধান নির্বাহীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথাও সংলাপে আলোচনা করা হয়েছে। কোন রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করার অভিযোগের বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের একটি গাইড লাইন রয়েছে। যতটুকু জানি বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচন কমিশন কোন পর্যবেক্ষককে এ বিধি লঙ্ঘন করার জন্য বরখাস্ত করেনি। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের কোড অব কন্ডাক্ট আছে। সেটা মেনে চলা হয় দায়িত্ব পালনের সময়। তিনি বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে দুটি পরামর্শ ছিল। ভোটার তালিকা প্রকাশ করার আগে একটি তৃতীয়পক্ষকে দিয়ে স্বাধীন অডিট করানো। আর ভোটার তালিকা একেক বছর একেক সময়ে শুরু না করে একটি নির্দিষ্ট দিনে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করা। ফেমার সভাপতি মুনিরা খান বলেন, পর্যবেক্ষক নীতিমালা অনুযায়ী ২৫ বছরের নিচে কেউ পর্যবেক্ষক হতে পারবে না। আমাদের পক্ষ থেকে এটিকে শুধু ২৫ না রেখে ২০ থেকে ২৫ বছর করার কথা বলা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী এক জায়গার পর্যবেক্ষক অন্য জায়গায় পর্যবেক্ষণ করতে পারবে না। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদেরও পরীক্ষা করে এ সুযোগ দেয়া হোক। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ড. আনোয়ার ফরাজি ইমন বলেন, পর্যবেক্ষক যাওয়ার আগে ব্যালট পেপারের ল্টোদিকে যাতে প্রিসাইডিং অফিসাররা সিল না মারেন সেজন্য আমি অনুরোধ জানিয়েছি। সিইসি বিষয়টি একসেপ্ট করেছেন। আর বিদেশে থাকা এক কোটি নাগরিককে ভোটার করার অনুরোধ জানিয়েছি।
×