ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ী ২০০ রানে

ওয়ানডেতেও হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

ওয়ানডেতেও হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বেহাল বোলিংয়ের পর দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং-ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে শোচনীয় হারের জন্য এ দুটিই যথেষ্ট ছিল। রবিবার তাই ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ২০০ রানে বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বার ২০০ রান বা তার বেশি ব্যবধানে হারের ঘটনা। ফলে ৩-০ ব্যবধানে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ওয়ানডে সিরিজে হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। টস জিতে প্রথম ব্যাট করে বাফেলো পার্কের এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রেকর্ড ৬ উইকেটে ৩৬৯ রানের সর্বোচ্চ সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই ব্যাটিং দৈন্যতায় শেষ পর্যন্ত ৪০.৪ ওভারে ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জানিয়েছিল মাশরাফিবাহিনী। কিন্তু তিন ম্যাচেই প্রতিপক্ষের রেকর্ড গড়ার মহোৎসবে শোচনীয় হ্যাটট্রিক হারে ওয়ানডে সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ দল। অধিনায়ক হিসেবে ৫০তম ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিতে নেমে টস হেরে যান মাশরাফি বিন মর্তুজা। সিরিজে প্রথমবার বাংলাদেশ দল টস হারে। ব্যাটিং বেছে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২-০ ব্যবধানে সিরিজ আগেভাগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়াতে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে স্বাগতিকরা। ফর্মের তুঙ্গে থাকা হাশিম আমলা ও জেপি ডুমিনিকে বিশ্রাম দিয়ে এইডেন মার্করাম এবং তরুণ পেসার উইলিয়েম মুলডারকে অভিষেক করায় তারা। ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন কুইন্টন ডি কক ও টেমবা বাভুমা। এবারও বাংলাদেশী বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলায় মাতেন এ দুই ওপেনার। মাত্র ১৪.৪ ওভারেই ১০০ রান তুলে ফেলে। বিধ্বংসী এ জুটিটি ভেঙ্গে যায় ৪৭ বলে ৫ চারে ৪৮ রান করে বাভুমা সাজঘরে ফেরার মাধ্যমে। শুরু থেকে এদিন মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গে অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ বোলিং আক্রমণ শুরু করেছিলেন। মিরাজ শুরুতে সাফল্য না পেলেও ১৮তম ওভারে ফিরে এসে তিনি প্রথম সাফল্য এনে দেন। ১১৯ রানের জুটি ভাঙ্গার পর ককও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তিনিও মিরাজের শিকার হয়ে বিদায় নেন ৬৮ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৭৩ রানে। টানা দুই উইকে হারিয়েও রান তোলার গতি কমেনি দক্ষিণ আফ্রিকার। তৃতীয় উইকেটে ১৫১ রানের জুটি গড়ে তোলেন ফাফ ডু প্লেসিস ও মার্করাম। ৪১তম ওভারের প্রথম বলে দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট থেকে বেঁচে যান মার্করাম। তবে বাঁ পায়ের হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়ে সেঞ্চুরির পথে থাকা প্লেসিসকে। তিনি ৬৭ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৯১ রান করেছিলেন। ওই ওভারের শেষ বলে রানআউট হয়ে যান ৬০ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৬৬ রান করা মার্করাম। তবে রানের গতি কমেনি প্রোটিয়াদের। বাংলাদেশী বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে ব্যাটিং স্বর্গে রানের উৎসব করেন সবাই। এবি ডি ভিলিয়ার্স ক্যারিয়ারে ৯৫০০ রান পূর্ণ করে ২০ রানে সাজঘরে ফেরেন রুবেল হোসেনের বলে ভুল শট খেলে। প্রথম ৫ ওভারে ৪৮ রান দেয়া তাসকিন আহমেদ টানা দুই উইকেট তুলে নিলেও বাফেলো পার্কের রেকর্ড ৬ উইকেটে ৩৬৯ রান তুলে ইনিংস শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও এটি তাদের সর্বাধিক ওয়ানডে সংগ্রহ। ফারহান বেহারডিয়েন ২৪ বলে ৪ চারে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন। মিরাজ ও সাকিব আল হাসান রান দেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা মিতব্যয়িতা দেখাতে পারলেও বাকি বোলারদের বাজে বোলিং এই বিশাল সংগ্রহ এনে দেয় প্রোটিয়াদের। এর আগে ২০০৮ সালের ৯ নবেম্বর বেনোনিতে ৪ উইকেটে ৩৫৮ রান তুলেছিল তারা। সেটিই ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ। তবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে সর্বাধিক ৪ উইকেটে ৩৯১ রান করে ইংল্যান্ড আছে সবার ওপরে। প্রোটিয়াদের এই ইনিংসটি সেদিক থেকে চার নম্বরে। বিশাল সংগ্রহের পেছনে তাড়া করার চাপ। বিভীষিকাময় বোলিংয়ের কারণে যেন আগেভাগেই লড়াই থেকে ছিটকে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই সেটা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। পেসার ড্যান প্যাটারসনের গতির কাছে হতশ্রী হয়ে পড়ে বাংলাদেশর ব্যাটিং চিত্র। ইমরুল কায়েস ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন ১ রান করে। সৌম্য সরকার স্কোয়াডে ফিরেছিলেন, তিনিও ফিরে যান ৮ রানে- শিকার হন কাগিসো রাবাদার। এর আগেই এদিন ওয়ানডাউনে নামা লিটন দাসকে (৬) সাজঘরে ফিরিয়েছেন প্যাটারসন নিজের দ্বিতীয় শিকার হিসেবে। মাত্র ২০ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া দলকে কিছুটা আশা দেখাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহীম ও সাকিব। কিন্তু জুটিতে ৩১ রান যোগ হতেই মুশফিক (৮) সাজঘরে ফেরেন ফেহলুকোয়াওয়ের বলে। এর কিছুক্ষণ পরেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (২) অভিষিক্ত মুলডারের শিকার হয়ে ফিরে গেলে ম্যাচ থেকে পুরোপুরিই ছিটতে যায় বাংলাদেশ। ৬১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চরম লজ্জা বরণের পথে থাকা দলকে বাঁচিয়েছেন সাকিব। তিনি সাব্বির রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৬৭ রানের জুটি গড়েন। সাকিব অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৮২ বলে ৮ চারে ৬৩ রান করে অনিয়মিত স্পিনার মার্করামের বলে সাজঘরে ফেরেন। ওই ওভারেরই শেষ বলে মার্করামের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন দারুণ খেলতে থাকা সাব্বির (৪৯ বলে ৩৯; ৬ চার)। এরপর আর খুব বেশিদূর যায়নি বাংলাদেশের ইনিংস। মাশরাফি ১৭ বলে ১৭ রান করে কিছুটা প্রলম্বিত করেছেন প্রোটিয়াদের জয় তুলে নেয়ার সময়টাকে। শেষ পর্যন্ত ৪০.৪ ওভারে ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। প্যাটারসন ৩টি এবং মার্করাম ও ইমরান তাহির ২টি করে উইকেট নেন। ২০১১ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় ২০৬ রানে হারটাই প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে পরাজয় ছিল। দ্বিতীয়বার তাদের কাছে ২০০ রানে হারল বাংলাদেশ।
×