ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকালের একনেক সভায় অনুমোদনের প্রস্তুতি সম্পন্ন

আলোর মুখ দেখছে ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

আলোর মুখ দেখছে ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

আনোয়ার হোসেন ॥ উন্নয়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আলোর মুখ দেখছে আরও একটি স্বপ্ন। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত হয়েছে ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামীকাল মঙ্গলবারের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে পরিকল্পনা কমিশন। ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের এ প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থায়ন করবে চীন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় এবং ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে ৩০ জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আবদুল্লাাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা করিডরে যানজট কমে আসবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, চীনের সিংহভাগ অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা এবং চীন সরকারের ঋণ থেকে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয় করার কথা। সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে চীনা কর্তৃপক্ষকে প্রকল্পের ‘লেটার অব ইন্টারেস্ট’ পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। একনেকের সভায় অনুমোদনের পরই চীনের সঙ্গে ঋণচুক্তির বিভিন্ন শর্তের বিষয়ে নেগোশিয়েশন করবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। জানতে চাইলে ইআরডি চীন ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উপ-সচিব) কেএম মতিউর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৫ শতাংশ গভারনমেন্ট কনসেশনাল ঋণ (সহজ শর্তের ঋণ) এবং ৮৫ শতাংশ প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (কিছুটা কঠিন শর্তের ঋণ) প্রদানের জন্য চীন সরকারের কাছে গত ১ জুন ‘লেটার অব ইন্টারেস্ট’ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এর সরাসরি জবাব দেয়নি চীন। তবে এটা কোন সমস্যা নয়। কারণ চীন ইতোমধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে একটি প্রতিষ্ঠানকে মনোনয়ন দিয়েছে। একনেকে ডিপিপি অনুমোদন হলে ঋণ নেগোশিয়েশনের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা হবে বলে তিনি জানান। সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রাক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে। প্রাক সম্ভাব্যতা অনুযায়ী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এলাইনমেন্ট ছিল শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় এবং ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত মোট ৩৫ কিলোমিটার। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে আবারও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। এই সমীক্ষায় এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার কমিয়ে ২৪ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় ১০ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার র‌্যাম্প এবং ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার সড়ক (২ লেন পাস, ২ লেন সার্ভিস রোড)। সূত্র আরও জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ে সেতু বিভাগ থেকে প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ১৭ হাজার ৯ কোটি টাকা এবং মেয়াদ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। গত ২৪ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এ সময় ব্যয় কিছুটা কমিয়ে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ ২১ হাজার টাকা করা হয়। ইআরডি সূত্র জানায়, এ প্রকল্পটিতে অর্থায়ন চুক্তির (ফাইনান্সিং এগ্রিমেন্ট) শর্ত কি হবে এবং কারিগরি চুক্তির (ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট) শর্ত কি হবে তা চূড়ান্ত করা হবে নেগোশিয়েশনের সময়। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গভারনমেন্ট টু গভারনমেন্ট (জি টু জি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য চীন সরকারের মনোনীত প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারী ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে ২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে নেগোশিয়েশনের পরই বাণিজ্যিক চুক্তি হবে। বাণিজ্যিক চুক্তির বিষয়টি গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ট্রান্সপোর্ট এ্য্ান্ড কমিউনিকেশন ডেভেলপমেন্ট স্ট্রাটেজিতে শহরের যানজট নিরসন এবং যথাযথ পরিবহন ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারী উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) বাস্তবায়নের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। কিন্তুসিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে চীনের সঙ্গে জি টু জি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরভিত্তিক অর্থ চাহিদা চলতি অর্থবছরে ৬১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৩০ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯১৯ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) প্রকল্পের বিপরীতে কোন অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রম ৪০ দশমিক ৮৯ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ১০ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার র‌্যাম্প, এক দশমিক ৯২ কিলোমিটার নবীনগর ফ্লাইওভার, ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার সড়ক পুনঃনির্মাণ, দুই দশমিক ৭২ কিলোমিটার দুই লেনের সেতু নির্মাণ, ৫০০ মিটার ফ্লাইওভার বা ওভারপাস, ১৮ কিলোমিটার ইউটিলিটির জন্য ড্রেন তৈরি, পাঁচটি টোল প্লাজা নির্মাণ ও যানবাহন ক্রয়সহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম।
×