ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জন্মসনদ জালিয়াতি

বাল্যবিয়ে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

বাল্যবিয়ে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ বাল্যবিয়ে আইনত অপরাধ। তাও আবার যদি হয় জন্মসনদ জালিয়াতি করে। দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীর জন্মসনদে তারিখ পরিবর্তন করে বয়স বাড়িয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন স্বয়ং ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগী এক ইউপি সদস্য। বিয়ের পর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বরকে। এ বিষয়ে জজকোর্টে মামলা করেছেন নিখোঁজ বরের মামা। এ ঘটনা ঘটেছে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নে। সরজমিনে জানা যায় এমন ঘটনা হর-হামেশায় ঘটান ওই চেয়ারম্যান ও তার লোকজনেরা। এলাকাজুড়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় জয়মনিরহাট ইউনিয়নের ছোটখাটামারী গ্রামের মহির উদ্দিনের বাড়িতে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় ভুরুঙ্গামারী ডিগ্রী কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বদরুজ্জামান সাবুকে। ওই বাড়ির দশম শ্রেণীর ছাত্রী হিরা খাতুনের সঙ্গে প্রেমের অভিযোগ তুলে তাকে আটক করে রাখা হয়। পরে ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন, মেম্বার সিদ্দিকসহ মাতবররা এসে পরদিন বিয়ে হবে বলে তাকে আটকে রাখে। জয়মনিরহাটের শহীদ লে. সামাদ নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রী হিরা খাতুনের নাম পরিবর্তন করে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে জন্মসনদে তারিখ পরিবর্তন করে ছাত্রীর বয়স বাড়িয়ে চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকে পরদিন জোর করে বিয়ে দেয় হিরা ও সাবুর। সাবুর পরিবারের অভিযোগ, ইলেক্ট্রিকের কাজ করত সাবু। ওইদিন মুঠোফোনে ইলেক্ট্রিক কাজের কথা বলে ডেকে আটকের পর জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। তারপর থেকে নিখোঁজ সে। সাবুর বাবা আঃ বারিক বলেন, ছেলে সারাদিন সঙ্গে ছিল। সন্ধ্যায় ফোন আসার পর বলল একটা কাজ আছে যাই। কিছুক্ষণ পরে সিদ্দিক মেম্বার ফোন করে বলে এ ঘটনা। আমি বলেছিলাম তোমরা আসো কি করা যায় দেখি। কিন্তু তারা জন্ম সনদ তৈরি করে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে। আমি ছেলেমেয়েকে পাঠাতে বলেছিলাম। কিন্তু ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সাবুর মা কোহিনুর বেগম বলেন, তারা অভিভাবক সেজে বিয়ে দিল। আমার ছেলেকে চাই আমি। তার স্বজনদের অভিযোগ, সাবুকে উদ্ধারে পুলিশ ও ইউএনও সহযোগিতা করেনি। স্বয়ং ইউপি চেয়ারম্যান হিরা খাতুনের নাম মোহছেনা করে বয়স বাড়িয়ে জন্মসনদ তৈরি করে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছে। সাবুকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাবিননামায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ করেন স্বজনরা। এ ঘটনায় কুড়িগ্রাম জজকোর্টে মামলা করেছেন সাবুর মামা আলমগীর হোসেন। আলমগীর হোসেনসহ প্রতিবেশী অনেকে বলেন, তাকে কাজের কথা বলে ডেকে নেয়া হয়। পরে বিয়ে দেয়া হয়। জয়মনিরহাটের শহীদ লে. সামাদ নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে জেএসসি পাস করে হিরা। জেএসসি সনদে নাম হিরা খাতুন, পিতা-মহির উদ্দিন, মাতা-জহুরা বেগম ও জন্ম তারিখ ২৫ জুলাই ২০০১ থাকলেও বিয়ের দিনের জন্মসনদে তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯। শহীদ লে. সামাদ নগর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজীম উদ্দিন বলেন, মোহছিনা বেগম নামে আমার বিদ্যালয়ে কোন ছাত্রী নেই। হিরা খাতুন এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। এখান থেকে জেএসসি পাস করেছে। সে টেস্ট পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকায় বিষয়টি তার বাবাকে জানাই কিন্তু তিনি কিছুই বলেননি। হিরা খাতুনের বাবা মহির উদ্দিন বলেন, কোথায় মেয়ের কি নাম তা জানি না। মেয়ে ভাল জানে। বয়স কত তা তিনি জানেন না। জন্ম সনদের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করে বলেন, অনেক মানুষজন। আমার তো হুশ নাই। এসব আমি জানি না। চেয়ারম্যান সব করেছেন। একই কথা বলেন হিরার মা। জয়মনিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বলেন, এ রকম একটা অবস্থায় সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অনেক কিছুই আমাদের করতে হয়। মেয়েটির বিষয় বিবেচনা করে বিয়ে দেয়া হয়েছে। সনদেজন্ম তারিখ পরিবর্তনের বিষয়ে চেয়ারম্যান স্ব-গর্বে বলেন সামাজিক প্রেক্ষাপট ভেবে ইউএনওকে জানিয়ে করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ রকম কাজ অনেক করতে হয়। এক পর্যায়ে রেগে গিয়ে বলেন আমার যা ইচ্ছে হয়েছে তাই করেছি। আমার কিছুই হবে না। আমি নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান। ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএইচএম মাগ্ফুরুল হাসান আব্বাসী বলেন, আমি এ জায়গা থেকে বাল্যবিয়ে সমর্থন করতে পারি না। চেয়ামর‌্যান যদি বলে থাকেন তাহলে সম্পূর্ণ মিথ্যে। ইউপি চেয়ারম্যান আমার সরকারী মোবাইল ফোনে ঘটনাটি বললে ওনাকে বলি কোনভাবে বাল্যবিয়ে দেয়া যাবে না। যদি বিয়ে দিতে চান তাহলে কোর্টে আবেদন করে অনুমতি নিয়ে বিয়ে দিতে পারেন। সনদে জন্ম তারিখ পরিবর্তনের বিষয়ে বলেন, জন্ম সনদে তারিখ পরিবর্তনের সুযোগ নেই। যদি এ কাজ করে থাকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এর সঙ্গে যারা জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×