ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ওয়াজেদ

নির্বাচন নিয়ে সহিংসতার শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

নির্বাচন নিয়ে সহিংসতার শঙ্কা

নির্বাচন বাঙালীর কাছে উৎসব বা পরবের মতো। এক ধরনের জাগরণ ঘটে সর্বত্র। প্রার্থীর সপক্ষে ও বিপক্ষে মতামত তুঙ্গে ওঠে তর্ক-বিতর্কে। নির্বাচন মানে জনতার কাছে যাওয়া, জনতার মত গ্রহণ। সে মতের প্রতিফলন ঘটে ভোটে। ভোট নিয়ে এক ধরনের উল্লাস যেমন জেগে ওঠে, তেমনি রেষারেষি, প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের নেশাও জাগে। ভোট কেবল নিজের কথা বলতে পারে, বিকল্প ও বিরুদ্ধ রাজনীতির সঙ্গে লড়তে পারে। বিরোধীকে নির্মূল করার প্রত্যয়ও জাগাতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সহনশীলতা এসে আঁকড়ে ধরে। কখনও কখনও জয়-পরাজয়ের খেলা শেষে পরস্পরকে ঘায়েল করার প্রবণতাও দেখা দেয় কোথাও কোথাও। ভোটের ময়দানে প্রতিপক্ষবিরোধী ভাষণে কুৎসা, নিন্দা, গালাগালির প্রকোপও ঘটে। অবশ্য এসব প্রবণতা হ্রাস পায় রাজনৈতিক মতাদর্শ সামনে এলে। ব্যক্তিগত আক্রমণ প্রাধান্য পায় রাজনৈতিক আক্রমণকে ছাপিয়ে গিয়ে। ব্যক্তিজীবনের প্রতি শাণিত বাক্যবাণ বর্ষিত হয় নানা সময়। পাশাপাশি কদাচার রাজনীতির ডামাডোল পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে কখনও-সখনও ভোটারদের কাছে। ভোট যে পবিত্র আমানত এই বিশ্বাসবোধ সব সময় ধরে রাখতে পারে না শিক্ষা-দীক্ষাহীন ভোটারদের মতো শিক্ষিতজনও। অকারণেও কুকথার বন্যা বয়ে যায়। তবে সভ্য রাজনীতির মানদ- একেবারেই বিলুপ্ত হয় না। প্রতিপক্ষকে ঘৃণা করা যে নিজের দুর্বলতার লক্ষণ, এটা ভুলে যান প্রার্থীরাও। এমনও ঘটে কোন দল বা গোষ্ঠী হতে দেশকে ‘মুক্ত’ করার কথায় ঘৃণার মাত্রাটি অত্যধিক। কিন্তু অত ঘৃণার যে আদৌ প্রয়োজন নেই, তা লড়াইয়ের ময়দানে প্রার্থীরা অনেক সময় ভুলে যায়। দলের নামে সঙ্কীর্ণ অন্ধতা হতে বের হয়ে এলে, মুক্ত গণতন্ত্রের অঙ্গনে লড়ে জিতে আসার অভিপ্রায় থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি হয়ত তাদের বাধ্য করে, প্রতিপক্ষের রাজনীতিকে নিয়ে উচ্চতামাশার ভাষ্য প্রদানে। প্রতিপক্ষ দলের অতিস্পর্ধিত প্রচারের সুযোগে বিবেকবান রাজনীতিকরা দিশা হারান না। তারা খামাখা ব্যক্তিগত আক্রমণ না করে রাজনৈতিক আক্রমণের প্রতি মনোযোগী থাকেন। সেখানে জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছে যায়, নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী ক্ষমতায় বসে এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন। কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠে থাকে বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এর রেশ বহুদিন গড়ায়। কিন্তু এতকিছুর পরও তারা পারস্পরিক সৌহার্দ্যরে বন্ধন থেকে সরে দাঁড়ায় না। ভোটের রেশ মিটিয়ে যেতে না যেতেই ভোটাররা নিজেদের মধ্যে মতাদর্শগত ব্যবধান ভুলে যায়। স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে মিলিত হতে পছন্দ করে। রেষারেষির রেশ ভোটের শেষে দীর্ঘস্থায়ী হয় না। হিংসা, দ্বেষ ক্রমশ মিলিয়ে যেতে থাকে। আর ভোটারদের প্রার্থী সমর্থনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ যদিও ঘটে, কিন্তু তা নির্বাচনকে ব্যাহত করতে পারে না। তবে সামরিক দুই জান্তা শাসকের আমলে এ দেশে নির্বাচনের নামে যেসব প্রহসন, সংঘাত ঘটেছে, তা নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করার নামান্তর বৈকি। এসব নির্বাচন আজও প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের সৃষ্ট ব্যবস্থার মাসুল গুনতে হয় অদ্যবধি। তারা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিত। জাল ভোটের ছড়াছড়ি ছিল এন্তার। আগেই ফলাফল নির্ধারিত হয়ে যেত। ভোট গণনায় জান্তা শাসকের সমর্থক হেরে গেলে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করা হতো। ভোটের ফলাফল পাল্টে যেত ‘মিডিয়া ক্যু’ আর ‘মার্শাল ক্যু’-এর আড়ালে। দেশবাসী এসব কারণে ভোটের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল। এতে অবশ্য জান্তা শাসকদের পোয়াবারো ছিল। ভোটারবিহীন নির্বাচনেও ভোটের ফলাফলে দেখানো হতো সত্তর থেকে নব্বই ভাগ ভোট পড়েছে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ‘নির্বাচিত’ হতেন শাসকদের অশুভ উদ্দেশ্য হাসিলের অভিপ্রায়ে। কিন্তু গণআন্দোলনে শেষ জান্তা শাসকের ক্ষমতাচ্যুতির পর জনগণ চেয়ে আসছে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও এর ব্যত্যয় ঘটত ক্ষেত্রবিশেষে। ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে বেশিরভাগ ভোটার নির্বিঘেœ ভোট প্রদান করেছিল। কিন্তু ১৯৭৯ সালে গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে যা হয়েছে, তা নির্বাচন নয়। জনমতকে দমিয়ে সামরিক জান্তা শাসক তাদের ক্ষমতার দ-ের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিল। কিংবা ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ সালের নির্বাচন হয়েছিল বেশ শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচন ষড়যন্ত্রের কোপানলে পড়েছিল। ২০০৯ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনও ছিল শান্তিপূর্ণ। সর্বশেষ নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্যতম প্রধান দল নির্বাচন বর্জন করে। ফলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেক প্রার্থী নির্বাচিত হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। প্রস্তুতি চলছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ এ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে। অবশ্য এটা স্বভাবিক। নির্বাচন বর্জনের অবস্থান থেকে সরে আসার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় রাজনৈতিক দলগুলো, নির্বাচন কমিশন এবং দেশবাসীও। আমজনতা চায় রাজনৈতিক দলগুলো সহিষ্ণু আচরণের পথ ধরে এগিয়ে যাবে। স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় হিসেবে নির্বাচন কমিশন তার গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট। ইতোমধ্যে তারা চল্লিশটি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন। দলগুলো তাদের দলীয় মনোভাব ও মনোভঙ্গির আলোকে বিবিধ প্রস্তাব রেখেছে। এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা শেষে কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। এটাই স্বাভাবিক এবং কর্তব্যকর্মও। কমিশন তাদের এখতিয়ারে আছে এমন সব বিষয়েকই গুরুত্ব দেবে। ইসির কোন করণীয় নেই যেসব প্রস্তাবে, সেগুলো নিয়ে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচন নিয়ে কোন অচলাবস্থার সৃষ্টি হোক, এটা কারও কাম্য নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবেই। কিন্তু সমস্যা সামনে এসে দাঁড়ায়, যখন সেই মতপার্থক্য অনড় হয়ে যায়, অচলাবস্থার সৃষ্টি করে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথকে করে রুদ্ধ। অতীতে এমন বহু নজির থাকলেও এখন আর সে অবস্থা নেই। দেশবাসী যেমন চায়, তেমনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ অন্য সংস্থাগুলোও চায় স্বচ্ছ নির্বাচন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হোক, এমনটাই বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় ভূমিকা যাতে পালন করে নির্বাচন কমিশন, সে বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ক্ষমতায় যেতে পারবে না বুঝতে পেরে ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বর্জন শুধু নয়, ওই নির্বাচনকে প্রতিহত করার জন্য সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছিল। মানুষ হত্যার মতো নৃশংস কাজ করতেও তারা পিছপা হয়নি। অবশ্য এ দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে ফলাফল মনোপুত না হলেই নির্বাচন সঠিক হয়নি, কারচুপি হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সরকারের পাতানো নির্বাচন করেছে বলে হৈচৈ শুরু হয়। নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, তা মেনে নেয়ার মতো গণতান্ত্রিক মানসিকতা রাজনৈতিক দলের মধ্যে বসবাস করে না। যেমন বিএনপি নামক দলটি নির্বাচনের আগেই হেরে গিয়ে আগেভাগেই সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়। সাম্প্রদায়িক ও সব মৌলবাদী জঙ্গী শক্তির সঙ্গে বিএনপির যে সখ্য, তা গণতান্ত্রিক দলের জন্য বিপজ্জনক। এসব পরিত্যাগ করে, বিশেষত যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামীকে, বিএনপির উচিত অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ। জামায়াতকে রাজনীতিতে আবারও পুনর্বাসনের লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি গোঁ ধরে বসতেও পারে। তারা নতুন বাহানা তুলছে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের। তাদের এ দাবি পূরণ হবে না জেনেও জনগণকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সংবিধানবহির্ভূত এমনকি ইসির এখতিয়ারের বাইরের বিষয় নিয়ে তারা যে ধরনের চাপ প্রয়োগ করতে চায়, তা মূলত বাস্তবতাবিবর্জিত। সংবিধান অনুযায়ী বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়ার বিকল্প নেই। আর সম্পূর্ণ স্বাধীন থেকে ইসি পরিচালনা করবে নির্বাচন। দশম সংসদের মতো আসন্ন একাদশ নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো আত্মঘাতী পথই অবলম্বন করবে। অবশ্য সরকারী দল চায় বিএনপিসহ সকল দল নির্বাচনে অংশ নেবে। দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির কাজটি করে এসেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। কিন্তু এবার এসব আর ধোপে টিকবে না। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দেশজুড়ে পোট্রোলবোমা ও আগুন সন্ত্রাস চালানোর পথে গেলে, সে আগুনে নিজেরাই পুড়ে মরবে। কানাডার আদালত যেভাবে বিএনপিকে সন্ত্রাসী দলের খেতাব দিয়েছে, তেমনি বিশ্বের অন্যান্য দেশও অনুরূপ তকমা দেবে। নির্বাচন কমিশনের কাছে বিএনপি যে ২০ দফা প্রস্তাব রেখেছে, তার অধিকাংশই সংবিধান বহির্ভূত এবং বাস্তবতাবিবর্জিত। এখন এসব বিষয়ে যদি তারা অনড় থেকে দেশজুড়ে সন্ত্রাস চালায় এবং ষড়যন্ত্র চাপিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়, তবে তাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বাড়ে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে জ্যোতিষির মতো বাণী দিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট এবং তাদের ঘনিষ্ঠ শান্তিতে নোবেলপ্রাপ্ত বাঙালীজন মুহাম্মদ ইউনুস। তাদের ভাষ্যে মিল পাওয়া যায়। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে যে নেই, তা স্পষ্ট। বিজেএমইর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বার্নিকাট বলেছেন, এ দেশে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গতভাবেই অতীতের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের সময় অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা ঘটতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এ আশঙ্কা করছে। এমনকি এটি বিবেচনায় নিয়ে মার্কিন ক্রেতারা সঙ্গত কারণেই আগামী নির্বাচনের সময় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির আশঙ্কা করতে পারে, সে অনুযায়ী ওই সময়ে পণ্যের অর্ডার দিতে পারে। অবশ্য তার এ বক্তব্যে ঘাবড়ায়নি বিজিএমইএ। সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান রাষ্ট্রদূতকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সন্ত্রাস পছন্দ করে না। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। কিন্তু এই ভাষ্য বার্নিকাটকে তার ভাবনা থেকে সরিয়ে আনবে বলে মনে হয় না। বরং সন্দেহ জাগে যুক্তরাষ্ট্র কেন চায় সহিংসতা, অস্থিতিশীলতা। আর এ চাওয়াগুলোকে এক ধরনের ষড়যন্ত্র হিসেবেই চিহ্নিত করা যায়। বার্নিকাটের কথার প্রতিধ্বনি পাওয়া গেছে মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষ্যে। মার্কিন কূটনীতিক এবং সিনেটরদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে তিনি তার অবস্থান যে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে, তা আবারও প্রকাশ করেছেন। কূটনীতিকদের কাছে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশে আবার রাজনৈতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ এশীয় ককাসের ফরেন সিনেটরদের কাছে ইউনূস বলেছেন, একটি দল জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। অন্য একটি জোর করে ক্ষমতা দখল করতে চায়। এই বল প্রয়োগের সংস্কৃতির কারণে প্রতিবার নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে। এবার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও সহিংস হয়ে উঠবে। ইউনূসের এ ভাষ্য জ্যোতিষির নয়, খোদ তার মনোজগতে লুক্কায়িত বাসনারই পরিণাম। তিনি দেশের ক্ষতি করে হলেও তার দাবি কার্যকর করতে চান। বলেছেনও, সহিংসতা থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক সংলাপের আয়োজন জরুরী। এটা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা করবে না, যদি না তাদের বাইরে থেকে প্রচ- চাপ দেয়া না হয়। তিনি সিনেটরদের বিবাদমান রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে বসানোর জন্য এখন থেকে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। ইউনুসের মতে, নির্বাচনের আগে ও পরে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা হবে বাংলাদেশে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নাজুক করে দেবে। ইউনুস সিনেটরদের এই বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ওই সময়টায় যেন বাংলাদেশের পণ্য না নেয়া হয়। এর আগেও জিএসপি সুবিধার বিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন ইউনুস। বাংলাদেশের জনগণ, রাজনৈতিক দল ও ইসি যখন স্বচ্ছ, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ইউনুসের ভূমিকা খুবই সন্দেহজনক এবং দেশবিরোধী। বার্নিকাট যে অবস্থান নিতে যাচ্ছেন, তা কার্যকর করার জন্য তারা সচেষ্ট হবেন, তা মনে হয় না। কিন্তু ইউনুস তার পরশ্রীকাতরতায় আচ্ছন্ন থেকে দেশকে হেয়ভাবে উপস্থাপন করে নিজেকে ষড়যন্ত্রকারীদের তালিকাভুক্ত করেছেন। আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশকে হেয় করা শুধু নয়, দেশবিরোধী চক্রান্তকেও উন্মোচন করেছেন। সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পথগুলো যখন তৈরি হচ্ছে, তখন এই ইউনুসীয় ফর্মুলার মধ্যে কোন ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে না।
×