ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৈরী আবহাওয়া

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

বৈরী আবহাওয়া

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ও লঘুচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায় একটানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে দেশব্যাপী বিরাজ করেছে বৈরী আবহাওয়া। অমাবস্যার প্রবল জোয়ার তাতে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। যাকে বলে দুর্যোগের ঘনঘটা। উত্তাল জোয়ার, কনকনে ঝড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সৃষ্টি হয়েছে অসহনীয় জলজট ও জলাবদ্ধতা। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, হাটবাজারসহ জনজীবন প্রায় স্থবির হওয়ার উপক্রম ঘটেছে। সর্বাধিক শোচনীয় অবস্থা হয়েছে নিম্নাঞ্চলবাসী, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরসহ বস্তিবাসীদের। যানবাহন সঙ্কটসহ অনেক স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। ব্যাহত হয়েছে ফেরি পারাপার ও রেল যোগাযোগ। সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ৩ নম্বর এবং নদী বন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হয়েছে। আবহাওয়া ও ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশেও বেশ ভালভাবেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এবার অতিবৃষ্টি ও হঠাৎ পাহাড়ী ঢল দেখা দিতে শুরু করেছে ফেব্রুয়ারির শেষ ও মার্চের শুরু থেকেই। ফলে অকাল বর্ষণ ও বন্যায় তলিয়ে যায় সুবিস্তীর্ণ হাওড় অঞ্চল ও চলনবিলের আবাদী ধান। বিশেষ করে হাওড়বাসী হয়ে পড়ে বন্যাকবলিত। ধান-চালের দাম বাড়তে শুরু করে তখন থেকেই। এরপর অব্যাহত বর্ষণ এবং তিস্তা ও গঙ্গার তোড়ে মাঝারি বন্যা দেখা দেয় বাংলাদেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলজুড়ে। অত্যধিক জোয়ার ও জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রামের অবস্থা হয়ে পড়ে শোচনীয়। ঢাকার অবস্থাও যে ভাল ছিল এমন বলা যাবে না। প্রবল বর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় দেশের অধিকাংশ সড়কের অবস্থা ভাঙাচোরা, বিপর্যস্ত। রেল ও নৌযোগাযোগ ব্যাহত হয়। এর জের শেষ না হতেই শুরু হয়েছে কার্তিকের কাইত্যান। সব মিলিয়ে জনজীবন, জনদুর্ভোগ হয়ে উঠেছে বিপর্যস্ত, অবর্ণনীয়। ব্যাপক ফসলহানি ঘটায় এবং সরকারের ভাঁড়ারে ঘাটতি থাকায় ইতোমধ্যে চালের দাম বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরী ভিত্তিতে আমদানি করতে হচ্ছে চাল। মূল্যবৃদ্ধির অনিবার্য প্রভাব পড়েছে আটা, তেল, চিনি, ডাল, লবণ, গুঁড়াদুধসহ অন্যবিধ ভোগ্যপণ্যে। নদ-নদীগুলো প্লাবিত হওয়ায় এবং ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় বেড়েছে মাছের দাম। অতিবৃষ্টিতে সবজির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরবরাহ কমেছে শাক-সবজির। কমেছে দুধ, মাংস ও ডিমের সরবরাহ। প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিয়মিত ত্রাণ ও সাহায্য দেয়ার অভিঘাত অনিবার্য হয়ে পড়েছে জাতীয় অর্থনীতিতে। সব মিলিয়ে অতিবর্ষণ, বন্যা পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সমগ্র জনজীবন এখন দুর্ভোগের মুখোমুখি। এসব সমস্যা থেকে শীঘ্র মুক্তি কিংবা পরিত্রাণের সহজ কোন পথ নেই। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলা করেই বেঁচে থাকতে হবে বাংলাদেশের মানুষকে। তবে এক্ষেত্রে পরিবেশের বিপর্যয় রোধসহ সুরক্ষা অবশ্যই প্রত্যাশিত। ইতোমধ্যে খবর এসেছে রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন রান্নার চাহিদা মেটাতে বিপুলসংখ্যক গাছপালা নিধন হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের। অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। এর জন্য সক্রিয় হতে হবে স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগকে। করতে হবে বিকল্প ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা নিসরণে নিতে হবে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। স্যুয়ারেজ লাইনগুলো সংস্কার করতে হবে জরুরী ভিত্তিতে। উপকূলীয় বাঁধসহ হাওড় অঞ্চলের বাঁধগুলো মেরামত করতে হবে দ্রুত। কাজগুলো যাতে সুষ্ঠু ও সমন্বিতভাবে হতে পারে সে জন্য সর্বস্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করা গেলে এসব ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পাওয়া যেতে পারে।
×