ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ বিসিবি নির্বাচন ও একজন হানিফ ভুঁইয়া

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২২ অক্টোবর ২০১৭

প্রসঙ্গ বিসিবি নির্বাচন ও একজন হানিফ ভুঁইয়া

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শর্ষেতেই ভূত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গত নির্বাচিত কমিটিতে দাপটে রাজত্ব করেছেন পরিচালনা পর্ষদে। নির্বাচিত পরিচালক ছিলেন তিনি। এবার বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত ২৩ জনের যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তার নাম। অর্থাৎ পরিচালক হিসেবে আবারও থাকছেন তিনি। কিন্তু কে এই পরিচালক? তার ব্যাকগ্রাউন্ড কি? নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। বলা হচ্ছে মোঃ হানিফ ভুঁইয়ার কথা। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের আত্মস্বীকৃত খুনী মেজর (বরখাস্ত) বজলুল হুদার আপন শ্যালক। বিএনপি ঘারানার ঢাকার একটি শীর্ষ ক্লাবের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট তিনি। ঘটনার মধ্যে যেমন ঘটনা থাকে। হিসেবের মারপ্যাঁচে অজান্তে যেমন ঘটে যায় অনেক কিছু। হানিফ ভুঁইয়ার বেলায় জটিল এ দু’টি বিষয়ই শতভাগ প্রযোজ্য। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সময় কিভাবে কাকে ম্যানেজ করে তিনি ঢুকে পড়েছেন ক্রিকেটের নাড়ি-নক্ষত্রে তা কেউ বলতে পারছেন না। খুনী পরিবারের সদস্য হয়ে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্য শেখ হাসিনার শাসনামলে কোন খুঁটির জোরে হানিফ ভুঁইয়া বিসিবির পরিচালক বনে গেলেন তা কারও বোধগম্য নয়। অনেকের প্রশ্ন তবে কি ‘সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ’ এই অপবাদ থেকে জাতি এখনও মুক্তি পায়নি? নাকি বাঙালী জাতি হিসেবে অতীত খুব দ্রুত অতীত ভুলে যাবার বদঅভ্যাসটাই টেনে এনেছে বিতর্কিত এই হানিফ ভুঁইয়াকে। নাজমুল হাসান পাপন এমপির সঙ্গে বিসিবিতে যারা এক সঙ্গে বসতেন তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী ঘারানার, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সংগঠক হিসেবেই বেশি পরিচিত। এসব সংগঠকদের পাশে খুনী পরিবারের সদস্য হিসেবে হানিফ ভুঁইয়ার সহাবস্থানটা কি মানানসই? সার্বিক পরিস্থিতি তো তাই প্রমাণ করছে। তা নাহলে শেয়ার কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতাদের একজন হানিফ ভুঁইয়া কি করে বিসিবিতে জায়গা করে নেয়? ক্রীড়া নিবেদিতপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খেলা চলাকালীন জাতীয় পতাকা হাতে চলে আসেন স্টেডিয়ামে। তার উজ্জ্বল উপস্থিতি বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগায় ক্রিকেটার তথা দেশের ক্রীড়াবিদদের। বিসিবির পরিচালক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির সময় হানিফ ভুঁইয়াও ঢুকে পড়েন ভিভিআইপি লাউঞ্জে। এতে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক স্টেডিয়ামে শেখ হাসিনা কতটুকু নিরাপদ? বিষয়টা ক্রিকেটের জন্য লজ্জার বলে মনে করেন ওয়াকিফহাল মহল। নারায়ণগঞ্জ জেলার বাসিন্দা আজিম উদ্দিন ভুঁইয়ার চতুর্থ স্ত্রী হাজেরা বেগমের দুই ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে হানিফ ভুঁইয়া একজন। আর হানিফ ভুঁইয়ার বড় বোন নাফিজা মরিয়ম হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের খুনী বজলুল হুদার স্ত্রী। হানিফ ভুঁইয়ার সঙ্গে একই সঙ্গে বসবাস করেন তিনি ধানমিন্ডর রোড ৭/এ, বাসা ৬১ এই ঠিকানায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওপর অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়া বিপথগামী সেনা সদস্যদের অন্যতম বজলুল হুদা নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করেছিলেন তৎকালীন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণপুরুষ, জনপ্রিয় ক্লাব আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালকে। হুদার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন শেখ আবু নাসের। পরবর্তীতে রেডিও স্টেশনের দায়িত্ব নেয়া লে. কর্নেল (বরখাস্ত) শাহরিয়ার ও বজলুল হুদার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, তার স্ত্রী ্্্্্আইভি রহমান. তোফায়েল আহমেদ. আমির হোসেন অমুসহ অনেক জাতীয় নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবির এক সাবেক পরিচালক বললেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হয়ে একটা খুনী পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত হানিফ ভুঁইয়ার পাশে কি এবারও বসতে হবে? এটা সাবেক সভাপতি পাপন ও আমার জন্য খুবই বিব্রতকর, লজ্জারও বটে। এরশাদ সরকার পরবর্তী বিএনপির শাসনামলে সক্রিয় ফিডম পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল হানিফ ভুঁইয়ার। আর থাকবেই বা না কেন, দুলাভাইয়ের (বজলুল হুদা) রাজত্বে শ্যালকের মাস্তানি, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে বর্তমান সরকারের আমলেও সমাজের একটা উচ্চাসন (বিসিবি পরিচালক) দখল করে রাখবেন? এটা কিছুতেই আমরা মেনে নিতে পারছি না। অভিব্যক্তি উক্ত সংগঠকের। তার কথায় এরশাদের সময় মহারাজা, বিএনপির সময়ও রাজা আর বর্তমান সময়েরও একই অবস্থান। এটা কিভাবে সম্ভব আমার বোধগম্য নয়। সরকার বদলায়, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে। আর সব সরকারের শামনামলেই হানিফ ভুঁইয়া সুবিধাভোগ করে যাচ্ছেন। হানিফ ভুঁইয়ার খুঁটির জোর কোথায়, এটাই খুব জানতে ইচ্ছে করছে। উল্লেখ্য, ৩১ অক্টোবর নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হবে বিসিবির চার বছর মেয়াদী নতুন কমিটি। তার আগেই বিতর্কিত হানিফ ভুঁইয়াকে সাইজ করতে না পারলে কলঙ্কের দাগ মুছা যাবে না বিসিবি থেকে।
×