ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে আজ

হোয়ইটওয়াশ না সুসংবাদ?

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২২ অক্টোবর ২০১৭

হোয়ইটওয়াশ না সুসংবাদ?

মিথুন আশরাফ ॥ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোন ফরমেটের ক্রিকেট খেলায় কখনোই চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারেনি বাংলাদেশ। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে এখন পর্যন্তও পারেনি। আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইস্ট লন্ডনের বুফালো পার্কে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। আজ কী অন্তত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবে বাংলাদেশ? টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর প্রথম ওয়ানডেতে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে এবং দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ১০৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে গেছে। আজ যদি হারে মাশরাফিবাহিনী তাহলে ওয়ানডে সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ দল যে কতটা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে তা বোঝাই যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে জয় তুলে নিতে পারবে বাংলাদেশ এমন ভাবনা এখন কার মধ্যেই নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যদি জিতে বাংলাদেশ তাহলে তো অসাধারণ প্রাপ্তি মিলবে। কিন্তু এ মুহূর্তে বাংলাদেশ দল যেন বড় কোন ব্যবধানে না হারে সেই আশাই করা হচ্ছে। যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে সেই প্রত্যাশাই করা হচ্ছে। কিন্তু তাও যে কত কঠিন তা সবারই জানা হয়ে গেছে। প্রথম ওয়ানডের পর বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘যা যা করার আছে পরের ম্যাচে সব করব। ফলাফল আমাদের পক্ষে আসছে না। সে কারণেই সবকিছু কঠিন হয়ে গেছে। আমাদের উচিত হবে ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখা।’ কিন্তু কোন কিছুই কাজে লাগছে না। বরাবরের মতো সেই বড় হারের মুখেই পড়ছে বাংলাদেশ। চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেয়া যাচ্ছে না। কেন এমন হচ্ছে? মাশরাফি অবশ্য একটি বিষয়কে সামনে তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারের পর বলেছেন, ‘দল হিসেবে ভাল খেলছি না। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দল হিসেবে ভাল খেলতে পারছি না। হঠাৎ করে কেউ কেউ এগিয়ে আসছে। কিন্তু গ্রুপ হিসেবে ভাল খেলাটা এখনও হয়ে উঠছে না।’ দল হিসেবে ভাল না খেলতে পারলে তো আজও দলের বারোটা বাজবে। বারোটা বাজা মানে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সেই একই চিত্র ফুটে ওঠা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত সব ফরমেট মিলিয়ে ১৭টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ৯টি ওয়ানডে, ৬টি টেস্ট ও ২টি টি২০ ম্যাচ খেলেছে। ২০০৮ সালে ইস্ট লন্ডনেরই বুফালো পার্কে যে ওয়ানডে ম্যাচটি ছিল সেটি পরিত্যক্ত হয়েছে। বাকি সব ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে জোহানেসবার্গে টি২০ ম্যাচে ১২ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচটিতেই একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পেরেছে বাংলাদেশ। টি২০তে অবশ্য এমন হার-জিতই দেখা যায়। এছাড়া আর কোন ম্যাচে চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দেয়া যায়নি। হার হয়েছে বড় ব্যবধানে। আর সিরিজ হার তো সবকটিতেই হয়েছে। সবকটি সিরিজেই হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনটি টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সবকটিতে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। এবারের আগে দুটি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে। সেটিতেও হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। একটি এক ম্যাচের টি২০ সিরিজেও হেরেছে। এখন চলছে ওয়ানডে সিরিজ। দুটি ম্যাচে এরইমধ্যে হেরে গেছে বাংলাদেশ। আজ তৃতীয় ওয়ানডেতে হার হলেই আবারও হোয়াইটওয়াশ হবে। কিন্তু সবাই বাংলাদেশ দলের দিকে তাকিয়ে আছেন। কারণ দল এখন পর্যন্ত যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেনি, সেটি পারবে কিনা; সেইদিকেই সবার নজর আছে। বাংলাদেশ দল দুর্দান্তভাবেই পথ চলছিল। একের পর এক সাফল্য মিলছিল। ২০১৪ সালের শেষ থেকে যে সাফল্য ধরা দিয়েছিল তা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বহাল ছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতেই দল যেন ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। এত অসাধারণ খেলছিল বাংলাদেশ, আশা করা হচ্ছিল জিতবে। কিন্তু জয় তো দূরে থাক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চ্যালেঞ্জই ছুড়তে পারছে না। এখনও একটি ওয়ানডে ও দুটি টি২০ ম্যাচ বাকি আছে। সবারই আশা টি২০তে জেতার সম্ভাবনা আছে। তা না হলেও তো এমন খেলা খেলতে পারবে বাংলাদেশ, যে সম্মান বয়ে আনবে। বারবার লজ্জাজনক হার তো আর হবে না। আজই বোঝা যাবে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবে কিনা। অবশ্য বাংলাদেশের বিপদ আছেই। প্রথম ওয়ানডেতে যেমন মাংসপেশির ব্যথায় খেলতে পারেননি ওপেনার তামিম ইকবাল, আজকের ম্যাচেও খেলতে পারবেন না। শুরুতেই তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিং যদি না মিলে, তাহলে কি জেতা সহজ! কিংবা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া সহজ! তামিমকে হারিয়ে তাই শুরুতেই বিপদে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এরপরও দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সবসময়ই দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। আজও ঘুরে দাঁড়াবে, সেই আশাই করা হচ্ছে। এখন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারলেই হয়।
×