ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইফতেখার হোসাইন

ক্যাম্পাস পরিচিতি ॥ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২২ অক্টোবর ২০১৭

ক্যাম্পাস পরিচিতি ॥ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীতে অবস্থিত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) দেশের প্রযুক্তি সেক্টর সম্প্রসারণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা অবকাঠামোগতভাবে উন্নত, একাডেমিকভাবে আধুনিক ও গবেষণাবান্ধব করে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান। তিনি বিশ্বাস করেন ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবে উন্নত আধুনিকতম বিশ^বিদ্যালয়, এ প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ’। উপাচার্য হিসেবে ২০১৫ সালের জুন মাসে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি নোবিপ্রবিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের কাজ করে চলছেন। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী পিএইচডি, এমফিল, এমএস ও পোস্টডকধারী শিক্ষকদের এখানে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। প্রায় পাঁচ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীর পাঠদানে ২১৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ জন পিএইচডিসহ উচ্চতর ডিগ্রীধারী। নোবিপ্রবিতে বর্তমানে ৫টি অনুষদ, ২৪টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে উপকূলবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সমুদ্রসম্পদ কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে উচ্চতর পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এখানে খোলা হয়েছে ওশানোগ্রাফি বিভাগ। বর্তমান বিশে^র চাহিদা অনুযায়ী তথ্য ও প্রযুক্তির শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে এখানে খোলা হয়েছে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনায় উজ্জ্বল বাংলাদেশ; আর এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চালু করা হয়েছে টুরিজম এ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারের প্রতি লক্ষ্য রেখে নতুন খোলা হয়েছে ব্যাচেলর অব এডুকেশন (অনার্স), ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস এবং সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ। এখানে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মেসি, কৃষি, লাইব্রেরী সায়েন্স, আইআইটি বিষয়েও পড়ানো হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০১৭-১৮) ২৪টি বিষয়ে ১২০০ আসনে শিক্ষার্থীরা নোবিপ্রবিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। ভর্তি পরীক্ষা আগামী ৩ এবং ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। একাডেমিক সাফল্যের পাশাপাশি বিশ^বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নও অনেকদূর এগিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাঙ্গীন উন্নয়নে ২৩৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকার প্রকল্পের নানামুখী উন্নয়ন কাজ যেমন- শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম, উন্নতমানের বহুতল গ্রন্থাগার, সেমিনার রুম, রিডিং রুম, ওয়াইফাই ও ইন্টারনেট সুবিধা, ক্যান্টিন, পরিবহন সুবিধা, পূর্বের ২টি সহ আরও নতুন ৩টি হল নির্মাণ ও ল্যাব ফ্যসিলিটি ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ভবনসমূহের ঊর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ কাজ, নতুন নতুন প্রকল্প নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন, আইসিটি ল্যাব, মেডিকেল সেন্টার প্রতিষ্ঠা, মসজিদ ও উপাসনালয় নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। ভৌত সুবিধা বৃদ্ধির চেষ্টার অংশ হিসেবে বর্তমানে নোবিপ্রবিতে বাংলাদেশের বৃহত্তম ৪ লাখ ৩৮ হাজার দুই’শ বর্গফুট আয়তনের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমিক কাম ল্যাব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ১০ তলা কোয়াটার নির্মাণের টেন্ডার কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে। যেখানে শিক্ষক কর্মকর্তাদের জন্য ৮০টি আধুনিক ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি কর্মচারীদর জন্য ৮০টি ফ্ল্যাট সমৃদ্ধ একটি সুবিশাল ভবন নির্মাণের কাজও হাতে নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি নোবিপ্রবি’র শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাড়ি নির্মাণ, জমি ও ফ্ল্যাট ক্রয় এর সুবিধার্তে অগ্রণী ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে ৫০ কোটি টাকার কর্পোরেট হোলসেল ঋণচুক্তি সম্পাদন করা হয়। ফলে নোবিপ্রবি পরিবারের সদস্যদের গৃহনির্মাণ ঋণ নেয়ার পথে আর কোনও বাধা থাকলো না। গবেষণায় একটি বিশ্বমানের পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে ভবিষ্যৎ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা গবেষণা ইনস্টিটিউট’। বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরেই ৮৭৫ একর জায়গায় এ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে। যা হবে বিশ্বে প্রথম কোনও একক ইনস্টিটিউট যেখানে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা জন্য সমুদ্র বিজ্ঞান, সামুদ্রিক সম্পদ, ডেল্টা গঠন, এনভায়রনমেন্টাল ইকোলজি এবং মহাকশ বিষয়সমূহে গবেষণা করবে। নোবিপ্রবির এগিয়ে চলা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ২০৪১ সালের একটি উন্নত ও আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রধানমন্ত্রীর রুপকল্পের যথাযথ সফল বাস্তবায়নের সঙ্গে সাথী হয়ে এ লক্ষ্য পূরণে কাজ করছি। আমার চার বছরের মেয়াদকালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি আধুনিক ও আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশের উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এমনই প্রত্যাশা।
×