ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিয়াউল হক

১৪ বছরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২২ অক্টোবর ২০১৭

১৪ বছরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

গাজীপুরের ভাওয়াল ভূমিতে অবস্থিত সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) ১৪ বছরে পা রাখলো। গত ১১ অক্টোবর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) ১৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্যাপিত হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর ‘ডুয়েট ডে’ থাকলেও তখন ঈদের ছুটি থাকায় পরবর্তীতে তা পালনের সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বর্তমান আর সাবেক শিক্ষার্থীদের পদচারণা ও মিলনমেলায় মুখরিত ছিল ডুয়েট ক্যাম্পাস। একসঙ্গে শোভাযাত্রা, নাচ, গান, আড্ডা আর নানা আয়োজনে মেতেছিলেন সবাই। গোটা ক্যাম্পাসও সেজেছিল বর্ণিল সাজে। ‘প্রযুক্তির সর্বত্র ব্যবহার শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকার’ এই শ্লোগানকে উপজীব্য করে সকালে সাদা পায়রা ও রঙিন বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ডুয়েট ডে-র উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়–য়া ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। এরপর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। গাজীপুর শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে বিআইডিসি রোডে ২০০৩ সালে ১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে ডুয়েট। তবে ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে প্রথম প্রতিষ্ঠা পায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর নানা পরিক্রমায় বর্তমানে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী ও প্রায় ছয়’শ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ডানা মেলেছে ডুয়েট। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তিনটি প্রকৌশল অনুষদের অধীনে সাতটি বিভাগে স্নাতক ও পাঁচটি বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে তিনটি বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য লাইব্রেরী, মেডিকেল সেন্টার, জিমনেশিয়াম, খেলাধুলার মাঠসহ আবাসনের জন্য রয়েছে পাঁচটি ছাত্র ও একটি ছাত্রী আবাসিক হল। উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবনসহ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশে-বিদেশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ শক্তির বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভূমিকা পালন করছেন বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অ. দা.) ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী। এছাড়া তিনি জানান, ডুয়েট একটি ধুমপানমুক্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস। এখানকার শিক্ষকরা সাধারণত অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের ব্যতয় ঘটান না। হরতাল-অবরোধের মাঝেও তারা ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন; নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা নেন। গত ১৩ বছরে ডুয়েটের অর্জনও কম নয়। এ পর্যন্ত ডুয়েট থেকে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষার্থী ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। এছাড়া এ বছর ডুয়েটের ছয় শিক্ষার্থী ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৩ ও ২০১৪’ পেয়েছেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইউটার মার্স ডেজার্ট রিসার্চ ষ্টেশনে (এমডিআরএস) অনুষ্ঠিত ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ (ইউআরসি)-২০১৭ প্রতিযোগিতায় অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন ‘ডুয়েট টাইমআউট’ দল। এছাড়াও এ বছর মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি) আয়োজিত রোবোটিকান প্রতিযোগিতা ‘রোবোলিউশন- ২০১৭’তে চ্যাম্পিয়ন ও দ্বিতীয় রানার আপ দু’টো পুরস্কারই জিতেছে ডুয়েট-শিক্ষার্থী দল। এছাড়া রুপায়ণ হালদার, অসীমসহ আরও অনেকে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন’ প্রকল্পসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে সঙ্গে কাজ করছে। এখানে আর্ন্তজাতিক শিক্ষার মান বজায় রেখে প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত বিকাশ ও উদ্ভাবনের কথা বিবেচনা করে প্রতিবছর বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) অধ্যাপক মো. খালেদ খলিল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমের পরিধি দিনদিন বাড়ছে। কমিটি ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ এর পাশাপাশি ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস (আইডাব্লিউইএস), ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং (আইইই) এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) এবং সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড সাসটেইনাবিলিটি রিসার্চ নামে ইনস্টিটিউট ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি বেশি প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে।’ বর্তমানে এই নতুন তিনটি ইনস্টিটিউট, সদ্য চালুকৃত ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অবকাঠামো ও ল্যাব প্রতিস্থাপনসহ নানা ধরনের উন্নয়নের জন্য দু’শত ৭৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা ও সম্প্রসারণের জন্য অ্যাকাডেমিক কমিটির পাশাপাশি রয়েছে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেলসহ নানাবিধ কার্যক্রম। ডুয়েট থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ডুয়েট জার্নাল, বুলেটিনসহ নানা ধরনের প্রকাশনা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতার উন্নয়ন ও পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্যে জাপানের সাগা বিশ্ববিদ্যালয় ও মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব পার্লিস (ইউনিম্যাপ)-এর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে একযোগে কাজ করছে ডুয়েট। এছাড়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যেমন-ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনী, অষ্ট্রেলিয়া, ইলডিজ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, তুরস্কসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছরই নানা বিষয়ে আর্ন্তজাতিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এতে দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানীরা অংশগ্রহণ করেন। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা আর গবেষণায় সীমাবদ্ধ নয় ডুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা সহশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা ও খেলাধুলার আয়োজন করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব কর্মকা-ের জন্য রয়েছে সৃজনী, ডুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি, ডুয়েট স্পোর্টিং ক্লাব, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, রোবোটিকস্ ক্লাব, চেজ ক্লাবসহ আরও নানা সংগঠন। এসব সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন দিবস উৎযাপন, বর্ষবরণ, বসন্তবরণসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এছাড়া শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণসহ দেশের নানান দূর্যোগকালীন সহায়তার হাত বাড়ায়। নানা সম্ভাবনা ও স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে গেলেও ডুয়েটে রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যাসহ নানান সংকট। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়টি প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ হলকে সম্প্রসারণ করে ছয় তলায় রুপান্তরিত করা হচ্ছে। এতে প্রায় ৬৪৪ জন শিক্ষার্থী নতুন করে আবাসন সুবিধা পাবে। নতুন ক্যাম্পাসে ৬০০ সিটের অপর একটি হল তৈরি হলে আবাসন সমস্যার তীব্রতা কমবে। ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী নতুন বিভাগ খোলাসহ গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পরিবেশ উন্নয়ন ও আবাসন সংকট অনেকটা সমাধান হবে।
×