ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সমস্যায় জর্জরিত যশোরের বেদভিটা প্রাইমারী স্কুল

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২২ অক্টোবর ২০১৭

সমস্যায় জর্জরিত যশোরের বেদভিটা প্রাইমারী স্কুল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ অভয়নগর উপজেলার চলিশীয়া ইউনিয়নের বেদভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই। তারপরও সেখানে ক্লাস চলছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা ভয়ে থাকেন। কখন ভেঙ্গে পড়ে ভবনটি। প্রায় পাঁচ হাজার লোকের বসবাস এ গ্রামে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ পর্যন্ত গ্রামে কোন উন্ননের ছোঁয়া লাগেনি। উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ভবদহের করাল গ্রাসে গ্রামটি প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকে। স্কুলটি স্থাপিত হয় ১৯৬০ সালে। ১৯৯৪ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর একটি ভবন নির্মান করেন। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের ফলে অল্প দিনেই ভবনটিতে ফাটল ও ভাঙ্গন দেখা দেয়। ২০১৩ সালের প্রথম দিকে উপজেলা শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা এসে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু এখনও পরিত্যক্ত ভবনে ক্লাস হচ্ছে। বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দরজা জালানা ভাঙ্গা। নেই প্রয়োজনীয় বসার বেঞ্চ। কয়েকটি বেঞ্চ থাকলেও, তা ভাঙ্গা। নেই বিদ্যুত সংযোগ। তীব্র গরমে অতি কষ্টে তাদের পাঠদান করতে হয়ে বলে শিক্ষার্থীরা জানায়। এছাড় শ্রেণীকক্ষ সঙ্কটের কারণে ক্লাস করতে হয় খোলা আকাশের নিচে। ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে শিশুরা আঁতকে ওঠে। না জানি কোন দুর্ঘটনা ঘটে জানালেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা আরও বলেন, গত বছর ঝড়ে টিনের তৈরি একটি ঘর উড়িয়ে নিয়ে যায় এবং বন্যার কারণে তা নষ্ট হয়ে যায়। শিক্ষিকা লিপিকা মল্লিক জানান, তিনি ৪ বছর ওই স্কুলে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। ঝড়ের সময় তিনি ভয়ে শিশুদের আগলে রেখে রাখেন ভবন না থাকায় অনেক সমস্যা হয় বলে তিনি জানান। বর্ষা মৌসুমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয় বলে জানান ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানিয়া সুলতানা (১১)। ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী মাহাফুজা খাতুন জানান, ক্লাস রুম না থাকায় প্রতিদিন খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে মন চায় না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি রায় বলেন, অফিস কক্ষ না থাকায় স্কুলের মূল্যবান কাগজপত্র হারিয়ে ও নষ্ট হয়ে যায়। এতে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তিনি আরও বলেন, ঝড়ের সময় টিনের ঘরে থাকাটা বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। এ কারণে এই স্কুলে ছেলে মেয়েরা আসতে চায় না। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বসার জন্য কোন স্থান নাই। সেখানে ভাল কোন চেয়ার-টেবিল নেই। গুরুত্বপূর্ণ কাগজ দলিলপত্র রাখার ব্যবস্থা নেই। এ ব্যাপারে অভিভাবক ফারুক খান বলেন, আমাদের এ স্কুলটি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়াতে কোন অনুদান পায়না। তাই কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ভবনটি ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা হলেও নতুন কোন অবকাঠামো দেখা মেলেনি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল জব্বার জানান, আমি স্কুলটি পরিদশর্ন করেছি। শিক্ষা অধিদফতরকে বিষয়টি জানিয়েছি, বরাদ্দ পেলে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। জোড়াতালি দিয়ে চলছে চরআগস্তি স্কুল স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা থেকে জানান, মাসের পর মাস কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে উপজেলার চরআগস্তি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের ২২৫ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য কাগজপত্রে তিনজন শিক্ষক থাকলেও বাস্তবে মাত্র দু’জন কর্মরত রয়েছেন। একজন দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকেন। শ্রেণীকক্ষ মাত্র তিনটি। নেই শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ। বিদ্যালয়ের একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ ঝুলে আছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। এলাকার অভিভাবকরা সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও কর্তৃপক্ষের নেই কোন মাথাব্যথা। উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চরআগস্তি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৫২ সালে। স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম এক সময়ে এলাকায় খুবই প্রশংসিত ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে এর শিক্ষার মান তলানিতে এসে ঠেকেছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে এলাকার অভিভাবকদের অভিযোগ, দুর্গম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন প্রত্যন্ত এ গ্রামের স্কুলটিতে দক্ষ শিক্ষকরা আসতে চান না। বর্তমানে কাগজপত্রে তিনজন শিক্ষক থাকলেও স্কুলটির প্রধান শিক্ষক নিজেই দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকেন। অপর দুই সহকারী শিক্ষকের একজন একেএম কবীরউদ্দিন এক বছর ধরে ডেপুটেশনে আছেন। স্থায়ী কর্মরত আছেন খায়রুন্নেছা সাথী নামের একজন সহকারী শিক্ষিকা। দিনের পর দিন প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির সত্যতা স্বীকার করে কর্মরত দুইজন সহকারী শিক্ষকই জানান, প্রধান শিক্ষকের বাড়ি অনেক দূরে। তার পক্ষে নিয়মিত স্কুলে আসা সম্ভব হয় না। প্রধান শিক্ষক সপ্তাহে এক-দু’দিন এসে খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। শ্রেণীকক্ষের সঙ্কট বিদ্যালয়টির আরেকটি বড় সমস্যা। এমনিতেই বিদ্যালয় ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খুলে পড়ছে। বর্ষায় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। তারওপরে শ্রেণীকক্ষ রয়েছে মাত্র তিনটি। প্রাক প্রাথমিকের কোন কক্ষই নেই। যখন তিনটি শ্রেণীর ক্লাস চলে, বিদ্যালয়ের অন্য শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা তখন যে মাঠে একটু খেলাধুলা করবে; তারও উপায় নেই।
×