ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডে ট্রেডারের ভূমিকায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২২ অক্টোবর ২০১৭

ডে ট্রেডারের ভূমিকায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আবারও পতনের আঁচ লেগেছে পুঁজিবাজারে। প্রায় প্রতিদিনই তালিকাভুক্ত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমছে। ডে ট্রেডারদের মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকায় বাজারের গতি স্বাভাবিক হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে ব্যাংক ও নতুন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমায় বাজারের চেহারা যেন বদলে গেছে। আর এ নিম্নমুখী বাজারে লাভের পরিবর্তে প্রতিদিনই লোকসানের হিসাব কষতে হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। প্রতিদিনই তাদের পোর্টফোলিও থেকে উধাও হচ্ছে পুঁজি। সরেজমিন দেখা যায়, লেনদেনের গতি ভাল না থাকায় বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। আগামীতে বাজারে আরও বৈরী পরিবেশ তৈরি হতে পারে- এ শঙ্কায় কম দরে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক বিনিয়োগকারী। প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশের পুঁজিবাজারে সম্প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হয়েছেন, যার জেরে বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ ছিল। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ এক থেকে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। পরিসংখ্যানে এমনটিই দেখা গেছে। সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারধারণের দিক দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শতকরা অংশ বেড়েছে। তবে হঠাৎ বাজারে ছন্দপতনে তাদের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীদের কাছে। এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘হঠাৎ এভাবে লেনদেন কমে যাবে- এটা ধারণা করতে পারিনি।’ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তারা এখন ডে ট্রেডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এটা করলে বাজার নিজস্ব গতি হারাবে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত কাজ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। এখন দেখছি তার উল্টো চিত্র। তাদের কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশা করেন না কেউ-ই।’ একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘পুঁজিবাজারে সবাই লাভের জন্য আসেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পেলে শেয়ার বিক্রি করে দেবেন- এটা স্বাভাবিক। এজন্য তাদের দায়ী করা ঠিক হবে না।’ একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি শেয়ার বিক্রিতে মেতে উঠেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। বিক্রির তুলনায় তারা শেয়ার কিনছেন খুবই সীমিত। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি না থাকলে পুঁজিবাজার তার স্বাভাবিক গতি হারায়। যে কারণে কমে যায় লেনদেন। কমতে থাকে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ও বাজার মূলধন। এখন যারা বাজারে লেনদেন করছেন, তারা সাধারণ বিনিয়োগকারী। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে রাখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা জরুরি। তাই বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াতে হবে। কিন্তু দেশে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ খুবই কম। তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অবদানও কম। বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও বাজারের তুলনায় তা এখনও কম। বিশ্বের বড় পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরও বেশি দেখা যায়। তাদের অভিমত, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হলে এটি বাজারের জন্য ইতিবাচক। কারণ তারা বাজারের সার্বিক অবস্থা বিচার-বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করে থাকেন। তারা জানান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা খুবই দক্ষ। কখন বাজার বাড়বে আবার কখন পড়বে- এটা তারা বুঝতে পারেন। তাই মুনাফা তুলে নেয়ার সময় তারা তুলে নেবেন- এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে হবে নাকি স্বল্প মেয়াদে হবে- তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। এদিকে ব্যাংক শেয়ার ও নতুন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতনের জেরে অন্যান্য খাতের শেয়ারদর কমে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিছুদিন আগে পুঁজিবাজারে অতিরিক্ত বিনিয়োগের কারণে তালিকাভুক্ত সাত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকেই ব্যাংক খাতে বড় ধরনের দরপতন দেখা যায়। অন্যদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিবিএস কেবলসহ বাজারে নতুন আসা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অতিরিক্ত হয়ে অতিমূল্যায়িত হয়ে যাওয়ায় এখন তার দর সংশোধান হচ্ছে। ফলে এসব শেয়ারের দর নিম্নমুখী রয়েছে।
×