ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিসর সুফী ফেস্টিভ্যালে প্রশংসিত বাংলাদেশী ডশল্পীরা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২২ অক্টোবর ২০১৭

মিসর সুফী ফেস্টিভ্যালে প্রশংসিত বাংলাদেশী ডশল্পীরা

মিসর সিটিতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সুফী ফেস্টিভ্যালে প্রশংসিত হয়েছেন বাংলাদেশের শিল্পীরা। বাংলাদেশের শিল্পীদের কন্ঠ এবং বাদ্যযন্ত্র অনেকেরই দৃষ্টি কেড়েছে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের হয়ে এই উৎসবে যোগ দেয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর অপূর্ব সুন্দর লীলাভূমির দেশ, পিরামিডের দেশ মিসর, নীল নদের দেশ মিসর দর্শনের সুযোগ হলো এবার। বাংলা গানের প্রতি সারা বিশ্বের মানুষের আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হয়েছি আমরা। শুধু তাই নয় মিসর ঘুরে অনেক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে সঙ্গীত পরিবেশনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি এখানকার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান বিশেষ করে মিসরের পিরামিড, নীল নদ এবং বিভিন্ন ভাস্কর্য অবলোকের দুর্লভ সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, চায়না, সুইডেন, নাইজিরিয়া, ইথিউপিয়া, কম্বোডিয়া, জর্দান, তাজিকিস্তান ৩টি দেশ তাদের নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র ও কণ্ঠ শিল্পীদের নিয়ে অংশ নেয়। এ ফেস্টিভ্যালে আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন, এএসএম শফি মন্ডল, ফারজানা খাতুন ও মৌসুমী ইকবাল, যন্ত্রশিল্পী তবলায় দীপক কুমার দাস, ঢোল দেবানাথ শিবু, বাঁশি মামুনর রশিদ, কী-বোর্ড ও পারকেশন রবিন চৌধুরী এবং দোতারায় আমি সুমন কুমার শীল। এ ছাড়া আমাদের সফর সঙ্গী ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক সঙ্গীত বিভাগের শামিমা জাহান, সংস্কৃতিক সচিব ইব্রাহিম হোসাইন ও মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন এবং প্রত্নতত্ত অধিদফদতরের মহাপরিচালক মোঃ আলতাফ হোসেন। সঙ্গীত পরিবেশনের সময় মিসর ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শিল্পীরা আমাদের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র দেখে মুগ্ধ হয়েছে। এসব বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তারা যখন বিভিন্ন মন্তব্য করছিল তখন একজন বাংলাদেশী হিসেবে গর্বে আমার মনটা ভরে উঠছিল। আগেই বলেছি সুফি ফেস্টে অংশ নেয়ার পাশাপাশি আমাদের খুব অল্প সময়ে এই অপূর্ব সৌন্দর্য মিসরের লীলাভূমি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানের সময় আমাদের সাংস্কৃতিক দলকে বেশ ভালভাবে গ্রহণ করে স্থানীয়রা। আমাদের দেশীয় বাদ্যযন্ত্র পৃথিবীর কোথাও নেই। মিসরে নানা দৃশ্য অবলোকন করেছি। বিশেষ করে এখানকার নানা বৈচিত্র্য সংস্কৃতির নিদর্শন ও দৃষ্টিনন্দন দালানকোঠা ও মসজিদ আমাদের আকৃষ্ট করেছে। ঢাকা থেকে মিসর যেতে মোট সময় লাগে ১০ ঘণ্টার কাছাকাছি। ১৮/১০/২০১৭ রাত ৮টা ১০ মিনিট ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে প্রথমে বিমান করে আবুধাবি এয়ারপোর্টে যেতে লাগে ৪ ঘণ্টা। সেখানে গিয়ে আমাদের ট্রানজিট যাত্রা বিরতি হয় দুই ঘণ্টা। এরপর আরেকটি বিমান করে মিসর যেতে আরও ৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। আমাদের সাংস্কৃতিক দলের সদস্যদের একটি গাড়ি করে মিসর এয়ারপোর্ট থেকে মিসর সিটির হোটেল প্যারামিশিয়া নিয়ে যা। এ যাত্রায় সময় লাগে প্রায় ৩৫ মিনিট। ১৯ সেপ্টেম্বর হোটেলে বিশ্রাম নিই। এরপর বিকেলে পৃথিবীর ৩০টি দেশ থেকে আগত সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরি। মিশরের অন্যতম শহর কায়রোতে আমাদের একক অনুষ্ঠান হয়েছে। সেখানে আমাদের নানা পরিবেশনায় মুগ্ধ হয় উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা। মিসর শহর থেকে পিরামিড দেখতে যেতে গাড়ি করে ৩০ মিনিট সময় লাগে। টিকেটের প্রবেশ মূল্য ছিল ৮০ পাউন্ড। অপূর্ব তৈরি ও নক্সা করা সেই পিরামিড। বহু বছর আগে তৈরি পিরামিড দর্শন করে অভিভূত হয়েছি। গল্পে যা শুনেছি, কিংবা বইয়ে যা পড়েছি পিড়ামিডগুলো বাস্তবে তারচেয়ে সুন্দর মনে হয়েছে। এগুলো এখনো সেই আগের মতো রয়েছে। এখানে প্রতিদিন সারা বিশ্বের হাজার পর্যটক এই পিরামিড দেখার জন্য ছুটে আসে। এখানে মোট তিনটি পিরামিড রয়েছে। যার একটি থেকে আরেকটি অবস্থান বেশ দূরে ও উচ্চতায়। একটু উঁচুতে যেতে গাড়ি করে আমাদের ১৪ মিনিটের মতো সময় লেগেছিল। অবশেষে সেই উচ্চতায় থেকে তিনটি পিরামিড এক সঙ্গে দেখেছি। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। মনে হচ্ছে একে অপরের পাশে রয়েছে। এরপর মিসর জাদুঘর। মিসর সিটি থেকে মাত্র ১০ মিনিট সময় লাগে। টিকেটের প্রবেশ মূল্য ৭৫ পাউন্ড। এখানে রয়েছে বিভিন্ন সময়ে শাসন করা রাজা, রানি, রাজকুমারের সেই মমিসহ আরও দুর্লভ কিছু ভাস্কর্য। এ ছাড়া রয়েছে সেই বিখ্যাত ফেরাউনের মমি। সেই সময়ে সবাই বিশ্বাস করত যে, দেহ থাকলে পুনরায় আত্মার প্রবেশের মাধ্যমে জীবিত হবে। এই ফেরাউনের মমি জাদুঘরের ভেতরে দ্বিতীয়তলায়। আলাদা করে প্রবেশ মূল্য ১০০ পাউন্ড দিয়ে টিকেট কিনতে হয়। ফেরাউন নাকি ৬২ ফুট লম্বা ছিলেন। তিনি ৩০০ বছর নীল নদ নদীর মধ্যে ছিলেন। অবশেষে ১৯৭৭ সালে সেই নীল নদ থেকে তার লাশ উত্তোলন করা। তবে লাশটি ফেরাউনের কিনা তার ডিএনে পরীক্ষা করার জন্য ওই বছরই প্যারিস পাঠানো হয়। সেখান থেকে মিসরের জাদুঘরে নিয়ে আসা হয়। মিসরের আরেকটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে নীল নদ। সেখানে যেতে ৩০ মিনিট সময় লাগে। আর অগ্রিম টাকা ৪০০ পাউন্ড দিতে হবে। এর কারণ হচ্ছে নীল নদে রাত ৮ থেকে রাত ১০ পর্যন্ত এই দুই ঘণ্টা সময় বিনোদনের জন্য, রাতের ডিনার, ব্যালে ড্যান্স ও সেই জাহাজের ভাড়া বাবদ ৪০০ পাউন্ড লাগবে। বই এ পড়ে ছিলাম নীল নদ। সেই নদের পানি কিছুটা হলে ও নীল রয়েছে। এর অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে সকাল বেলা স্পিডবোট ভাড়া নিই আমরা। নীল নদের পানি কায়রো বিভিন্ন জায়গায় প্রবাহিত হচ্ছে। মিসর শহরে, অনেক ওভারব্রিজ রয়েছে। যার নিচে এই নদের পানিগুলো প্রবাহিত হতে সুবিধা হয়। মিসর রয়েছে বিভিন্ন রকমের দালানকোঠা যা কিনা এখন প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস বহন করে চলছে। যা দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। অনেকটা স্বপ্নের মতো মনে হয়েছে। মিসর ঘুরে এই শহরটিকে সাতটি আশ্চর্যের অন্যতম মনে হয়েছে যা আমর কাছে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।- সুমন কুমার শীল
×