ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রুশ বিপ্লবের ইতিহাস

রাশিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচীতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২২ অক্টোবর ২০১৭

রাশিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচীতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ

সোভিয়েত যুগে ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবকে মহিমান্বিত করা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এর নিন্দাবাদের পথ পরিহার করে ক্রেমলিন বর্তমানে সে দেশের স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচীতে এক নিরপেক্ষ পন্থা অনুসরণ করছে। এই নিরপেক্ষ নীতির লক্ষ্য হচ্ছে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। এএফপি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন রুশ সম্রাট জার আমলের ইতিহাস এবং সোভিয়েত রাশিয়ার কথা ইতিহাসের এই দুই অধ্যায়ের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তখন স্কুলের পাঠ্যবই প্রণেতারা কোন্ পথ অনুসরণ করবেন তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। বিশেষ করে রুশ বিপ্লব ও তৎপরবর্তী রক্তাক্ত অধ্যায় সামনে এসে দাঁড়ায়। কালের স্রোতস্বিনী গতিপথ যত এগিয়ে যায় তত এর ঘোলা পানি সরে গিয়ে তলদেশের স্বচ্ছ রূপটি প্রতিভাত হয়। ১৯১৭ সালে জার সম্রাটকে সবংশে নির্মূল করে দিয়ে বলশেভিক বিপ্লবীরা লেনিনের নেতৃত্বে অক্টোবর বিপ্লবের সূচনা করে। ২১ অক্টোবর তার এক শ’ বছর পূর্তিতে বিগত শতাব্দীর ঘটনা প্রবাহ নিয়ে নানা ধরনের বিচার বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ৫৯ বছর বয়স্ক লিওনিদ কাতসাভা নামের একজন ইতিহাস শিক্ষক বলেন, বর্তমানে ছাপানো স্কুল টেক্সট বইগুলোতে এক শ’ বছর আগের ঘটনাবলীকে ইচ্ছাকৃতভাবে অতিমাত্রায় নিরপেক্ষ রূপ দেয়া হয়েছেÑ যাতে করে তা জাতীয় স্থিতিশীলতার প্রতি কোন হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়। কাতসাভা এএফপিকে আরও বলেন, বর্তমান প্রশাসন যে কোন ধরনের বিপ্লব নিয়ে ভয়ানক আতঙ্কে থাকেন। তাই বিপ্লবী যুগের বিষয় নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি না করে তারা একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থান ধরে রাখতে চাচ্ছেন এবং সে অনুযায়ী পাঠ্য তালিকায় প্রশ্নোত্তর সাজানো হচ্ছে। যেমন শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন রাখা হয় যে, তারা বলশেভিক বিপ্লবীদের কোন কোন আচরণ পছন্দ বা অপছন্দ করে। অন্যান্য পাঠ্যসূচীতে ছাত্রদের জন্য সোভিয়েত আমলে নির্মিত চলচ্চিত্র, বই বা চিত্রকর্মের মধ্য থেকে কল্পিত ও অবাস্তব কিছু বাদ দিয়ে সঠিক জিনিস বা তথ্য বের করে আনার প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়। কখনও বা বলশেভিক যুগ ও কমিউনিস্ট বিরোধীদের পক্ষ নিয়ে যুক্তিসহ গল্পের অবতারণা করতে বলা হয়। রাশিয়ায় ব্যাপকভাবে সমাদৃত এক পাঠ্যবই এ বিপ্লবী ধ্যান-ধারণা নিয়ে পাশ্চাত্যের শিক্ষাবিদদের মন্তব্য এবং লিও ট্রটস্কি প্রণীত লেখা বা বই পড়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করা হয়। এই বইয়ে ইউক্রেনকে স্বাধীনতা না দিয়ে ফিনল্যান্ডকে স্বাধীনতা দেয়ার পেছনে ভ্লাদিমির লেনিনের কী উদ্দেশ্য ছিল এ নিয়ে লেখা ছাপা হয়। একই বইয়ে ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের আন্তর্জাতিক প্রভাব নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এনভার আবদুলায়েভ নামের অপর এক শিক্ষক বলেন, আগে ছাপানো বিভিন্ন পাঠ্যবই থেকে ২০১৩ সাল পরবর্তী পাঠ্যবইগুলোতে বিপ্লব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগ নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। অথচ সোভিয়েত যুগের পাঠ্যবইয়ে লেনিনকে সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছিল। প্রতিটি স্থানে তার মূর্তি ও ভাস্কর্য দৃশ্যমান হতো এবং শিক্ষার্থীদের এই কবিতা মুখস্থ করতে হতো ‘লেনিন বেঁচে ছিলেন, লেনিন বেঁচে আছেন এবং লেনিন চিরদিন বেঁচে থাকবেন।’
×