ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুদিনের বর্ষণের ভোগান্তি

মহাসড়কে তীব্র যানজট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ১০ ঘন্টা পর চালু

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২২ অক্টোবর ২০১৭

মহাসড়কে তীব্র যানজট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ১০ ঘন্টা পর চালু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দু’দিনের প্রবল বর্ষণ। ঘরেবাইরে ভোগান্তি। রাজধানী ছাপিয়ে যার বেগ ঠেকেছে সড়ক ও নৌপথ পর্যন্ত। গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। দুর্যোগপূর্ণ হাওয়া। তাই অনেক নদীবন্দর থেকে বন্ধ ছিল নৌ চলাচল। তেমিন ফেরিঘাটের কার্যক্রমেও দেখা দেয় স্থবিরতা। শনিবার ঢাকা শহরের বেশিরভাগ সড়ক ছিল পানির নিচে। নৌকা চলেছে বহু রাস্তায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শহরের কোন কোন এলাকার নাম উল্লেখ করে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ‘নদীর নাম রাজারবাগ-শান্তিনগর...’। বৃষ্টির পানি আর সড়কের খানাখন্দে ঢাকা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ-সিলেট মহাসড়কে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ হয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। এই রুটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পুড়েছেন দূরপাল্লার মানুষ। ঢাকা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভোগান্তি ॥ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিক। গত দুদিনের টানা বৃষ্টিতে মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে খানা-খন্দে পানি জমে থাকায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের ইনস্পেক্টর ইশরাজুল হক জানান, দুদিন প্রবল বর্ষণের কারণে মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে প্রচুর খানাখন্দ সৃষ্টি এবং বেশ কয়েকটি স্থানে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। শনিবার ভোর থেকে এলেঙ্গা হয়ে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এলাকা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন চালক ও যাত্রী। তবে ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। এদিকে টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজটের ভোগান্তি বেড়েছে। যাত্রী ও চালকরা জানিয়েছেন, এমনিতে সড়কের অবস্থা বেহাল এরমধ্যে বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে রাস্তা। ফলে ধীরগতিতে যানবাহন চলায় যানজট হয়েছে। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগছে কয়েক ঘণ্টা। সালনা হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ হোসেন সরকার জানান, কদিনের টানা বৃষ্টিতে স্থানে স্থানে খানাখন্দে পানি জমে থাকায় শনিবার ভোর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জিরানি থেকে কালিয়াকৈর বাইপাস পর্যন্ত যানজট দেখা দেয়। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় শনিবার ভোরে কয়েকটি গাড়ি বিকল হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এতে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা থেকে সফিপুর এলাকা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারে গাড়ির টেইল তৈরি হয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় ও অতিবৃষ্টিতে স্থানে স্থানে গর্ত হওয়ায় পানি জমে যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি মোঃ খলিলুর রহমান। পাটুরিয়ায় ১০ ঘণ্টা পর ফেরি চালু ॥ বৈরী আবওহাওয়ার কারণে ১০ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরিসহ সকল নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে তীব্র যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় বিভিন্ন যানবাহনের হাজার হাজার যাত্রী ও শ্রমিককে। শুক্রবার রাত ২টার দিকে এই নৌপথে ফেরিসহ সকল নৌযান বন্ধ করে দেয়া হয়। শনিবার বেলা ১২টার পর আবার চালু হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশে দুদিন ধরে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পাশাপাশি দমকা হওয়া ও ঝড়োবাতাস বইছে। এ কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে নদীতে প্রবল ¯্রােত ও ঢেউয়ের কারণে নৌদুর্ঘটনা এড়াতে শুক্রবার রাত ২টার দিকে ফেরিসহ সকল নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী বহনকারী যানবাহন ও মালবাহী ট্রাক পাটুরিয়া ঘাটে এসে আটকা পড়তে থাকে বলে তিনি জানান। শনিবার বেলা ১২টার দিকে ঝড়োবাতাস কমে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা ফেরি বন্ধ থাকার কারণে পাটুরিয়া ঘাটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এই যানজটের কবলে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত এসব যানবাহনের সারি পাটুরিয়া ঘাট ছেড়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর মধ্যে দুই শতাধিক যাত্রীবাহী বাস ও তিন শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক রয়েছে। প্রায় একই সংখ্যক যানবাহন রাজবাড়ীর দৌলতদিয়াতেও আটকা পড়েছে বলে তিনি জানান। জিল্লুর জানান, বর্তমানে ১৩টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তবে নদীতে ঢেউ ও ¯্রােতের কারণে ফেরিগুলো ধীরগতিতে চলছে। যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে যাত্রীবাহী বাসকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। শিমুলিয়া ও কাঁঠালবাড়ি নৌপথ ॥ শিমুলিয়া ও কাঁঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি যোগাযোগ বন্ধ থাকায় দুই ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় সহ¯্রাধিক ছোট-বড় যানবাহন। ঘাট এলাকার যাত্রী, চালক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রচুর বৃষ্টি ঝরেছে। নদীতে তীব্র বাতাস ও ঢেউ থাকায় ১৭টি ফেরির মধ্যে তিনটি ফেরি চলাচল করলেও শুক্রবার রাত ১১টার পরে তা বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিসি। এর আগে সকালে লঞ্চ ও স্পীডবোট বন্ধ করে দিয়েছে শিমুলিয়ার অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ঈগল পরিবহনের চালক মোঃ শমসের আলী খান বলেন, গতকাল ভোরে যাত্রীবোঝাই বাস নিয়ে ঘাটে এসেছিলাম। কালকে বিকেল পর্যন্ত পারাপারের অপেক্ষায় ছিলাম। বাসের যাত্রীরা বৃষ্টিতে থাকা-খাওয়া নিয়ে খুব কষ্ট করছিলেন। ঢাকা থেকে নৌযান বন্ধ ॥ ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে সকাল নয়টা থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ৪১টি রুটে নৌচলাচল বন্ধের এ নির্দেশ বহাল থাকবে। বর্তমানে সব নদীবন্দরে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত জারি রয়েছে। নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মোঃ নাদিরুজ্জামান বলেন, নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত অব্যাহত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঢাকা নদীবন্দর থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভাল না হওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশ বহাল থাকবে। এদিকে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের টার্মিনাল থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে। সুন্দরবন লঞ্চের পরিচালক মোঃ ঝন্টু মিয়া বলেন, বরিশাল, আমতলী ও পটুয়াখালী রুটে তাদের তিনটি ট্রিপ চলার কথা ছিল। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তা বাতিল করা হয়েছে।
×