ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দু’পক্ষের বিরোধ

ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ে জটিলতা

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২২ অক্টোবর ২০১৭

ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ে জটিলতা

আজাদ সুলায়মান ॥ দেশে আকাশপথের যাত্রীদের টিকেটিং সেবায় নিয়োজিত ট্রাভেল এজেন্সির সংখ্যা সাড়ে চার হাজার। কিন্তু তাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করতে পারছে না রাজস্ব বোর্ড। এজেন্সিগুলোও নানা অজুহাত দেখাচ্ছে। ওদের প্রথম অজুহাত- টিকেট কাটার সময়েই এয়ারলাইন্সগুলো ভ্যাটের টাকা রেখে দেয়। দ্বিতীয় অজুহাত- এক সময় ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। হঠাৎ আবার তা চালু করায় এখনও ভ্যাট প্রদানে সময় লাগছে। মোট কথা, দুপক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় ভ্যাট আদায়ে এ জটিলতা দেখা দিয়েছে। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সংগঠন আটাব বলছে, এ নিয়ে বিতর্ক আছে। ট্রাভেল এজেন্সি ও এনবিআর যদি যৌথ সিদ্ধান্তে একটি কমন পলিসি গ্রহণ করতে পারে তবে এ নিয়ে আর কোন বিরোধ থাকবে না। বিষয়টি ফয়সালার আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ট্রাভেল ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এটা পরিশোধযোগ্য। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করছে। যদি কেউ ফাঁকি দিয়ে থাকে তাহলে তাকে সুদসমেত বকেয়া দিতে হবে। তবে আমার পরামর্শ থাকবে, যারা ভ্যাট দিতে পারেননি তারা যেন কমিশনারের কাছে প্রয়োজনে কিস্তিতে হলেও পরিশোধের সুযোগটা গ্রহণ করেন। জানা যায়, ট্রাভেল এজেন্টদের কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ধার্য থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান থেকে তা আদায় করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। সারাদেশে ট্রাভেল এজেন্সির সংখ্যা চার সহস্রাধিক। তারমধ্যে ঢাকায়ই রয়েছে হাজার তিনেক। তাদের কাছ থেকে নিয়মিত ভ্যাট আদায় সম্ভব হচ্ছে না। রাজধানীর বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকেও একই কারণে ভ্যাট আদায় করতে পারছে না এনবিআর। কেন এ ভ্যাট আদায় হচ্ছে না- জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এক সময় নিয়মিত ভ্যাট আদায় করা হতো। কিন্তু মাঝখানে তিন বছর এজেন্সিগুলোকে ভ্যাট প্রদান থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। আবার সেটা চালু হলেও অনেকেই আগের মতো সে নির্দেশ মানছে না। এনবিআর এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। খুব শীঘ্রই মাঠে নামছে আভিযানিক দল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আটাব সভাপতি মোর্শেদ মাহবুব বলেন, একটি সেটেল্ড বিষয়ের ওপর কেন আবার বিতর্ক উঠছে? অর্থমন্ত্রী তিন-তিনবার এ বিষয়ে রেয়াত দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন রাজস্ব বোর্ডকে। কিন্তু সে নির্দেশনা আমলে না নিয়ে বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। খুব শীঘ্র জানতে পারবেন। তিনি বলেন, আসলে টিকেটের কমিশনের ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য নয়। সেজন্যই এজেন্সিগুলো ভ্যাট দিচ্ছে না। জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ট্রাভেল এজেন্সির কমিশনের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছিল সরকার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়। এর পর থেকে সারাদেশের সাড়ে চার হাজার ট্রাভেল এজেন্সি থেকে ভ্যাট আদায় হচ্ছে না। এ অবস্থায় ভ্যাট আদায়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। ইতোমধ্যে সবগুলো এজেন্সির একটি তালিকাও করা হয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সূত্রে জানা যায়, এসব এজেন্সির কাছে থেকে ভ্যাট আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কোন ধরনের তদ্বির বা আবেদন-নিবেদনে কাজ হবে না। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেটের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই শাখা অফিসের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় তাদের ভ্যাটের আওতায় আনতে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই ঢাকার কার্যালয় থেকে ভ্যাট পরিশোধ করা হচ্ছে জানিয়ে নিজ নিজ কমিশনারেটের কাছে তা জমা দিচ্ছে না। জানা যায়, একটি নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে উড়োজাহাজের টিকেট বিক্রির কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ্যাট প্রযোজ্য। কিন্তু ২০০৯ সালে জনশক্তি রফতানি কমে যাওয়ায় এ খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দেয় সরকার। তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে আবারও তা আরোপ করা হয়। টিকেট বিক্রির বিপরীতে এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো থেকে ৭ শতাংশ হারে কমিশন পায় ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। এ ৭ শতাংশের ওপরই ভ্যাট ধার্য করেছে এনবিআর। কিন্তু কেউ পরিশোধ করছে না। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আটাব সভাপতি মোর্শেদ মাহবুুব মঞ্জুর বলেছেন, এটি অযৌক্তিক। কেননা ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে ২০০৯ সালে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হলেও ২০১১ সালে তাদের ওপর অন্য নামে এক ধরনের নতুন করারোপ করা হয়। যাত্রীদের টিকেটের মূল্যের ওপর সব ট্রাভেল এজেন্সি এ কর পরিশোধ করছে। এছাড়া তখন থেকেই টিকেটের মূল্য নির্ধারণের সময় ভ্যাট যোগ করে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। টিকেটের মূল্যের মধ্যেই ভ্যাট যোগ করে দাম নির্ধারণ করেছে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানগুলো। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে ওই মূল্য থেকেই সামান্য কমিশন দেয়া হয়। ওই কমিশনের ওপর নতুন করে ভ্যাট আরোপ করা হলে তা দ্বৈতকর হিসাবে পরিগণিত হবে। আটাবের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে এ বিষয়ে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। নতুন করে আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারে অর্থমন্ত্রী এরই মধ্যে একটি আদেশও দিয়েছেন। ওই আদেশ বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকায় ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ভ্যাট পরিশোধ করেনি। তিনি বলেন, এমনিতেই এভিয়েশন সেক্টর নানা সঙ্কটে। এর ওপর যদি এ ধরনের দ্বৈতকর চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে সেটা এভিয়েশন সেক্টরে আরও বিপর্যয় ডেকে আনবে।
×