ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অস্তিত্বের সঙ্কটে মাছসহ জলজ প্রাণী

বিপর্যয়ের মুখে বিশ্বের গভীরতম হ্রদ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২১ অক্টোবর ২০১৭

বিপর্যয়ের মুখে বিশ্বের গভীরতম হ্রদ

বিশ্বের গভীর হ্রদ বৈকাল সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্মক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। সরকার এ হ্রদে বিরল প্রজাতির ওমুল মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ মাছ বিশ্বের গভীরতম হ্রদটিতেই দেখা যায় কয়েক শতাব্দী ধরে। কিন্তু এখন এগুলো হুমকির মধ্যে পড়েছে। এএফপি। রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত এ বৈকালে বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ স্বাভাবিক তাপমাত্রার স্বাদু পানি রয়েছে। হ্রদটি বিবর্তন বিজ্ঞানে ব্যতিক্রমী মূল্যায়নের দিকে থেকে এক প্রাকৃতিক বিস্ময় এবং ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে তালিকাবদ্ধ। এ হ্রদে ৩ হাজার ৬শ’ ধরনের উদ্ভিদ ও গ্রাণীসহ বিশাল পরিমাণ জৈববৈচিত্র্য রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই হ্রদটির জন্য ক্ষতিকর প্রভাব রাখছে। গত কয়েক বছর ধরে বেশ কিছু অজানা ক্ষতিকর কারণে হ্রদটি নির্জীব হয়ে পড়ছে যদিও এটি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের এক বড় আকর্ষণ। বিরূপ প্রভাবের কারণে হ্রদের বিশাল ৩০ লাখ ২০ হাজার হেক্টর এলাকায় ওমুল মাছ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, শৈবালের পচন বেড়ে যাচ্ছে এবং রোগগ্রস্ত স্পঞ্জ প্রজাতির মৃত্যু হচ্ছে। ওমুলের সংখ্যা হ্রাসে অপরিবর্তনীয় আশঙ্কার কারণে বাণিজ্যিকভাবে ওমুল মাছ ধরার ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু হয় অক্টোবরে। বৈকালে স্যামন পরিবারের এ ওমুলের পরিমাণ গত ১৫ বছরের মধ্যে অর্ধেকের কিছু ওপরে নেমে এসেছে। ১৫ বছর আগের এর পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ টন। এখন তা কমে ১ কোটি টনে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় মৎস্য জীববিজ্ঞানী এ্যানাতলি ম্যামনটোভ বলেছেন, এ হ্রাসের কারণ সম্ভবত অনিয়ন্ত্রণযোগ্য মৎস্য আহরণ এবং এর সঙ্গে রয়েছে জলবায়ুর অতিরিক্ত চাপ। তিনি বলেন, বৈকালের পানি জলবায়ুর সঙ্গে অত্যন্ত সম্পৃক্ত। এখনও অনাবৃষ্টি চলছে। নদীতে চড়া পড়া বেড়ে যাচ্ছে এবং পুষ্টিকর পদার্থ হ্রাস পেয়েছে। বৈকালের পৃষ্ঠে উত্তাপ বেড়ে গেছে। ওমুল উষ্ণ জল সইতে পারে না। ইউনেস্কো গত মাসে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে যে, হ্রদে প্রতিবেশ ভারসাম্য ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ পড়েছে এবং এটাও একটা কারণ ওমুল মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ার। বৈকালের ওমুলের একটা বিশেষত্ব রয়েছে এবং কয়েক শতাব্দী ধরে প্রধান স্থানীয় খাদ্যের উৎস এ ওমুল। অথচ অঞ্চলে এর কোন চাষ নেই। হ্রদের প্রতিবেশের প্রতি অন্য একটি বিপদ হচ্ছে শৈবাল বিকাশের আকস্মিক বৃদ্ধি। এর ফলে পচা স্পিরোজিরা শেওলার একটা ঘন আস্তরের সৃষ্টি হচ্ছে যা বৈকালে স্বাভাবিক নয়। কোন কোন বিজ্ঞানী আভাস দিয়েছেন যে, কোন প্রতিকার ছাড়া হ্রদ মানব দূষণ আর প্রতিরোধ করতে পারবে না। ইরকুটস্কে রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেস লিমনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ওলেগ টিমোশকিন বলেছেন, ‘আমি ১শ’ ৫০ শতাংশ নিশ্চিত যে, যথাযথ পয়ঃনিষ্কাষণ ট্রিটমেন্ট ব্যতিত শহরগুলো থেকে দূষিত পানি হ্রদে এসে পড়ায়, বিশেষ করে ফসফেট মিশ্রিত ডিটারজেল্টের কারণে ওমুলের ওপর বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে।
×