ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আরএসওর উস্কানিতে রোহিঙ্গা আসা থামছে না

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২১ অক্টোবর ২০১৭

আরএসওর উস্কানিতে রোহিঙ্গা আসা থামছে না

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমারে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের পর এবার রাখাইন খালি করতে মাঠে নেমে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ-আরএসও। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অপারেশন ক্লিয়ারেন্স আপাতত শিথিল হয়ে পড়েছে। সেখানে এখন রোহিঙ্গা নির্যাতন, গণহত্যা এবং জ্বালাও-পোড়াও নেই। তবুও রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে রাখাইন থেকে। অনুপ্রবেশকারীর দল ভারি করতে এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ঝামেলা সৃষ্টি করতে আরএসও জঙ্গীরা রাখাইনে ফের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এমন উস্কানি ও মুঠোফোনে খবর পাঠিয়ে নিয়ে আসছে রোহিঙ্গাদের। রোহিঙ্গাদের স্বজন ও তাদের কথিত নেতা নামধারী আরএসও ক্যাডারদের ডাকে নিরাপদ আশ্রয় ও খাবারের আশ্বাস পেয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসছে অনেক রোহিঙ্গা। মুঠোফোনে তারা জানতে পেরেছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাবার দেয়া হচ্ছে। আবাসন, চিকিৎসাসেবা, শিশুদের পড়ালেখার জন্য স্কুল স্থাপন ও খাবার পানির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তাই এসব সুযোগ সুবিধা পাবার আশায় উখিয়া ও টেকনাফের সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পালিয়ে আসছে তারা। ১৯৭৮ সালে প্রত্যাবাসনে ফাঁকি দিয়ে এদেশে থেকে যাওয়া এবং পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াতের এক শ্রেণীর নেতার সহায়তায় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া রোহিঙ্গা নেতারা আরএসও গঠন করে মিয়ানমারে স্বাধিকার আদায়ে মাঠে নামে। বিদেশে ট্রেনিংপ্রাপ্ত কতিপয় রোহিঙ্গা নেতাকে দলে ভিড়িয়ে তখন থেকে মিয়ানমারে সরকারী বাহিনীকে তাড়া দিয়ে আসছিল। মাঝে মাঝে সেখানে তৎকালীন লুণ্ঠিন বাহিনীর ক্যাম্পে হামলাও চালাত তারা। তখন থেকে দেশটির সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া শুরু করে। রোহিঙ্গা জাতি গোষ্ঠীর অংশ বিশেষ হিসেবে আরএসও ক্যাডারদের ওইসব হামলার কারণে তখন থেকে দায়ী করে আসছিল মিয়ানমারে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের। ১৯৭৮ সালের রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে পাড়ি জমায় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে। সেখান থেকে তাদের পক্ষে কাজ করতে মাঠে থাকা আরএসও ক্যাডারদের হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাত। সরকারের কতিপয় শীর্ষস্থানীয় নেতার মদদে তারা উখিয়া, টেকনাফ, রামু, ডুলাহাজারার বিভিন্ন পাহাড়ে ঘাঁটিও গেড়েছিল। সেখানে দেয়া হত রোহিঙ্গাদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর (১৯৯৬) অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা জঙ্গীদের ওসব ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। গ্রেফতার এড়াতে আরএসও ক্যাডাররা ঘাপটি মেরে থাকে বিভিন্ন স্থানে। কেউ কেউ জেলা আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর ধান্ধাবাজ নেতার প্রশ্রয়ে থেকে গড়ে তোলে দ্বীনি শিক্ষার নামে রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। অনেকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বিশাল দালান কোটার মালিক ও বাংলাদেশী নাগরিক বনে গোপনে ঠিকই তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যায়। রাখাইনে কয়েক বছর পর পর অশান্তি সৃষ্টি হওয়ার পেছনে ওইসব আরএসও ক্যাডারদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা রয়েছে বলে জানা গেছে। কারণ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসলে দ্বিগুণ লাভ আরএসও ক্যাডারদের। কেননা রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দোহাই তুলে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনে আত্মসাত করতে পারে আরএসও নেতারা। সূত্র জানায়, রাখাইনে মংডু ও বুচিদং এ দুই টাউনশিপই সবচেয়ে বৃহৎ এবং রোহিঙ্গা অধ্যুষিত। মংডু টাউনশিপের আওতায় ইউনিয়ন (তাদের ভাষায় ‘গোয়াইং’) আছে ১০৫টি। বুচিদং থানা বা টাউনশিপের আওতায় ইউনিয়ন (তাদের ভাষায় ‘গোয়াইং’) আছে ৮৫টি। মংডু ও বুচিদং থানার ১৯০টি এবং আকিয়াব জেলার ৭টি থানার ২ শতাধিক ইউনিয়ন থেকেই গত ২৭ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নেমেছিল। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যটি উত্তর-দক্ষিণ লম্বা। বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপের সোজা পূর্বে ওপারে সীতাপুরিক্ষা, শাহপরীর দ্বীপের বরাবর ওপারে হাইচ্ছুরাতা, টেকনাফ বরাবর ওপারে মংডুর সুধাপাড়া এবং হ্নীলা বরাবর নাকপুরা।
×