ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বড় ধরনের সংস্কার করা হচ্ছে হজ ব্যবস্থাপনায়

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২১ অক্টোবর ২০১৭

বড় ধরনের সংস্কার করা হচ্ছে হজ ব্যবস্থাপনায়

আজাদ সুলায়মান ॥ হজ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কার আনা হচ্ছে। বিগত এক দশকে হজে কি ধরনের অব্যবস্থাপনা, জালিয়াতি,প্রতারণা, মাঠ পর্যায়ের ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য ও কেলেঙ্কারি ঘটেছে তার আলোকে এই সংস্কার করা হবে। বিশেষ করে বেসরকারী হজ এজেন্সিগুলোর জিম্মি দশা থেকে গোটা হজ ব্যবস্থাপনাকে মুক্ত করার কৌশল বের করাই এর মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করার বিষয়টিও চিন্তা করা হচ্ছে। ধর্মবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুূল হক হারুন এসব তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছেন, প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব দেয়ার পরও মাঠ পর্যায়ের কিছুসংখ্যক দালাল ও অসাধু গুটিকয় এজেন্সির জন্য কেলেঙ্কারি ঘটছে। এজন্য সরকারেরই ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। এ অবস্থা থেকেই হজ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। সদ্য সমাপ্ত হজের অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তির পর পরই শুরু হবে নতুন উদ্যোগ। এদিকে সদ্য সমাপ্ত হজ ব্যবস্থাপনায় সফলতা, ব্যর্থতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও প্রতারণার অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সংদসীয় কমিটি ও হাব-এর পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক তদন্ত ও অনুসন্ধান চলছে। গত সপ্তাহে সংসদীয় কমিটিতে ঘোষণা দেয়া হয়, অতীতের মতো এবারের তদন্ত নিয়ে কেউ যাতে কোন ধরনের প্রশ্ন তুলতে না পারেন সেজন্য কঠোর গোপনীয়তায় কাজ চলছে। এ জন্য এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত অভিযোগগুলো তিন ক্যাটাগরিতে বাছাই করা হচ্ছে। সাধারণ অভিযোগ, গুরুতর অভিযোগ ও অন্যান্য: এই তিন ক্যাটাগরিতেই অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব ব্যবস্থার পাশাপাশি আগামী হজে যাতে এ ধরনের অভিযোগের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে আলোকে কিছু সুপারিশ করা হবে। বিশেষ করে হজ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কারের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে গ্রামের সাধারণ নিরীহ লোক যাতে মাঠ পর্যায়ের মধ্যস্বত্বভোগী দালালদের প্রলোভনের শিকার না হয়, টাকা জমা দেয়ার পরও কোন অবস্থাতেই যাতে কোন হজযাত্রী হজ থেকে বঞ্চিত না হয় এবং মক্কা- মদিনায় প্রাপ্য সুবিধা নিশ্চিত করা। হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার বা যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার আগে এ বিষয়ে গণশুনানির মাধ্যমে সবার মতামত নেয়া হবে। বজলুল হক হারুন বলেন, বাংলাদেশে যত এজেন্সি, তা দুনিয়ার কোন দেশে নেই। এখানে সব মিলিয়ে ১৪শ’ বেসরকারী হজ এজেন্সি, তার মধ্যে হজ অপারেট করে ৮ শতাধিক। এই বিপুলসংখ্যক এজেন্সিকে নিয়ন্ত্রণ করাটাও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষে দুরূহ। এই সংখ্যা যদি এক শ’র নিচে থাকত তাহলে গোটা হজ ব্যবস্থাপনায় এত জটিলতা ও অনিশ্চয়তা দেখা দিত না। সময় এসেছে এগুলোকে আও কঠোর অনুশাসনে নিয়ে আসা এবং সুশৃঙ্খলভাবে সার্বিক নজরদারিতে রাখা। হজের মওসুম এলে কোন্ হজ এজেন্সি কোথায়-কিভাবে হজযাত্রী সংগ্রহ করে, সরকার ঘোষিত প্যাকেজের চেয়ে কোন্ এজেন্সি কম টাকায় চুক্তি করে, মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া না করেই হাজি পাঠানোর মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত কর্ইা হবে এ সংস্কারের উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য শীর্ষ মুসলিম দেশ যেমন ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ভারতের হজ ব্যবস্থাপনার নীতি ও কৌশলের অনুকরণ করারও প্রস্তাব থাকতে পারে। ্এদিকে গত ১১ থেকে ১২ অক্টোবর ৩ দিনব্যাপী ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হজ ও ওমরা কনভেনশনে বিশ্বের ৪৫টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেয়। বাংলাদেশ থেকে হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম ও মক্কা হজ ট্যুরের মাসুদুর রহমান অংশ নেন। সেখানে আলোচকরা বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ও সুন্দর হজ ব্যবস্থাপনার জন্য অভিন্ন নীতি গ্রহণের মতো প্রস্তাব দেন। এতে হাব মহাসচিব হজ ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার হজ ব্যবস্থাপনা কি ধরনের, সেখানে সরকার কি ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে, বেসরকারী এজেন্সিগুলো কিভাবে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় ও ভূমিকা পালন করে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেও তা অনুসরণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
×