ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দলীয় নৈপুণ্যের দেখা মিলবে রবিবার?

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২১ অক্টোবর ২০১৭

দলীয় নৈপুণ্যের দেখা মিলবে রবিবার?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেন, ‘দল হিসেবে ভাল খেলছি না। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দল হিসেবে ভাল খেলতে পারছি না।’ তাতে করে বাংলাদেশ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হেরে গেছে। রবিবার ইস্ট লন্ডনের বুফালো পার্কে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। এ ম্যাচটিতে কী দলীয় নৈপুণ্যের দেখা মিলবে? সবার ভেতর এখন এ একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। দলীয় নৈপুণ্য দেখাতে হলে ব্যাটসম্যান-বোলার-ফিল্ডার সবাইকেই দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখাতে হবে। তা না হলে যে কোন একটি বিভাগ ভাল করলে হবে না। তাতে করে জয়তো দূরে থাক, প্রোটিয়াদের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়াও সম্ভব হবে না। এখন পর্যন্ত যে চ্যালেঞ্জ ছুড়েও দিতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই অবস্থা আবারও হবে। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে হলে আবার প্রয়োজন দলের সেরা ক্রিকেটারদেরও। বাংলাদেশ দলতো সেটিও ঠিকমতো প্রতিটি ম্যাচে পাচ্ছে না। তৃতীয় ওয়ানডেতেই যেমন ওপেনার তামিম ইকবালকে আবার নাও পাওয়া যেতে পারে। মাংসপেশিতে যে টেস্ট সিরিজের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে টান পড়েছিল, সেটি এখনও ভোগাচ্ছে। আর তাই তৃতীয় ওয়ানডেতে তামিমের না খেলার সম্ভাবনাই বেশি। তাই যদি হয় তাহলে ব্যাটিংয়ে শুরুতেই তো দুর্বল হয়ে পড়লো বাংলাদেশ। আবার বোলিংয়ের কথা চিন্তা করলে ওয়ানডে সিরিজের শুরু থেকেই তো নেই ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান। তার পরিবর্তে শুক্রবার দলের সঙ্গে ইস্ট লন্ডনে যোগ দিয়েছেন আরেক পেসার শফিউল ইসলাম। কিন্তু মুস্তাফিজ যতই এখন নখদন্তহীন বোলার হয়ে পড়ুক, তার দলে উপস্থিতি মানেই প্রতিপক্ষের সামান্য হলেও বেগ পাওয়া। সেই বেগ যদি বেশি করে কোনভাবে দেয়া যায় তাহলে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেয়া সম্ভব হতে পারে। কিন্তু মুস্তাফিজ নেই। ব্যাটিংয়ে তামিম নেই। বাংলাদেশ দল তো আগেই দুর্বল হয়ে মাঠে নামবে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান ও বোলাররা প্রতিটি ম্যাচে যেভাবে নিজেদের মেলে ধরছেন, যেভাবে প্রোটিয়ারা জয় তুলে নিচ্ছে তাতে তৃতীয় ওয়ানডেও যে বাংলাদেশের জন্য কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে তা বোঝাই যাচ্ছে। প্রতিটি ম্যাচের মতোই ব্যক্তিগত নৈপুণ্যগুলো যতই আকর্ষণ কুড়াক, দল হিসেবে না খেলতে পারলে শেষ পর্যন্ত আর কোন লাভই নেই। সেই দলীয় নৈপুণ্যের খোঁজেই আছে বাংলাদেশ। জয় যে কতটা কঠিন তা সবাই বুঝে গেছে। এখন যদি দক্ষিণ আফ্রিকাকে জিততে বেগ পেতে হয় তাহলেই যেন সাফল্য মিলবে। আর যদি তৃতীয় ওয়ানডে ও হাতে থাকা দুটি টি২০ ম্যাচের একটি জয় মিলে যায় তাহলে প্রাপ্তি যুক্ত হবে। তা না হলে খালি হাতে ব্যর্থতা পুঁজি করেই বাংলাদেশ দলকে দেশে ফিরতে হবে। তখন উপমহাদেশের বাইরের মাটিতে হারের বোঝা যেন আরও বাড়তেই থাকবে। বড় হতে থাকবে। উপমহাদেশের বাইরের মাটিতে বাংলাদেশ প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জিতে কেনিয়ার মাটিতে কেনিয়ার বিপক্ষে (৩-০), ২০০৬ সালে। পরের বছরও জিম্বাবুইয়ের মাটিতে জিম্বাবুইয়েকে (৩-১) হারায়। এরপর ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে (৩-০) হোয়াইটওয়াশ করে। একই বছর আবার জিম্বাবুইয়ের মাটিতে জিম্বাবুইয়েকে (৪-১) হারায় বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত উমহাদেশের বাইরের মাটিতে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে। কিন্তু এরপর আর জিততে পারেনি। ২০১০ সাল থেকেই বাংলাদেশের এমন কাহিল অবস্থার শুরু হয়েছে। যখনই উপমহাদেশের বাইরে দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ তখনই বিপদে পড়েছে। প্রতিপক্ষ দল যে রকমই থাকুক। কন্ডিশন যে রকমই হোক। সিরিজ হার হয়েছে বাংলাদেশের। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (০-৩) সিরিজ হার দিয়ে শুরু। এরপর একই বছর ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (১-২), ২০১১ সালে জিম্বাবুইয়ের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে (২-৩), ২০১৩ সালে একই দলের বিপক্ষে (১-২), ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে (০-৩), গত বছর শেষদিকে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (০-৩) সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। উপমহাদেশের বাইরে এতটাই খারাপ অবস্থা বাংলাদেশের, ২০১০ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডে সিরিজ (১-১) খেলতে গিয়েও জিতেনি। এরপরও যে সিরিজগুলো খেলেছে, প্রতিপক্ষ কঠিন হলেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া গেছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে নেমেই যেন সব ওলট-পালট হয়ে গেছে। বাংলাদেশ দল যে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে, এ বছর ইংল্যান্ডে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে খেলেছে, উপমহাদেশের মাটিতে, বিশেষ করে নিজেদের মাটিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে, সেগুলোর ছোঁয়াও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে নেমে দেখাতে পারছে না। কেন? ঘুরেফিরে সেই দলীয় নৈপুণ্যের বিষয়টিই সামনে চলে আসছে। সেই নৈপুণ্য কী রবিবার দেখা মিলবে?
×