ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অকটেন পেট্রোলে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রির অভিযোগ

দেশে বেসরকারী পর্যায়ে আর কোন রিফাইনারি নির্মাণের অনুমতি নয়

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২১ অক্টোবর ২০১৭

দেশে বেসরকারী পর্যায়ে আর কোন রিফাইনারি নির্মাণের অনুমতি নয়

রশিদ মামুন ॥ দেশে বেসরকারী পর্যায়ে আর কোন জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার বা রিফাইনারি নির্মাণের অনুমোদন দেবে না সরকার। গ্যাসক্ষেত্রের উপজাত কনডেনসেট ব্যবহার করে জ্বালানি তেল উৎপাদনে আগ্রহীদের ক্ষেত্রে নতুন এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে কনডেনসেট নিয়ে খোলা বাজারে বিক্রির পাশাপাশি জ্বালানি তেলে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ রয়েছে রিফাইনারি মালিকদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও অতিরিক্ত পেট্রোল এবং অকটেনের চাহিদা না থাকার প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিভাগীয় সমন্বয় সভায় বেসরকারী পর্যায়ে আর কোন নতুন রিফাইনারি নির্মাণের অনুমোদন না দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে বলা হয়, নতুন রিফাইনারি নির্মাণের প্রয়োজন হলে সরকারই তা নির্মাণ করবে। জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেকদিন থেকেই দেশীয় তেল প্রক্রিয়াকরণকারীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ কেউ এখনও অনিয়ম করে যাচ্ছে। তাছাড়া অনেক আগে থেকেই বিপিসি কোন পেট্রোল এবং অকটেন আমদানি করে না। এর পুরোটাই দেশে উৎপাদন করা হয়। বাড়তি উৎপাদনের ফলে তেল মজুদ করে রাখতে হয়। এ পরিস্থিতিতে নতুন রিফাইনারির দরকার না থাকলেও অনেকেই রিফাইনারির ব্যবসা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। একই সঙ্গে নানাভাবে অনুমোদনের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। সঙ্গত কারণেই জ্বালানি বিভাগ নতুন রিফাইনারি অনুমোদন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কনডেনসেট প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, কেরোসিন ইত্যাদি উৎপাদন করা হয়। এখন দেশে পেট্রোবাংলার অধীন কিছু প্লান্ট, বিপিসির মালিকানাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি (ইআরএল) ও বেসরকারী কিছু ফ্রাকশনেশন কারখানায় কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন করা হয়। এছাড়া আরও কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই অভিযোগ রয়েছে বেসরকারী কোম্পানিগুলো সারাদেশে তেল ভেজালের সঙ্গে জড়িত। সবচেয়ে বেশি ভেজাল মেশানো হচ্ছে অকটেন ও পেট্রোলে। দামের দিক থেকে এ দুই ধরনের জ্বালানির দামই বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ডিজেলে ভেজাল মেশানো সহজ হওয়ায় তাও বাদ পড়ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলেন, পেট্রোল ও অকটেন হাল্কা জ্বালানি তেল কিন্তু ডিজেল তৃলনামূলকভাবে একটু ভারি হওয়ায় ভেজাল দেয়া সহজ। বিপিসির জ্বালানি তেল বিক্রি বৃদ্ধির বদলে ২০১৪ সাল থেকে কমতে শুরু করে। পরের বছর বিপিসির জ্বালানি তেল বিক্রি আরও পড়ে গেলে বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন প্লান্টের অনুমোদন নিয়ে কতিপয় ব্যবসায়ী অবৈধ এ বাণিজ্য করছে। সম্প্রতি কনডেনসেটের নানা বাণিজ্যিক অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। ওই বৈঠকে সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, যারা কনডেনসেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যদিও বছরের মাঝামাঝি সময়ে অভিযুক্ত চারটি প্রক্রিয়াকরণ কারখানার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় জ্বালানি বিভাগ থেকে। কমিটির সদস্য আবু জাহির এমপি বৈঠকে বলেন, কনডেনসেটের অপব্যবহার নিয়ে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট উপস্থাপনের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। তিনি বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছয়টি কোম্পানি কনডেনসেট ব্যবহারে ব্যাপক অনিয়ম করেছে। এরা কালোবাজারির মাধ্যমে পেট্রোল, অকটেনে কনডেনসেট মিশিয়ে বিক্রি করে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার গাড়ির ইঞ্জিন ধ্বংস করেছে। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে বিপিসি বলছে, দেশে ব্যাপকহারে জ্বালানি তেলের মধ্যে কনডেনসেট ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এরপর কনডেনসেটের দর বাড়িয়ে লিটারপ্রতি ৪২ দশমিক ৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রক্রিয়াকরণ কারখানা মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে আনুপাতিক হারে উৎপাদিত জ্বালানির দরও বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু দেশীয় বাজারে কনডেনসেটের দর বেশি তাই বিদেশ থেকে আমদানির দিকে ঝুঁকছে কারখানা মালিকরা। আমদানি করা কনডেনসেট বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছতে খরচ পড়ছে ৩৭ দশমিক ১৬ টাকা। এতে জ্বালানির উৎপাদন ব্যয় কম হলেও বেশি দরেই কিনতে হচ্ছে বিপিসিকে। পোট্রোবাংলা জানায়, বছরে কনডেনসেট উত্তোলনের পরিমাণ পাঁচ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। দেশীয় কনডেনসেট থাকার পরও বিদেশ থেকে শুধু মূল্য সাশ্রয়ের জন্য বেসরকারী উৎপাদনকারীরা কনডেনসেট আমদানি করছে। বিপিসি সূত্র বলছে, দেশে মোট যে কনডেনসেট উৎপাদন হয় তা প্রক্রিয়াকরণের জন্য আর বাড়তি কারখানার দরকার নেই। এছাড়া গ্যাসের উপজাতের জ্বালানি তেল কিছুটা নিম্নমানের হওয়ায় তা রফতানিও করা যায় না। গত বছর সরকার মিয়ানমারে পেট্রোল ও অকটেন রফতানি করতে চাইলে তা করা সম্ভব হয়নি। নিম্নমানের হওয়ায় কনডেনসেট থেকে উৎপাদিত তেল কিনতে রাজি হয়নি দেশটি।
×