ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যানজটে তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২১ অক্টোবর ২০১৭

যানজটে তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ যানজটের কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে ভয়াবহ যানজটের কারণে মধ্যম লেভেলের কর্মকর্তারা কাজ করতে চাচ্ছে না। শুধু তাই নয় কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে যানজটের কারণে। তাই দ্রুত এই সঙ্কটের সমাধান হওয়া প্রয়োজন। শুক্রবার বিকেলে পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ শিল্পখাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান। ওই দেশে বিদ্যমান বিদ্যুত-গ্যাস সঙ্কটের সমাধান এবং বন্দরসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে তাগিদ দেয়া হয়। এছাড়া ইউরোপীয় ক্রেতাজোট এ্যাকর্ডের বিষয়ে কথা বলেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে তাদের চলে যাওয়ার কথা থাকলেও শর্তসাপেক্ষে বাড়তি ছয় মাস সময় তারা থাকতে পারবে। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কাজ শেষ হওয়ার পর অফিস, স্টাফ গুছিয়ে নিতে কিছু সময় লাগবে। এ জন্য বাড়তি ছয় মাস সময় লাগলেও সেটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন এ্যাকর্ড’ নামে পরিচিত হবে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সরকারের উচ্চ পদস্থদের সঙ্গে গ্যাস সমস্যা নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা একটি সার কারখানায় সরবরাহ বন্ধ করে আমাদের শিল্পে গ্যাস দেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে আজ শনিবার নাগাদ এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গ্যাস সঙ্কটের কারণে শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর ও সাভারের প্রায় সাড়ে তিনশ’ তৈরি পোশাক কারখানার উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। এ পরিস্থিতিতে একটি সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে ওই গ্যাস শিল্পে সরবরাহ করার বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে পোশাক শিল্প মালিকদের আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। দীর্ঘদিন থেকেই শিল্প মালিকরা গ্যাস ও বিদ্যুত সঙ্কটের কথা বলে আসছেন। এ সঙ্কট নিরসনে এবং শিল্পের অবদানের কথা বিবেচনায় নিয়ে সার কারখানার বদলে ওই গ্যাস শিল্পে সরবরাহের দাবিও জানিয়ে আসছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি আগামী এপ্রিলের মধ্যে সরকার ঘোষিত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি করা যাবে কিনা-তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা এ জন্য আরও সময় লাগবে। এ সময়ের মধ্যে এলএনজি আনতে হলে সরকারকে বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে বিদ্যুত পরিস্থিতির উন্নয়ন হলেও সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের সমস্যার কারণে পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হচ্ছে না। এ সময় পোশাক শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর অঞ্চলে ভয়াবহ যানজটের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ঢাকা থেকে কারখানার মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কারখানায় গিয়ে আসতে বাড়তি ৬ ঘন্টা সময় লাগছে। এ সমস্যা সমাধানে টঙ্গী, গাজীপুর চৌরাস্তা ও আশুলিয়া এলাকার সড়কগুলো দ্রুত চার লেনে উন্নীত করার দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের কিছু সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি পরিবহন সঙ্কটের কথাও জানায় বিজিএমইএ। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিস্থিতি অতীতের চাইতে উন্নতি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এতে পণ্য পাঠানোর সময় (লিড টাইম) পূর্বের চাইতে কমবে বলে উল্লেখ করেন সংগঠনের সভাপতি। বাংলাদেশে কর্মরত ইউরোপের ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত কারখানা পরিদর্শন জোট এ্যাকর্ডের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার সরকারের বৈঠকে আগামী বছরের পর আর না থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের কারখানা অতীতের চাইতে বর্তমানে কর্মপরিবেশের দিক থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার মনে করে, এদেশের এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্সের দরকার নেই। ইতিমধ্যে এ্যালায়েন্স জানিয়েছে আগামী সাত মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করবে। এবং এর পর তারাও এদেশে থাকতে চায় না বলে সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। অবশ্য গত সাড়ে চার বছরে সরকার ও বিজিএমইএ’র সঙ্গে মিলে এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স যে কাজ করেছে, এ জন্য জোট দুটি বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়। সংবাদ সম্মেললেন অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি মইনউদ্দিন আহমেদ মিন্টু, সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, মাহমুদ হাসান খান বাবু, পরিচালক শহিদুল হক মুকুল, আশিকুর রহমান তুহিন প্রমুখ।
×