ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইলিশ থেকে স্যুপ ও নুডলস তৈরি

প্রকাশিত: ০৩:২৪, ২১ অক্টোবর ২০১৭

ইলিশ থেকে স্যুপ ও নুডলস তৈরি

ইলিশের নাম শুনলে জিভে জল আসে না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বলা হয়ে থাকে বিশ্বে সবচেয়ে সুস্বাদু মাছের তালিকায় স্যামন মাছের পরেই ইলিশের স্থান। কোন কোন ক্ষেত্রে পুষ্টিগুণে স্যামন মাছের চেয়েও এগিয়ে আছে বাঙালীদের প্রিয় ইলিশ। মোহনীয় স্বাদের এই মাছ খ্যাতি পেয়েছে জাতীয় মাছের হয়েছে ‘মাছের রাজা’। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ইলিশ মাছ আহরণের মৌসুম ব্যতীত এমাছ বাজারে থাকলেও কেনার সাধ্য হয় না সকলের। আরও একটি বিষয় হচ্ছে এই মাছে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকায় সহজেই পচে যায়। ফলে বছরের বিশাল একটা সময় এই মাছের স্বাদ বঞ্চিত হয় মানুষ। তাছাড়া মাছে অত্যধিক কাটা থাকার কারণে সুস্বাদ ও পুষ্টিগুণ জানার পরও বাচ্চা আর বৃদ্ধরা খেতে পারে না। এসব বিষয় মাথায় রেখে শিশু, বাচ্চা, বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষের খাবার উপযোগী ইলিশ মাছের স্যুপ ও নুডলস্ তৈরিতে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। দীর্ঘ দেড় বছর গবেষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ কে এম নওশাদ আলম ইলিশের স্বাদ, গন্ধ ও গুণাগুণ অক্ষুণœ রেখে ইলিশ মাছের স্যুপ ও নুডলস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। গবেষক জানান, ইলিশ মাছ পুষ্টিগুণে পৃথিবীর যে কোন উৎকৃষ্ট মাছের সমতুল্য অথবা তার চেয়ে অনেক বেশি। অনেকের মতে ইলিশ পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু মাছ। ইলিশের চর্বিতে বিদ্যমান ওমেগা-৩ অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এ্যাসিড মানুষের রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ইলিশ মাছ মানুষের দেহের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় অথবা হৃদরোগ মুক্ত করে এবং মানুষকে স্স্থু, সবল ও সতেজ রাখে। কিন্তু অসম্পৃক্ত ফ্যাডি এসিডের কারণে এমাছ সংরক্ষণ করা যায় না। ফলে বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অন্য সময় সাধারণ মানুষ এটা তেমন খেতে পায় না। স্যুপ ও নুডলস। তৈরি করায় মন চাইলেই সাধারণ মানুষ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ইলিশের স্বাদ নিতে পারবে। ইলিশের পুষ্টিগুণ, অর্থনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন দিক চিন্তা করে বর্তমান সরকার ইলিশ থেকে সারা বছর ঘরে রেখে খাওয়ার মতো, সস্তা, অবিকল কাঁটাবিহীন ইলিশ পণ্য উৎপাদনের ওপর মৎস্য বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করে। এ লক্ষ্যে গঠিত বিভিন্ন জাতীয় কমিটিতে বাকৃবির অধ্যাপক নওশাদ আলমকে পণ্য উদ্ভাবন বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রায় দেড় বছরের অধিক সময় ধরে তিনি ও তার গবেষক দল নিরলস প্রচেষ্টায় ইলিশ মাছের স্বাদ ও গন্ধকে অপরিবর্তিত রেখে ইলিশ-স্যুপ ও ইলিশ নুডলস্ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এতে ইলিশের আমিষ, অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এ্যাসিড, অনান্য পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিনের কোন ঘাটতি না ঘটিয়ে মাছের কিমা, মাথা, নাড়ি-ভুঁড়ি ও ডিম থেকে আলাদা আলাদাভাবে ফ্রিজে সংরক্ষণযোগ্য ছোট ব্লক আকৃতির কিউব তৈরি করেন তিনি। যার একটি ব্লক দিয়ে ১ জনের গ্রহণযোগ্য ৭০ গ্রাম ভরের নুডলস্ ও অথবা ১৩০মিলি স্যুপ তৈরি করা সম্ভব। শুধুমাত্র গরম পানি মিশিয়েই তা এটি পরিবেশন করা যাবে। প্রতি প্রাকেট নুডলস অথবা স্যুপের খুচরা বাজার মূল্য পড়বে মাত্র ২০-২৫ টাকা। ওয়াল্ড ফিশ সেন্টারের ইকোফিশ প্রকল্প ইলিশ পণ্য উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরণ গবেষণায় আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। ইকোফিশ প্রকল্পের সহায়তায় ভারগো ফিশ এ্যান্ড এগ্রো প্রসেস লিমিটেড এর মাধ্যমে শ্রীঘই দেশব্যাপী বাজারজাত করা হবে বলে ড. নওশাদ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শুভাষ চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, এটি একটি সময় উপযোগী গবেষণা। দেশের ভোগোলিক নির্দেশক এ পণ্যটি থেকে উৎপাদিত ইলিশ স্যুপ ও ইলিশ নুডলস্ বিদেশে রফতানি করার গেলে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। -মোফাজ্জল হোসেন, বাকৃবি সংবাদদাতা
×