ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

থামছে না পাথর ও বালু ব্যবসা

শীতলক্ষ্যা নদীর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ॥ জড়িত বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২০ অক্টোবর ২০১৭

শীতলক্ষ্যা নদীর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ॥ জড়িত বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ শীতলক্ষ্যা নদীর তীর দখল করে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার শিমরাইল মৌজার শিমরাইল ও তাঁত জুটমিল ও ঢাকার ডেমরার সারুলিয়া ও শুকুরশি এলাকায় অবাধে চলছে পাথর ও বালুর ব্যবসা। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওয়াকওয়ে দখল করে এ অবৈধ পাথর ও বালুর ব্যবসা করে কোটিপতি বনে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, এ অবৈধ ব্যবসা থেকে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারাও হাতিয়ে নিচ্ছে প্রচুর অর্থ। ফলে কিছুতেই এ অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। জানা গেছে, কয়েক যুগ ধরে শিমরাইল, আটি, শুকুরশি ও সারুলিয়া এলাকায় নদীর তীর দখল করে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে পাথর ও বালুর ব্যবসা। এ অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করতে হাইকোর্টের নির্দেশে সরকার নদীর তীরে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছে ওয়াকওয়ে (হাঁটাচলা রাস্তা)। করা হয়েছে বনায়ন। কিন্তু মালামাল লোড-আনলোডের নামে ইজারাদাররা চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ পাথর ও বালুর ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে, শিমরাইল এলাকার জহির শীতলক্ষ্যা নদীর শিমরাইল থেকে ডেমরার শুকুরশি সীমানা পর্যন্ত লোড-আনলোডের শুল্ক আদায়ের জন্য নদীর তীর ইজারা নেয়। কিন্তু সে লোড-আনলোডের শুল্ক আদায়ের পাশাপাশি বালুর গদি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এ ব্যবসার কারণে প্রায় শতাধিক গাছও নষ্ট করে ফেলেছে বলে স্থানীয়রা জানায়। আরও অভিযোগ রয়েছে, শিমরাইল এলাকার লোড-আনলোডের ইজারাদার জহির বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে এ অবৈধ পাথর ও বালুর ব্যবসা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেও ঠেকানো যাচ্ছে না অবৈধ ব্যবসা। অসাধু ব্যবসায়ীরা বিআইডব্লিউএর নিজস্ব জায়গায় গড়ে তোলা বনায়নের গাছগুলো তুলে ফেলছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওয়াকওয়ে। এ অবৈধ ব্যবসার ফলে একদিকে নদীর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে নদীর তলদেশ দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও ডেমরার শুকুরশি, সারুলিয়া এলাকায় নদীর তীর দখল করে অসাধু ব্যবসায়ীরা পাথর ও বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই বহু নৌযানকে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে পাথর ও বালু নিয়ে আনলোডের অপেক্ষা থাকতেও দেখা যাচ্ছে। খবর নিয়ে জানা যায়, ভোর থেকে এ অবৈধ পাথর ও বালুর ব্যবসা শুরু হয়।দুপুর পর্যন্ত চলে এ ব্যবসা। বার্জ, ট্রলার, কার্গোসহ বিভিন্ন নৌযান থেকে শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিক টুকরিতে করে আস্তর, ভিটি বালু ও পাথর নামিয়ে নদী ভরাট করে স্তূপাকারে রাখছে। পরে ধীরে ধীরে ট্রাকে করে অন্যত্র তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করে দিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বহুবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। সকালে উচ্ছেদ হলে বিকেলেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে দেখা যায়। অভিযানের খবর আগেই অসাধু কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পেয়ে অভিযানের দিনে ব্যবসা গুটিয়ে রাখছে। ফলে এখানকার ব্যবসা কখনই বন্ধ হচ্ছে না। সম্প্রতি বদলি হওয়া বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা জানান, জহির হলো শিমরাইল এলাকার মালামাল লোড-আনলোডের ইজারাদার।অথচ জহির পাথর ও বালুর ব্যবসা করছে বলেও শোনা যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, চুক্তিপত্রে স্পষ্ট লেখা আছে, কোন ইজারাদার বালু ও পাথরের ব্যবসা করতে পারবে না। এমনকি কোন বালু ও পাথর বা অন্য কোন মালামাল স্তূপাকারেও রাখতে পারবে না।
×