ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. চিত্তরঞ্জন দাশ

বাল্টিক সাগর থেকে রকি মাউন্টেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২০ অক্টোবর ২০১৭

বাল্টিক সাগর থেকে রকি মাউন্টেন

(পূর্ব প্রকাশের পর) ক্যনমোরে’ অভিযাত্রী দলের প্রথম অভিযান একে একে সবাই একত্রিত হচ্ছে টিম লিডার গ্রেট শংকর বণিকের বাড়িতে। একমাত্র আমরাই আগন্তুক, সকলেরই অপরিচিত। গাড়ি থেকে নেমে প্রথমেই যে ষাট উর্দ্ধ ভদ্র মহিলার দর্শন মিলল তাঁকে আমি চিনতে পারেনি। তিনিও যে আমাকে চিনতে পেরেছিলেন সেটাও বলতে পারবো না। তবে কোথায় যেন দেখেছিলাম সে আশঙ্কাও মনে পুষে রাখিনি। আরো একজন একটু অধিক বয়সের ভদ্রলোকের সাথে মহারাণীর পরিচয় করিয়ে দিলেন স্বয়ং রামকৃষ্ণ দাদা।গাড়িতে বসে সুব্রত দাদার সাথে নানা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি নিজে ইঞ্জিনিয়ার কাজও করেন একটা বড় ফার্মে। তার ব্যক্তিগত কিছু সখের সাথে আমার নিজের সখের একটা অপূর্ব মিল থাকার কারণে আলাপ চারিতাটা বেশ জমে উঠল। তবে তার একটা বাড়তি সখ যেটা আমার নেই। তা’হল হান্টিং বা শিকার করা। ল-নে অবশ্য শিকার করাতে অনেক আইনি জটিলতা আছে যেটা তুলনা মূলক ভাবে এই কানাডাতে অনেকটা কম। ল-নের ইপিং এবং হেনল্ট ফরেষ্টে প্রচুর হরিণের পদচারণায় বনাঞ্চল মূখরিত থাকে কিন্তু সেই হরিণ শিকারের অনুমতি পাওয়া যায় কিনা তার প্রচেষ্টা কখনও চালানো হয়নি যদিও দুই পুত্রের আগ্নেও অস্ত্রের লাইন্সেস আছে এবং তারা দুজনেই শুটার। কোন কোন ক্ষেত্রে পশুদের সংখ্যাধিক্য নিয়ন্ত্রনের জন্য শিকারের অনুমতি দেওয়া হয়। কানাডা অনেক বড়দেশ এবং তার পশু সম্পদের প্রাচুর্য থেকে দুই একটা পশু কমে গেলে তেমন কিছুই এসে যায় না। আর সেই কারণেই বুঝি কিছুটা শীথিলতা। তবে সব পশু শিকারের অনুমতি অবশ্যই নেই। ক্যালগেরি শহর ছাড়িয়ে সমতল ভুমির উপর দিয়ে তখন জীপ গাড়িটা ছুটে চলেছে। দূরে অষ্পষ্ট অথচ আঁকাশ ছোয়া রকিমাউন্টেনের চুড়া দেখে অনুমান করা যায় আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই তার পদতলে আছড়ে পড়ব। রাস্তার দুই পাশে অনেক বড় বড় ফার্ম ল্যা-, যার সবুজ নয়াভিরাম ফসলে ভরা দীগন্ত বিস্তৃত প্রন্তর, এক মনোমূগ্ধকর দৃশ্যের অবতারনা করে রেখেছে। এই সব মূল্যবান শস্যের পরিচয় জানতে গিয়ে জানা গেল কানাডার তিনটি সম্পদশালী এগ্রোবেজড জনপ্রিয় খাদ্যের নাম। যেগুলির উৎপাদনে এই অঞ্চলের কৃষির উপর নির্ভর করতে হয়। জনপ্রিয় এই খাদ্যের মধ্যে কানাডিয়ান ক্যা-ি, জিনজার ড্রিংকস্ এবং ক্যান ভেজিটেবল ওয়েল। যে গুলি কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। কানাডা পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের মতই অন্যতম খাদ্য রপ্তানি কারক দেশ। বিংশ শতাব্দিতে এসে কানাডা কৃষি এবং কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এবং অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্যপক, বিস্তৃত ও বহুমূখী কৃষি ও শস্য উৎপাদন হয়ে থাকে এই আয়োতনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটিতে। পাঁচটা প্রধান কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে গ্রেন এবং ওয়েল সিড মিলে- যিবধঃ, ফঁৎঁস, ড়ধঃং, নধৎবষু, ৎুব, ভষধী ংববফ, পধহড়ষধ, ংড়ুনবধহং, ৎরপব ধহফ পড়ৎহ মোট উৎপাদনের ৩৪% ভাগ। অভ্যন্তরিন চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয়। পশুজাত খাদ্য অর্থাৎ রেড মিট- নববভ, পধঃঃষব, যড়মং, াববষ ধহফ ষধসনং. পশুজাত মোট উৎপাদনের ২৪% অভ্যন্তরিন চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। বাকি ফধরৎু, যড়ৎঃরপঁষঃঁৎব ঢ়ড়ঁষঃৎু ধহফ বমমং মিলে ২৯% শুধু অভ্যন্তরিন চাহিদা মেটানোর পর আর কিছুই রপ্তানির জন্য অবশিষ্ট থাকে না। এই সব আলোচনা করছি আর চারিদিকের নয়নাভিরাম পর্বত মালার দৃশ্যাবলি অবলোকন করতে করতে এক সময় আমাদের প্রথম স্পট ক্যানমোর এসে উপস্থিত হলাম। পরিকল্পনা অনুসারে প্রথমেই গিয়ে হাজির হলাম জীবন কৃষ্ণ দাদার ফোর্ড জীপের দরজার কাছে। অর্পনা দিদি গাড়ি থেকে নামতেই তার হাতটা সজোরে চেপে ধরে বললাম দিদি তোমাকে খুব করে মারতে ইচ্ছা করছে। তুমি আমাকে চিনতে পারলে না? ইতোমধ্যে জীবন দাদা তার প্রিয়তমা সহধর্মীনির সমূহ বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য পাশে এসে দাঁড়ালেন। দেখতে দেখতে অন্যরা এসে কৌতুহল মেটানোর জন্য একটা জটলার সৃষ্টি হয়ে গেল। দাদাকে বললাম আপনিও চিনতে পারলেন না? সত্যি তখনও তাঁরা আমাদের চিনতে পারেননি। নাম এবং রাজশাহীর কথা বলাতে হঠাৎ যেন দাদা দিদির চোখে মুখে এক ঝলক বিদ্যুৎ চমকে গেল। বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগে উচ্ছাসে দুজনেই বলে উঠলেন কতদিন পরে-’এতদিন কোথায় ছিলে পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটরের বনলতা সেন’। ভুল হয়ে গেল যশোরের চিত্ত ও প্রীতিলতা দাস। এর পরের অধ্যায় শুধু গান আর গান। চলবে...
×