ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ

স্কুল আছে, ছাত্র নেই!

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২০ অক্টোবর ২০১৭

স্কুল আছে, ছাত্র নেই!

বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া, ১৯ অক্টোবর ॥ দেখলে মনে হবে কোন এক ভূতরে বাড়ি। অথবা গরুর খামার। চারদিকে খড়কুটু। ঝোপ-ঝাড়ে ভরপুর। নেই কোন পথ। এটি কোন প্রাচীন নিদর্শনও নয়। একটি স্কুল অবহেলায় এভাবে পড়ে আছে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে। পটিয়া উপজেলার পূর্ব হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে এ স্কুলটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও সংস্কার কিংবা পুনরায় চালু করার কোন উদ্যোগ নেই। ফলে ওই এলাকার শত শত শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার যেখানে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে ও শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছে সেখানে এ ধরনের একটি বিদ্যালয় ৮ বছর ধরে অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা খুবই দুঃখজনক বলে এলাকার লোকজন মন্তব্য করেন। এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও দানবীর হাজী মোজাহেরুল ইসলাম তার নিজস্ব অর্থায়নে পূর্ব হাবিলাসদ্বীপ জেএস মিঞা বাড়ি কমিউনিটি স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৯ বছর যাবত মোজাহেরুল ইসলামের আর্থিক খরচে স্কুল শিক্ষকদের বেতন ভাতা দেয়া হয়। পূর্ব হাবিলাসদ্বীপের দুই শতাধিক পরিবারের শিশুরা ওই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করত। ওই স্কুলে এখন আর পাঠদান হয় না। সরেজিমন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার পূর্ব হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে ২০০০ সালে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দানবীর মোজাহেরুল ইসলাম কমিউনিটি এ স্কুলটি চালু করেন। শুরুতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিশুদের পাঠদান করা হতো। স্কুলের পাশেই রয়েছে জোয়ার-ভাটার বোয়ালখালী খালের শাখা খাল। দীর্ঘদিন কোন সংস্কার ও বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল পুনরায় চালু না করায় চারদিকে ঘাস ও ঝোপ-ঝাড়ে ভরপুর। মূল সড়ক থেকে স্কুলে যাওয়ার কোন পথ না থাকায় মূলত এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এলাকার কিছু কিছু শিশু হাবিলাসদ্বীপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। তৎকালীন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (বর্তমান সভাপতি) মোছলেম উদ্দিন আহমদ এ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি উদ্বোধনের একটি নামফলকও রয়েছে। তাছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পকির্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এমপি সামশুল হক চৌধুরী নিজ সংসদীয় এলাকায় এ বিদ্যালয়টি। গ্রামবাসী বিদ্যালয়টি পুনরায় চালুর দাবি জানান। পটিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোতাহের বিল্লাহ বলেন, স্কুলটি স্যাটেলাইট স্কুল হিসেবে প্রথমে চালু করা হয়েছিল। সরকারের ওই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্কুলের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলটি পুনরায় কিভাবে চালু করা যায় তা উর্ধতন কর্মকর্তাদের তিনি অবহিত করবেন বলে জানান। বিদ্যালয় উন্নয়ন কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল পুনরায় চালু করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে একাধিকবার ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু কারও কাছ থেকে সাড়া পাননি। তবে স্কুলটি উন্নয়নের জন্য তৎকালীন ইউএনও গমও বরাদ্দ দিয়েছিল। স্কুলে উপবৃত্তি চালু ছিল। ব্যক্তিগত অর্থায়নে স্কুলে যাওয়ার একমাত্র পথটিও ভরাট করা হয়েছিল। কিন্তু খালের ভাঙনে ভরাট করা রাস্তাটি ভেঙ্গে যায়। এর পর থেকে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়।
×