ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টেকনাফ-উখিয়া সড়কে চরম ভোগান্তি

অনিরাপদ হয়ে উঠছে কক্সবাজার পর্যটন এলাকা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২০ অক্টোবর ২০১৭

অনিরাপদ হয়ে উঠছে কক্সবাজার পর্যটন এলাকা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ পর্যটন মৌসুমেই ক্রমশ অনিরাপদ হয়ে উঠছে কক্সবাজার পর্যটন এলাকা। রোহিঙ্গারা শেষ পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন স্পট কক্সবাজারকে নষ্ট করার চক্রান্তে মেতেছে কি-না তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ নাফ নদী পার হওয়ার পর রোহিঙ্গারা টেকনাফ থেকে বিভিন্ন কৌশলে শরণার্থী ক্যাম্পে না গিয়ে সরাসরি কক্সবাজার কিংবা অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল রেস্তরাঁয় ছোটখাটো কাজ নিয়ে আপাতত মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিচ্ছে। অসাধু হোটেল মালিকরাও কম বেতনে কর্মচারী নিয়ে মানবতার নামে ব্যবসার আয় বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, কক্সবাজার থেকে বাসে টেকনাফ যেত পর্যটকরা। পরে সেখান থেকে স্পিডবোট, ইঞ্জিনবোট ও লঞ্চে চড়ে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পৌঁছত। কিন্তু প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গার জন্য তৈরি করা শরণার্থী ক্যাম্পের কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে পর্যটকরা। অন্যদিকে দায়িত্বহীনতা ও আর অর্থ বাণিজ্যের কারণে পুলিশ বাহিনীর অসাধু সদস্যদের সহযোগিতায় এখনও ইয়াবার চালান স্থানান্তরিত হচ্ছে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে। ফলে অভিযানে একের পর এক রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ও আশপাশের এলাকায় ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। এদিকে, চট্টগ্রামে জলপথ ও সড়কপথে ইয়াবার চালান আসছে প্রতিনিয়ত। জানা গেছে, কক্সবাজারে মোট ৬৮টি হোটেল, মোটেল ও রেস্তরাঁ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন কটেজ। এসব হোটেল, মোটেল ও রেস্তরাঁ ঘিরে রোহিঙ্গারা কম বেতনে কাজ নেয়ার চেষ্টা করছে। অসাধু হোটেল ব্যবসায়ীরা কম মজুরিতে কর্মচারী নিয়োগ শুরু করায় রোহিঙ্গারা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। এতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও এসব রোহিঙ্গার কারণে আগামী পর্যটন মৌসুম ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন হোটেল, মোটেল ব্যবসায়ীরা। র‌্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১৩ অক্টোবর রাতে অভিযান চালানো হয় কক্সবাজারের টেকনাফের জালিয়াপাড়া এলাকায়। সেখানে আনোয়ারের চা দোকানে ইয়াবা ট্যাবলেট ক্রয়-বিক্রয় করার সময় অভিযান চালায় কক্সবাজারের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোঃ রুহুল আমীনসহ একটি দল। রাত ১০টায় পরিচালিত ওই অভিযানে আটক করা হয় আনোয়ার হোসেনকে। জালিয়াপাড়া এলাকার মৃত আলী আহম্মদের ছেলে ৫৫ বছর বয়সী এ মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ১০ হাজার পিস ইয়াবা। এর আগে গত ১১ অক্টোবর আরেক অভিযানে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার নায়াপড়া শরণার্থী ক্যাম্প এলাকায় অভিযান চালিয়ে মহিলা ইয়াবা ব্যবসায়ী সাজিদাকে আটক করা হয়। সাজিদা শরণার্থী ক্যাম্পের ‘ডি’ ব্লকের ১০৫২নং শেডে বসবাস করছিল। তার এমআরসি নং-৩৩৭৩/এ। নয়াপাড়ার মুসনি শরণার্থী ক্যাম্পে থেকেই সে ইয়াবা পাচার করে আসছিল বলে ক্যাম্পের অন্যরা সাক্ষ্য দিয়েছে। তার দেহ তল্লাশি করে এক হাজার ১৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ইয়াবার আনুমানিক মূল্য সোয়া পাঁচ লাখ টাকা। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে, সে দীর্ঘদিন যাবত ইয়াবা ক্রয় বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত। আরেক অভিযানে কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকার নায়াপড়া শরণার্থী ক্যাম্প এলাকা থেকে গত ৮ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে আনোয়ার হোসেন ও নুরুন্নাহার বেগমকে আটক করা হয়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তাদের দেহ তল্লাশি করে ৯৭০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২১টি এ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের রোল, পাঁচটি মোবাইল সেট, সাতটি সিমকার্ড এবং মাদক বিক্রির প্রায় ৬১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ইয়াবা ট্যাবলেটের মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, গত প্রায় ১০ মাসে র‌্যাব সেভেনের অভিযানে প্রায় ৬৩ লাখ ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। অপরদিকে, গত ৯ অক্টোবর কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা এলাকায় এক দুষ্কৃতকারী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এক যুবতীকে শরণার্থী ক্যাম্পে বিয়ের প্রলোভন দেখায়। র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার রুহুল আমীনের কাছে এ খবর এলে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রনয় চাকমা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসামি খায়রুল আমিনকে নারী পাচারের চেষ্টার অভিযোগে ১০ দিনের কারাদ- দিয়ে কক্সবাজার কারাগারে প্রেরণ করেন। সে মিয়ানমারের মংডু এলাকার নারাপুরের বুরাই শিকদারপাড়ার আব্দুল আমিনের ছেলে। কক্সবাজার র‌্যাব সেভেনের কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমীনের পক্ষ থেকে জানা গেছে, শুধু ইয়াবাই নয়; রোহিঙ্গারা নারী পাচারেও জড়িত। অভিযানে শরণার্থী ক্যাম্পের আশপাশ এলাকায় যেমন ইয়াবা বিক্রির অভিযোগ রয়েছে, তেমনি নারী পাচারের চেষ্টার অভিযোগে খায়রুল আমিনকে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
×