ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াকারদের ছাড়িয়ে হাসান, অভিষেকেই শতক ইমামের

চাচা ইনজামামের মান রাখলেন ইমাম

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২০ অক্টোবর ২০১৭

চাচা ইনজামামের মান রাখলেন ইমাম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মাত্র এক বছর পেরিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরুর। প্রথম থেকেই নিজের নৈপুণ্যে পাকিস্তান জাতীয় দলের ওয়ানডে স্কোয়াডে জায়গাটা পাকাপোক্ত করেছেন পেসার হাসান আলী। ২৩ বছর বয়সী এ ডানহাতি ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আবুধাবীতে হওয়া সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে। ৩৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে সবচেয়ে কম ম্যাচে ৫০ উইকেট শিকারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছেন। ২৪ ওয়ানডেতে এখন ৫১ উইকেট নিয়ে সাবেক পেসার ওয়াকার ইউনুসের রেকর্ডকে (২৭ ম্যাচে ৫০) পেছনে ফেলেছেন তিনি। একই ম্যাচে ওয়ানডে ইতিহাসের ১৩তম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকেই শতক হাঁকিয়েছেন ২১ বছর বয়সী তরুণ ওপেনার ইমাম-উল-হক। কিংবদন্তি ইনজামাম-উল-হকের ভাতিজা ইমাম পাকিস্তানের পক্ষে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট কিংবা লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে খুব বেশিদিন হয়নি। ২০১৩ সালে প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হলেও বেশি ম্যাচ খেলেননি ইমাম। তবে নিয়মিত রান করে জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছিলেন। ইমামের চাচা ইনজামাম বর্তমানে প্রধান নির্বাচক। সে কারণেই হয়তো জাতীয় দলে একটা সুযোগ পেয়েছেন এবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজে। অন্তত নিন্দুকেরা আড়ালে এমনটাই বলছিলেন। প্রথম দুই ওয়ানডেতে সুযোগ হয়নি খেলার। কিন্তু তৃতীয় ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়ে যান ওপেনার আহমেদ শেহজাদের টানা দুই ম্যাচে ব্যর্থতার কারণে। সুযোগটা পেয়েই কাজে লাগিয়ে সব সমালোচনার জবাব দারুণভাবে দিয়েছেন ইমাম। ম্যাচশেষে তাই তিনি বলেছেন, ‘আমি তার ভাতিজা এটা আমার কোন দোষ হতে পারে না। কিন্তু এজন্য আমি কারও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে সবার কাছে উত্তর দিতে পারব না। আমি শুধু যেটা করতে পারি সেটা হচ্ছে চেষ্টা। সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে নৈপুণ্য দেখানো। হয়তো কিছু ব্যর্থতাও থাকবে কিন্তু সেসব নিয়ে আমি ভীত নই। কারণ ব্যর্থতা সব ক্রিকেটারের জীবনেরই একটা অংশ।’ সব সমালোচনাকে মাটিচাপা দেয়ার জন্য একটা ভাল ইনিংস প্রয়োজন ছিল। প্রথম সুযোগেই সেটা করে দেখিয়েছেন ইমাম। এ বাঁহাতি ৮৯ রানের সময় অবশ্য সাজঘরের দিকে হাঁটা ধরেছিলেন লাহিরু গামাগের বলে উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকওয়েলার ক্যাচে পরিণত হয়ে। কিন্তু মাঝপথেই আবার তাকে উইকেটে ফিরিয়ে এনেছেন টিভি আম্পায়ার রিচার্ড কেটলবোরো। কারণ টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে ডিকওয়েলার গ্লাভসে যাওয়ার আগেই মাটি ছুঁয়েছে বল। এই সুযোগটা পেয়েই রেকর্ড গড়েন ইমাম। ১৯৯৫ সালে প্রথম পাকিস্তানী হিসেবে অভিষেকেই শতক হাঁকিয়েছিলেন সেলিম ইলাহী। তিনিও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গুজরানওয়ালাতে ওই কীর্তি গড়েন। সবমিলিয়ে অভিষেকেই সেঞ্চুরি হাঁকানোর এটি ১৩তম ঘটনা। ১৯৭২ সালে প্রথম ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ডেনিস এ্যামিস অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যানচেস্টারে। ১৯৭৮ সালে এ্যান্টিগাতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেসমন্ড হেইন্স, ১৯৯২ সালে জিম্বাবুইয়ের এন্ডি ফ্লাওয়ার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে নিউ প্লাইমাউথে, ২০০৯ সালে নেপিয়ারে ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল, ২০১০ সালে ব্লুমফন্টেইনে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার কলিন ইনগ্রাম, ২০১১ সালে হারারেতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের রব নিকোল, ২০১৩ সালে মেলবোর্নে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার ফিল হিউজেস, ২০১৪ সালে এন্টিগায় ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের লাম্ব, ২০১৫ সালে দুবাইয়ে আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে হংকংয়ের চ্যাপম্যান এবং ২০১৬ সালে হারারেতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ভারতের লোকেশ রাহুল ও বেনোনিতে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার টেমবা বাভুমা অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকান। ইমাম ১২৫ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ১০০ রান করে অপরাজিত থেকে এই তালিকায় নিজের নামটাকেও যোগ করেন। তবে পরের ম্যাচেই ব্যর্থ হলে আপাতত চাপা পড়ে যাওয়া বিতর্ক নতুন করে শুরু হতে পারে। এ বিষয়ে ইমাম বলেন, ‘সেটা আমার মধ্যে কোন পরিবর্তন আনবে না। আমার প্রচুর আত্মবিশ্বাস আছে। আমাকে প্রমাণ করার জন্য ঘরোয়া ক্রিকেট ও অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপের নৈপুণ্য আছে। মানুষ কথা বলবেই এবং তাদের কাজ করে যাবে। আমি তাদের কথাগুলোকে অবশ্যই সম্মান জানাব এবং আমার কাজ হবে মাঠে নেমে নৈপুণ্য দেখানো। আমি এসব কথায় কান দেব না।’ ইমামের আগেই শ্রীলঙ্কা ইনিংসে রীতিমত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন পেসার হাসান। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে মাত্র ৩৪ রান দিয়ে তুলে নেন ৫ উইকেট। ফলে ওয়ানডেতে ৫০ উইকেট শিকারের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। ২৮ ম্যাচে এই কীর্তি গড়ে পাকিস্তানের মধ্যে তিনে আছেন সাবেক স্পিনার সাকলাইন মুস্তাক।
×