ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বললেন মাশরাফি বিন মর্তুজা

‘টিম বাংলাদেশ হয়ে খেলতে পারছি না’

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২০ অক্টোবর ২০১৭

‘টিম বাংলাদেশ হয়ে খেলতে পারছি না’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেন, ‘আমাদের সামর্থ্য আছে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েও ভাল খেলার।’ সেই সামর্থ্য কোথায় উড়ে গেল! এমনই অবস্থা হয়েছে যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিতে পারছে না বাংলাদেশ দল। অথচ এই দলটিই ওয়ানডেতে গত দুই বছর ধরেই সাফল্যে ভেসেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতেই যেন সব উধাও হয়ে গেছে। বরাবরের মতো এবারও হারের গোলকধাঁধাতেই আটকে গেছে। কেন এমনটি হচ্ছে? মাশরাফি একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চেয়েছেন। বলেছেন, ‘দল হিসেবে ভাল খেলছি না। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দল হিসেবে ভাল খেলতে পারছি না।’ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে সাফল্যে ভেসেছে বাংলাদেশ। যে সাফল্যগুলো পেয়েছে তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভাল করার কথা। আত্মবিশ্বাসী থাকার কথা ক্রিকেটারদের। আত্মবিশ্বাস আর চাঙ্গা মনোবলই তো পুঁজি হওয়ার কথা। কন্ডিশন যেমনই হোক। দল যত শক্তিশালীই হোক। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে গিয়ে যেন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এই দলটিই দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার আগে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জিতেছে। তার আগে এই দলটিই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে খেলেছে। আয়ারল্যান্ডে তিনজাতি সিরিজেও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে। এ বছর মার্চ-এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট (১-১), ওয়ানডে (১-১) ও টি২০ (১-১) সিরিজে ড্র করেছে। ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে হায়দরাবাদে একমাত্র টেস্টে হারলেও দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ। গত বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ওয়ানডে, টি২০, টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। তবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পেরেছে। অসহায় আত্মসমর্পণ করেনি। এর আগে অক্টোবরে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছে। সিরিজ হারলেও একটি ওয়ানডেতেও জিতেছে। এর আগে এশিয়া কাপ টি২০তে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে খেলেছে। জিম্বাবুইয়েকে সিরিজে হারিয়েছে। ২০১৫ সালে তো সাফল্যই শুধু মিলেছে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সঙ্গে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারিয়েছে। অসাধারণ সময় কাটছিল বাংলাদেশের। কিন্তু হঠাৎ করেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলতে গিয়ে যেন এলোমেলো হয়ে গেছে দল। ব্যক্তিগত সাফল্য মিলছে। টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে দল। দীর্ঘপরিসরের এই ফরমেটের খেলায় প্রথম টেস্টে মুমিনুল হকের ৭৭, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৬৬ রানের ইনিংস দেখা মিলেছে। মুস্তাফিজুর রহমান নিজেকে খানিকটা মেলে ধরতে পেরেছেন। দ্বিতীয় টেস্টে লিটন কুমার দাসের ৭০ রানের ইনিংস দেখা গেছে। শুভাশীষ রায় বোলিং ঝলক দেখিয়েছেন। কিন্তু এই ইনিংসগুলো এবং ব্যক্তিগত বোলিং নৈপুণ্যগুলো কোন কাজেই আসেনি। একই অবস্থা দেখা গেছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ হওয়া দুই ওয়ানডেতেও। ১০ উইকেটে হারা প্রথম ওয়ানডেতে বোলাররা তো একটি উইকেটও শিকার করতে পারেননি। তবে মুশফিকুর রহীম ঠিকই সেঞ্চুরি করে দেখিয়েছেন। ১১০ রান করেছেন। যা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে কোন ফরমেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম সেঞ্চুরি। ১০৪ রানে হারা দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সাকিব আল হাসান ২ উইকেট নেয়ার পর রুবেল হোসেন ৪ উইকেট নিয়েছেন। ব্যাট হাতে ইমরুল কায়েস ৬৮ ও মুশফিকুর রহীম ৬০ রান করেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত নৈপুণ্যগুলো কোন কাজে আসছে না। কারণ মাশরাফিই জানিয়ে দিয়েছেন। একটা দল হিসেবে যে খেলা যাচ্ছে না। তাই চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেয়া যাচ্ছে না। এজন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ দল যে সাফল্যেম-িত ছিল, সেই সাফল্যগুলোও যেন আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। সবাই যে বর্তমান সাফল্যকে নিয়েই ভাবেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে খেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় তুলে নেয়া যে কতটা কঠিন তা সবদলই জানে এবং বোঝে। বাংলাদেশ দল যেন একটু বেশিই বুঝছে। একের পর এক ম্যাচ যাচ্ছে আর বিধ্বস্ত অবস্থা যে আরও বাড়ছে। একের পর এক ম্যাচে যে লজ্জার হারই মিলছে। এখান থেকে বের হওয়া জরুরী। কিন্তু কিভাবে? মাশরাফি বের হওয়ার পথ বের করার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা গ্রুপ হিসেবে ভাল খেলতে পারছি না। হঠাৎ করে কেউ কেউ এগিয়ে আসছে। কিন্তু গ্রুপ হিসেবে ভাল খেলাটা এখনও হয়ে উঠছে না।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘অবশ্যই অনুশীলন দরকার আছে। অনুশীলনের বিকল্প কিছু নাই। এই ধরনের কন্ডিশনে ভাল করার জন্য প্রচুর অনুশীলন করতে হবে। আমার মনে হয় না সিরিজের মধ্যে এটা সম্ভব। যখন অফ সিজন থাকে বা বিরতি থাকে তখন সুনির্দিষ্ট ব্যাপারগুলো নিয়ে কাজ না করলে এই ধরনের কন্ডিশনে এসে এমন সংগ্রাম করতে হবে।’ সংগ্রাম যা করার করে ফেলেছে বাংলাদেশ। এখন তো ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটিই বাকি। রবিবার ইস্ট লন্ডনের বুফালো পার্কে হবে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। এর আগেই টানা দুই ওয়ানডেতে হেরে সিরিজ হার হয়ে গেছে। তৃতীয় ওয়ানডেতে যদি জেতা যায় তাহলে হোয়াইটওয়াশ হওয়া থেকে বাঁচবে বাংলাদেশ। কিন্তু তা যে কতটা কঠিন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতেই পারে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ হলেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০২ ও ২০০৮ সালের পর তৃতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ। সঙ্গে উপমহাদেশের বাইরে টানা সিরিজ হারের গোলকধাঁধাতেই আটকে থাকবে বাংলাদেশ। কোনভাবে কী সেই পথ থেকে বের হওয়ার উপায় নেই? বাংলাদেশ দল সেই পথই খুঁজছে।
×