ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কল্যাণী হাসান

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সোচ্চার এক নারী

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২০ অক্টোবর ২০১৭

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সোচ্চার এক নারী

সঞ্জয় সরকার ‘আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন বাবা-মা আমাকে বাল্যবিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ করে সেদিন বিয়ে বন্ধ করেছিলাম। আর তা করতে পেরেছিলাম বলেই আজ আমি একজন উচ্চ শিক্ষিত ও কর্মজীবী নারী।’ কথাগুলো নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার জালালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা কল্যাণী হাসানের। আজ তিনি শুধু শিক্ষিকাই নন, একজন সফল নারী সংগঠকও। বিশেষ করে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে কল্যাণী হাসান এক প্রতিবাদী নাম। নিজ উপজেলায় এ পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন তিনি। স্বপ্নজয়ী কল্যাণী হাসানের বাড়ি কেন্দুয়া উপজেলার দিগদাইর গ্রামে। তার স্বামীর নাম কামরুল হাসান ভূঁইয়া। কল্যাণী হাসান জানান, দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারে জন্মগ্রহণের কারণে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালে বাবা-মা তাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন নিজেই তা রুখে দাঁড়ান। এ কারণে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এমএসসি পাসশ করে ২০০২ সালে যখন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকার চাকরি পানÑ সেদিন তার বাবা-মা ও পাড়া-প্রতিবেশীরা তাদের ভুল বুঝতে পারেন। নিজের জীবন থেকে যে শিক্ষা অর্জন করেছেনÑ তা প্রয়োগ করতে চান এলাকার অন্য মেয়েদের ক্ষেত্রেও। তাই এলাকার কোন মেয়ের বাল্যবিয়ের খবর পেলেই ছুটে যান তিনি। প্রথমে অভিভাবকদের বাল্যবিয়ের কুফল ও আইনগত দিক সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তাতে কাজ না হলে স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দেন। এভাবে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় এবং নিজ উদ্যোগে কেন্দুয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের এ পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেছেন তিনি। কোথায়ও বাল্য বিবাহের আয়োজন দেখলেই সচেতন এলাকাবাসী কল্যাণী হাসানকে ফোন করেন। অনেক সময় বাল্যবিবাহের শিকার কিশোরীরাও সরাসরি তাকে খবর দেন। ছুটির দিনগুলোতে তিনি গ্রামে গ্রামে, স্কুল-কলেজে গিয়ে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সভা, ওঠান বৈঠক করেন। শুধু বাল্যবিয়ে নয়, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও তিনি সদা সোচ্চার। এলাকার কোন নারী নির্যাতিত হলে তিনি তার ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহযোগিতার হাত বাড়ান। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি এসব কাজ করেন ‘কেন্দুয়া উপজেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি’র ব্যানারে। সংগঠনটির তিনি সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে পর্যন্ত বহু বয়স্ক, দুস্থ, বিধবা ও প্রতিবন্ধীর ভাতা প্রাপ্তিতে সহায়তা করেছেন। সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকা- বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তিনি নিজ নামে গঠন করেছেন ‘কল্যাণী ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। কল্যাণী হাসান বলেন, ‘কৈশোরে মা-বাবা যখন বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তখন যদি আমি প্রতিবাদ না করতামÑ তাহলে আজকের এই অবস্থানে আসতে পারতাম না। তাই আমি চাই, একটি মেয়েরও যাতে বাল্যবিয়ে না হয়। প্রথম দিকে লোকজনের সহযোগিতা কম পেয়েছি। এখন স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি সবাই আমাকে সহযোগিতা করেন। তাই সমাজের প্রত্যেকটি বিবেকবান মানুষের প্রতি আহ্বান আপনারাও বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন।’ সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডের স্বীকৃতি হিসেবে কল্যাণী হাসান ২০১৫ সালে ‘জয়িতা’ পুরস্কার এবং ২০১৬ সালে আনসার ভিডিপি’র পুরস্কার পয়েছেন। এদিকে কল্যাণী হাসান শুধু একজন শিক্ষিকা বা সমাজ সেবিকাই নন। একজন সফল নারী ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত । উপজেলা সদরে একটি জুয়েলারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি। এরই মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন ‘কেন্দুয়া উপজেলা জুয়েলারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে। স্কুল ছুটির পর নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় দেন তিনি। পারিবারিক জীবনে ও স্বামী-সন্তান নিয়ে একজন সফল নারী
×