ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেটের কারসাজি

মরিচের ঝাল না কমতেইফের পেঁয়াজের বাজার অস্থির

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২০ অক্টোবর ২০১৭

মরিচের ঝাল না কমতেইফের পেঁয়াজের বাজার অস্থির

এম শাহজাহান ॥ মরিচের ঝাল না কমতেই ফের সিন্ডিকেটের কারসাজিতে অস্থির হয়ে উঠছে পেঁয়াজের বাজার। প্রতি কেজি দেশীয় পেঁয়াজ কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা। আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ কিছুটা কমে ৫২-৫৫ টাকায় কিনতে পারছেন ভোক্তারা। দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে মসলা জাতীয় এই পণ্যটির দাম কোথায় ঠেকে, সেই আশঙ্কায় ক্রেতাদের অস্বস্তি বাড়ছে। অথচ পেঁয়াজের আমদানি ও দেশীয় মজুদ পরিস্থিতি ভাল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সপ্তাহের ব্যবধানে জাত ও মানভেদে কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের আমদানি ও সরবরাহ ভাল। আড়তদার, পাইকার ও খুচরা দোকানগুলোতে পেঁয়াজের কোন সঙ্কট নেই। শুধু দাম নিয়েই যত সমস্যা। দোকানদারদের চাহিদামতো টাকা দিলেই মিলছে মণ কে মণ পেঁয়াজ। গত কোরবানি ঈদের আগেই বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়ানোর অপকৌশল গ্রহণ করে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। ওই সময় কোরবানি সামনে রেখে চারদিকে এই পণ্যটির দাম নিয়ে হৈ-চৈ পড়ে গেলে ব্যবসায়ীরা চাপের মুখে সেই সময় স্বাভাবিক পর্যায়ে নামিয়ে আনেন। কিন্তু একমাস যেতে না যেতেই আবারও বাড়িয়ে বর্তমান নিত্যপণ্যের বাজারে কাঁচামরিচের কেজি ২০০ টাকার উপরে। শাক-সবজির দাম চড়া। চালের দাম কিছুটা কমলেও বাজার পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। আবার এরই মধ্যে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। এই বাস্তবতায় দেশের সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে। আর বাজার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাই দায়ী। পেঁয়াজের বাজারেও দেশে বড় ধরনের সিন্ডিকেট চক্র রয়েছে। ঢাকার শ্যামবাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, মৌলভীবাজার এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক অর্ধশত আমদানিকারক ব্যবসায়ী দেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এই চক্রটির হাতেই পেঁয়াজের বাজার জিম্মি হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সময় ভুল তথ্য সরবরাহ করে চক্রটি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে থাকে। সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়েও ভুল তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এ কারণে দেশে পেঁয়াজের মজুদ, চাহিদা, আমদানি এবং উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্য নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের আমদানি, মজুদ এবং উৎপাদন নিয়ে সঠিক তথ্য নেই। তথ্য বিভ্রান্তির সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা এখন দাম বাড়ার জন্য ভারতের মূল্য বৃদ্ধিকে দায়ী করছে। তিনি বলেন, ভারতে দাম বাড়লেও দেশে দাম বাড়ার কথা নয়। কারণ আজ যে পেঁয়াজ ভারত থেকে আসছে তার ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় মাসখানেক আগে। তাহলে ভারতে এক দুই টাকা বাড়লেও দেশে বাড়ার কথা নয়। দাম বাড়ার জন্য অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাই দায়ী। এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় এবং সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হলে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। জানা গেছে, গত আগস্টে দাম বাড়তে বাড়তে দেশী পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৫-৭০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকায় উঠেছিল। পবিত্র ঈদ-উল-আযহার কয়েক দিন আগে থেকে দাম কমতে থাকে। সেই সময় সরকারের কঠোর নির্দেশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে আর দাম বাড়তে পারেনি। চলতি মাসের প্রথম দিকে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ৪০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঢাকার কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজার শ্যামবাজারকেন্দ্রিক আমদানিকারক মোঃ মাজেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ভারতে দাম বাড়ার কারণে দেশেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। দেশে পেঁয়াজের বড় অংশ ভারত থেকে আমদানি করে পূরণ করতে হয়। তাই ওখানে দাম না কমলে দেশেও কমার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে কাপ্তান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মিজান জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ার জন্য পাইকার ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীরাই দায়ী। পাইকারিতে দাম বাড়ার কারণে খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে। এদিকে, সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব (টিসিবি) বাংলাদেশের তথ্যমতে, বর্তমান ৫২-৬৫ টাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। সংস্থাটির হিসেবে, গত এক মাসে দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ এবং গত এক বছরে দাম বাড়ার হার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। দাম বাড়ার জন্য আবার সিন্ডিকেট চক্রই দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, দেশে গড়ে প্রতি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা এক লাখ ২০ হাজার টন। এর মধ্যে নবেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই তিন মাসে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। এ ছাড়া রমজান মাস ও কোরবানির সময় পেঁয়াজের দেড় থেকে ২ লাখ টন বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এই চাহিদাকে পুঁজি করে সক্রিয় উঠে সিন্ডিকেট চক্র। এবারের রমজানে পেঁয়াজ নিয়ে কোন কারসাজি না হলেও কোরবানি ঈদকে টার্গেট করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে সেই সময় তাদের অপতৎপরতা সফল হয়নি। দেশে উৎপাদন, আমদানি ও ভোগ হিসাব করলে এখনও দেশে এখন পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকার কথা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি হিসেবে দেখা গেছে, দেশে বছরে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। আর চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়ে থাকে ১৯-২০ লাখ টন। তবে বছরে ১৯ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হওয়ার তথ্যটি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, দেশের পেঁয়াজের চাহিদার ৬০ ভাগ দেশীয় পেঁয়াজ দিয়ে পূরণ হয়। বাকিটা আমদানি করে মেটাতে হয়।
×