আজ ২০ অক্টোবর ভাষা আন্দোলনের সিপাহসালার জাতীয় নেতা অলি আহাদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। রাজনীতিতে এক আপোসহীন নেতার নাম অলি আহাদ। ভক্ত-সমর্থকদের কাছে অলি আহাদ আদর্শিক রাজনীতির ধ্রুবতারা। তার জন্ম ১৯২৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। পিতার চাকরিকালীন এলাকা কুমিল্লার হোমনা থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন, ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম-এ ফার্স্ট হন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ধর্মঘটকে সমর্থন দিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার অপরাধে আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন। এমকমে ভর্তির আবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখ্যান করে। ২০০৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।
১৯৪৬ সালে পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে অলি আহাদের রাজনীতিতে আগমন। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অলি আহাদ। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে প্রথম কর্মসূচীতে ১১ মার্চ তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের আমলে কারারুদ্ধ হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নায়ক তিনি।
১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ১৯৫৭ সালে ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি- সিয়াটো- সেন্টো চুক্তির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। আওয়ামী লীগ বিভক্ত হলে ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন অলি আহাদ। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় ৪ বছর কারাগারে ছিলেন। মৃত্যুকালে ডেমোক্র্যাটিক লীগের সভাপতি ছিলেন।
১৯৪৮ সাল থেকে প্রতিটি আন্দোলনে অগ্রসৈনিক অলি আহাদ। এক সামরিক সরকারের আমলেই আটবার কারারুদ্ধ হন তিনি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০০৫ সালে তাকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়। তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। অলি আহাদের রাজনৈতিক গ্রন্থ ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-৭৫’ ইতিহাসের এক অনন্য দলিল।
আমার সঙ্গে অলি আহাদের পরিচয় ১৯৭৩ সালে। তিনি প্রতিদিন অফিসে এসে মনোযোগের সঙ্গে পত্রিকা পড়তেন এবং প্রধান প্রধান অংশ আন্ডার লাইন করে সবাইকে তা পড়তে দিতেন। প্রতিদিনের পত্রিকা এবং প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক গ্রন্থ পড়া প্রতিটি কর্মীর জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। তিনি দেশের এবং দেশের বাইরের বড় বড় ঘটনার পেপারকাটিংয়ের ফাইল করতেন এবং সবাই তা পড়ে পর্যালোচনা মিটিংয়ে যোগ দিত। তিনি স্পষ্ট কথা বলতেন, কোনরকম চাতুর্যপূর্ণ বা প্রতারণামূলক কর্মকা-কে অপচ্ছন্দ করতেন।
তিনি সাধারণ নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক পর্যালোচনা মনোযোগের সঙ্গে শুনতেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের মতামতের গুরুত্ব দিতেন। নিজ ধর্মের অনুশাসন কঠোরভাবে পালনকারী অলি আহাদ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির অগ্রসৈনিক।
অস্থির রাজনীতির এই যুগে অলি আহাদের বড় প্রয়োজন ছিল। অলি আহাদ আমাদের মাঝে নেই। অলি আহাদের আদর্শিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে পারলেই তার আত্ম শান্তি পাবে।
লেখক : ডেমোক্র্যাটিক লীগের
সাধারণ সম্পাদক