ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেগা প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ২০ অক্টোবর ২০১৭

মেগা প্রকল্প

বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে বর্তমান সরকার বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। জনগুরুত্ব বিবেচনায় এই প্রকল্পগুলোকে মেগা প্রজেক্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে সরকার। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য বাজেট বরাদ্দও করেছে, যা বাস্তবায়িত হবে ধাপে ধাপে। মেগা প্রজেক্টগুলো হলো পদ্মা বহুমুখী সেতু, পদ্মা রেল সেতু, চট্টগ্রাম-দোহাজারী থেকে রামু-কক্সবাজার এবং রামু-গুমদুম রেলপথ নির্মাণ, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরটি), পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ (১ম পর্যায়), সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট, মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্প বা রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এবং মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণের জন্য ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি করে ‘ফার্স্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটি’ নামে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিবকে সভাপতি করে গঠন করা হয়েছে ‘ফার্স্ট ট্র্যাক টাস্কফোর্স’। এর মধ্যে সর্বাধিক দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি। বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত ঋণ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর বাংলাদেশ স্বউদ্যোগে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। চীনের সহায়তায় নির্মিতব্য সেতুটির প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়ায় আশা করা যায় যে, যথাসময়ে এর কাজ শেষ হবে। সেক্ষেত্রে এটি বর্তমান সরকারের একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে নিঃসন্দেহে। এমআরটির আওতায় ঢাকা মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজও এগিয়ে চলছে। তবে এর দৃশ্যমান অগ্রগতি দশ শতাংশের কম। অনুরূপ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র এবং রামপাল কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজও এগিয়ে চলেছে। ঢাকা-মাস র‌্যাপিড ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভয়াবহ যানজট ও দূষণকবলিত রাজধানীর পুরো ট্রাফিক সমস্যার অনেকটাই লাঘব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহল। এর জন্য ঢাকায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফ্লাইওভারও ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে ও হচ্ছে। তবে কথা অন্যত্র। প্রকল্পগুলো নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল ও উচ্চাভিলাষী। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশে প্রকল্প ব্যয়, এমনকি ফ্লাইওভার, ব্রিজ বা অন্যবিধ স্থাপনার ব্যয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। এর অবশ্য নানা কারণ ও ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে প্রধান কারণ হলো, প্রায় সব প্রকল্পের কাজই যথাসময়ে শেষ না হওয়া। ফলে স্বভাবতই নির্মাণ ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত বরাদ্দের অপেক্ষায় থাকতে হয়। এতে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ও বেড়ে যায়, যা জাতীয় অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করে থাকে। দ্বিতীয়ত দেশে প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ব্যয় অত্যন্ত বেশি। এর পেছনে মধ্যস্বত্বভোগীসহ নানা কারসাজিও যে থাকে, তাও অস্বীকার করা যাবে না। জমি অধিগ্রহণজনিত মামলা মোকদ্দমাও কম দায়ী নয় কোন অংশে। তদুপরি বিদেশী ঋণ ও অনুদানের অর্থ অনেক ক্ষেত্রে সময়মতো পাওয়া যায় না। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গেও প্রকল্পের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে। এর ফলে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মেরও অবকাশ থাকে। এসব দীর্ঘসূত্রতা বিবেচনায় যেটা সর্বাধিক বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত তা হলো যে কোন মূল্যে যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা। দেশে দক্ষ ও অদক্ষ জনবলসহ নির্মাণ শ্রমিকের অভাব হওয়ার কথা নয়। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে জনদুর্ভোগের বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের মাথায় রাখতে হবে। রাজধানীতে ফ্লাইওভার ও ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে গিয়ে নগরবাসীর দীর্ঘ সময়ব্যাপী তিক্ত অভিজ্ঞতার বিষয়টি সবারই জানা। সার্বিক বিবেচনায় জননিরাপত্তাসহ জনদুর্ভোগ কমানো এবং যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে অবশ্যই।
×