ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপূর্ব কুমার কুণ্ডু

নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব

আগামীকাল থেকে অর্থাৎ ২০ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রামের শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্যদল নান্দীমুখ এর আয়োজনে উদযাপিত হতে যাচ্ছে দশটি দেশী-বিদেশী নাটক নিয়ে ‘নানা রঙের আলোয় বিশ্বনাটক’ স্লোগানকে ধারণ করে নয়দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ‘নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব’। নান্দীমুখ এ পর্যন্ত সাতটি আন্তর্জাতিক এবং নয়টি জাতীয় উৎসব উদযাপন করেছে। নান্দীমুখ প্রতি এক বছর অন্তর অন্তর উৎসব আয়োজনের মধ্যে দিয়ে চট্টগ্রামের নাট্যকর্মী-দর্শক ও শুভানুধ্যায়ীদের পরিচয় ঘটিয়ে দেয়। নান্দীমুখ বিশ্বাস করে, এই ধরনের আয়োজনের মধ্যে দিয়ে নতুন দর্শক সৃষ্টি সম্ভব। পাশাপাশি বিশ্ব নাটকের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রযোজনার গুণগতমান নিয়ে একটা তুলনামূলক চিত্রের সন্ধান মেলে যা আগামী দিনের নাট্য নির্মাণে সমৃদ্ধি আনে। তারই ধারাবাহিকতায় অষ্টমবারের মতো এবারের নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের স্লোগান ‘নানা রঙের আলোয় বিশ্বনাটক’। পৃথিবীর থিয়েটারের রঙ এখানে থাকছে। ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য থিয়েটারের যে বৈশ্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে তুলে ধরাই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় এবং সে ভাবনার প্রতিফলন ‘নানা রঙের আলোয় বিশ্বনাটক’ স্লোগানে। নয়দিনব্যাপী নাট্যোৎসবে পরিবেশিত হবে দশটি নাটক। বাংলাদেশের নাটক পাঁচটি এবং অন্যান্য দেশের নাটক পাঁচটি। প্রথমদিন কলেজ স্ট্রিটের এক ক্ষয়ীষ্ণু বই ব্যবসায়ীর ব্যবসা টিকিয়ে রাখার মরন-পণ লড়াইয়ের ভারতের নাটক ‘তোমার আমি’। দ্বিতীয়দিন, যুদ্ধের বিরুদ্ধে মানবতার জয়ের নাটক ‘আঁধারে সুর্য্য’। তৃতীয়দিন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের পাঠাভিনয় ‘ওপেন কাপল’ এবং নান্দীমুখের পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে মানুষের স্বাধীকার আন্দোলনের ইতিবৃত্ত নিয়ে নাটক ‘তবুও মানুষ’। চতুর্থ দিন নাটক পরিবেশন করবে ইরান। অস্ট্রেলিয়ার মানাচ দ্বীপে ৯ সদস্যের এক ইরানী দল পথ হারিয়ে কিভাবে বাঁচার লড়াই চালিয়ে যায় তা নিয়েই নাটক ‘মানাচ’। পঞ্চমদিন মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা আশ্রয়ী নাটক ‘মৃত্যুপাখি’। ষষ্ঠদিন, নিস্পেষিত মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম কাহিনী নিয়ে নাটক ‘জ্বালা’। সপ্তমদিন, স্বৈরাচারী রাজার স্বেচ্ছাচারিতার নাটক ‘ক্যালিগুলা’। অষ্টমদিন একক অভিনয়ের বরপুত্র গৌতম হালদারের ‘বড়দা বড়দা’। নবম তথা সমাপনীদিন নরওয়ের আঞ্চলিক সামি ভাষা ভাষি মানুষদের জীবন-আচার-ঐতিহ্য- বৈচিত্র আশ্রয়ী নাটক ‘হেরিটেজ’।এবারে নান্দীমুখ নারী নাট্যকর্মীদের সম্মাননা জানাচ্ছে। যে আর্থ-সামাজিক প্রতিকূলতার মাঝে তাদের কর্ম সম্পাদন তাকেই সম্মাননা জানানোই নান্দীমুখের লক্ষ্য। অভিনেত্রী সারা যাকের, শুভ্রা বিশ্বাস, সাবরি সুলতানা বীনা, কংকন দাশ- তারা প্রত্যেকেই দুই যুগের অধিক সময় ধরে নাট্যমঞ্চে। তাদের প্রত্যেককে সম্মাননা প্রদানের মধ্যে দিয়ে নান্দীমুখ যেমন সম্মানিত তেমনি তাদের কাজকে কিছুটা মূল্যায়ন করার সুযোগ পেয়ে ধন্য। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি নান্দীমুখের অপার কৃতজ্ঞতা তাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য। পাশাপাশি কৃতজ্ঞ ভারত-বাংলাদেশ ফাউন্ডেশান, ইরানী কালচারাল সেন্টার এবং সামি কালচারাল সেন্টার নরওয়ের প্রতি যারা বিভিন্ন দলকে আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। পাশাপাশি তারা সবিশেষ কৃতজ্ঞ সাংস্কৃতিক বান্ধব চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী পত্রিকার প্রতি যারা পঞ্চাশের অধিক বছর সময় ধরে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত। দৈনিক আজাদী পত্রিকা এবারে নাট্যোৎসবের মিডিয়া পার্টনার। নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে প্রথম দিন উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং শেষের দিন সমাপনী অনুষ্ঠান থাকছে। তৃতীয়দিন থাকছে সম্মাননা পদক প্রদান অনুষ্ঠান। এছাড়া উৎসবের প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত অনিরুদ্ধ মুক্ত মঞ্চে রয়েছে আবৃত্তি, গণসংগীত, দলীয় সংগীত, নৃত্যানুষ্ঠান ও পথনাটকের পরিবেশনা। নান্দীমুখ দল প্রধান, নাট্যাৎসবের আহ্বায়ক, নাট্যকার-অভিনেতা- নির্দেশক অভিজিৎ সেনগুপ্তের দর্শক ও নাট্যানুরাগীদের প্রতি মরমিয় উচ্চারন, আমাদের এই নাট্যোৎসবে আপনারা আসবেন। দেশ ও বিদেশের নাটক দেখবেন। আপনাদের উপস্থিতি আমাদের অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের আয়োজন স্বার্থক হয়ে উঠবে।
×