ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং তাণ্ডবে একাধিক রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং তাণ্ডবে একাধিক রেকর্ড

মিথুন আশরাফ ॥ এবি ডি ভিলিয়ার্স যে ২ রানে ‘নতুন জীবন’ পেলেন, আর থামলেন না। এমন ব্যাটসম্যানকে সুযোগ দিলে কী আর ছাড় দেন! ভিলিয়ার্স দিলেনও না। এমনই ব্যাটিং তাণ্ডব দেখালেন, ওয়ানডে ক্যারিয়ার সেরা ১৭৬ রানই করে ফেললেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দর্শকদের মন ভরিয়ে দিলেন। ওয়ানডেতে নিজের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানতো করলেনই, সেই সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাও পার্লে রেকর্ড ৩৫৩ রানের স্কোর গড়ে ফেলল। আমলা ও ডি কক যখন এক ’শ রানের জুটি গড়ার পথে ঠিক এমন সময়ই সাকিবের জোড়া আঘাত। ৯০ রানের সময় কক ও প্লেসিসকে সাজঘরে ফেরালেন সাকিব। এরপর ভিলিয়ার্সকেও আউট করার কাজটি করে ফেলেছিলেন। কিন্তু স্লিপে থাকা নাসির হোসেন ক্যাচ ধরার মতো চেষ্টাই করলেন না। ভিলিয়ার্সের তখন মাত্র ২ রান। সাকিবের ছোড়া বলটিতে কাট করেন। ব্যাটের কানায় লেগে বল স্লিপে যায়। কিন্তু স্লিপে হাত বাড়িয়েও বল ছুঁতে পারেননি নাসির। বলটিকে ধরার মতো চেষ্টাটাই তো তিনি করেননি। তাতে করে ভিলিয়ার্স সুযোগ পেলেন। ‘নতুন জীবন’ পেলেন। সেই জীবনটি পেয়ে নিজের স্টাইলে খেলে, ধুন্ধুমার ব্যাটিং করে ১০৪ বলে ১৫ চার ও ৭ ছক্কায় ১৭৬ রান করে রুবেলের বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ আউট হন ভিলিয়ার্স। আউট হওয়ার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ার সেরা ১৭৬ রানের ইনিংস খেলেন ভিলিয়ার্স। এরআগে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিডনিতে অপরাজিত ১৬২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ভিলিয়ার্স। এই ইনিংস বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নামার আগে ভিলিয়ার্সের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল। সেটিকেও টপকে গেলেন ভিলিয়ার্স। একটি সুযোগ পেয়ে মারমুখী হয়ে খেললেন। বাংলাদেশের বারোটাও বাজিয়ে ছাড়লেন। তিনি যখন আউট হন তখনই ৩৪৩ রান করে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। মনে হচ্ছিল ক্যারিয়ারের ২৫তম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি ডাবল সেঞ্চুরিতে পরিণত করে ফেলবেন। প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পাবেন। কিন্তু তা হলো না। ভিলিয়ার্স আউট হতেই যেন বাংলাদেশ বোলাররাও নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে দেয়। না হলে যে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪০০ রানেও যেতে পারত। অবশ্য ভিলিয়ার্স যখন আউট হন তখন হাতে আর ১৪ বল বাকি ছিল। তাতে ৪০০ রান যাওয়াও সম্ভব ছিল না। কিন্তু এই ১৪ বলে তা-ব ঘটিয়ে স্কোরকে তো আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতেই পারতেন ভিলিয়ার্স। নিজের স্কোরকে তো আরও বড় করতে পারতেন। তা না হলেও ২০০৮ সালে বেনোনিতে যে ৩৫৮ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা যা বাংলাদেশের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ স্কোর, সেই স্কোরকে টপকাতে পারত দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ভিলিয়ার্স আউটের পর তা আর সম্ভব হয়নি। তবে পার্লে সর্বোচ্চ স্কোরটিই গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে পার্লের বোল্যান্ড পার্কে ২০০১ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ৩৫১ রান করেছিল ভারত। সেটিই বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ওয়ানডের আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ছিল। বুধবার সেটিকেও অতিক্রম করল দক্ষিণ আফ্রিকা। তা সম্ভব হয়েছে ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং তা-বে। অথচ এ ব্যাটসম্যান প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটিং করারই সুযোগ পাননি। পেলে হয়তো সেই ম্যাচেই মন জুড়ানো ব্যাটিং দেখিয়ে দিতেন। ইনজুরিতে সেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর আর ওয়ানডে খেলা হয়নি। অবশ্য কোন ওয়ানডে খেলা ছিলও না। তবে টেস্ট খেলতে পারতেন। তা খেলেননি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলার সিদ্ধান্ত নিলেন। ব্যাট হাতে নিয়েই দেখিয়ে দিলেন ঝলক। নিজস্ব স্টাইলে খেলে নিজেকেই ছাড়িয়ে গেলেন ভিলিয়ার্স। ভিলিয়ার্সের সামনে সুযোগ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একম্যাচে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়ার। যদি আর ১৩ রান করতে পারতেন। তা হলেই ১৯৯৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে গ্যারি কারস্টেনের করা অপরাজিত ১৮৮ রান টপকে যেতে পারতেন ভিলিয়ার্স। কিন্তু রুবেল তা হতে দেননি। আউট করে দেন। তবে একটি দিক দিয়ে ভিলিয়ার্স আরেকটু এগিয়ে গেছেন। হাশিম আমলা যে সর্বোচ্চ ২৬টি সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেঞ্চুরি করার দিক দিয়ে শীর্ষ আসনে বসে আছেন, তার কাছাকাছি চলে গেছেন ভিলিয়ার্স। আর একটি সেঞ্চুরি হলে আমলাকে ছুঁবেন। যদি আমলা আরেকটি সেঞ্চুরি করার আগেই ভিলিয়ার্স করে ফেলেন। আর দুটি করলে আমলাকেও পেছনে ফেলবেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে এরআগে ২০০৮ সালেই সর্বশেষ খেলেছিলেন ভিলিয়ার্স। ৫ ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে কখনই সেঞ্চুরির দেখা পাননি। তবে ২০০৮ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অপরাজিত ৬৯ রান করেছিলেন। কিম্বার্লিতে হওয়া প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটিংই করার সুযোগ পাননি। দুই ওপেনার মিলেই ম্যাচ জিতিয়ে দেন। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েই নিজের বিধ্বংসী রূপ সামনে তুলে ধরেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির দেড় বছর পর আবার সেঞ্চুরির দেখা পেলেন ভিলিয়ার্স। ২১ ম্যাচ পর সেঞ্চুরি পেয়েছেন। যদিও এর মধ্যে ব্যাটিংয়ে ঝড় তোলা তার বন্ধ ছিল না কখনই। শুধু সেঞ্চুরিটিই মিলছিল না। বাংলাদেশকে পেয়ে যেন ভিলিয়ার্স আগ্রাসী হয়ে উঠলেন। এ বছর জুনের পর ব্যাট হাতে নেননি। ভিলিয়ার্সের মতো ব্যাটসম্যানরা তিনমাস ব্যাটিং ছেড়ে কি থাকতে পারেন। ভিলিয়ার্স যেন হাত চুলকাচ্ছিলেন। কখন ব্যাট হাতে নেবেন আর তা-ব দেখাবেন। সেই তা-বের শিকার হয়ে গেল বাংলাদেশ। ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং তা-বে একাধিক রেকর্ডও হয়ে গেল। ভিলিয়ার্স ওয়ানডে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেললেন। দক্ষিণ আফ্রিকা পার্লে সর্বোচ্চ স্কোর গড়ল।
×