ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘জনতা ওকে মেরে ফেললে খুশি হতাম’

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

‘জনতা ওকে মেরে  ফেললে খুশি হতাম’

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনায় চোখ হারানো যুবক শাহ জালালের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগে দায়ের করা মামলার বাদী সোমা আক্তার ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সোমা বলেন, ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে মামলা করায় তিনি এবং তার পরিবার বিপাকে পড়েছেন। ছিনতাই মামলা তুলে নেয়ার উদ্দেশে আসামি শাহজামাল ওরফে শাহজালাল ওরফে শাহর মা রেনু বেগম আদালতে যে মামলাটি করেছেন তাতে তাকেও আসামি করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ছিনতাইকারী শাহজালালের সহযোগী সন্ত্রাসীরা তাকে ও তার বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে জনতা ওকে (শাহজালাল) মেরে ফেললে খুশি হতাম’। আর পুলিশ ছিনতাই মামলায় আদালতে চাজশীট দিলেও গত ৩ মাসেও তার ছিনতাই হওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি। যা দুঃখজনক। সংবাদ সম্মেলনে সোমার ভাই জাহিদ হোসেন, বাবা মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে শাহজালালের মায়ের দায়েরকৃত মামলার ধার্য দিনে বুধবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি। পিবিআই’র পক্ষ থেকে আদালতে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত আগামী ২৬ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন। রেনু বেগমের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী এ্যাডভোকেট মোঃ মোমিনুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে সোমা আক্তার জানান, গত ১৮ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে খালিশপুর থানাধীন পোর্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে রিক্সায় করে শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার বাবার কাছে যাচ্ছিলেন। গোয়ালখালী বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছলে মোটরসাইকেলে আসা দুইজন ছিনতাইকারী তার রিক্সার গতি রোধ করে তার কাছে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তিনি চিৎকার করলে লোকজন ছুটে আসে এবং একজনকে ধরে ফেলে। অন্যজন মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। ধৃত ছিনতাইকারীকে জনতা পেটায় এবং তার নাম জানতে চায়। সে নিজের নাম জালাল, জামাল, এরকম বলে। আর পালিয়ে যাওয়া সহযোগীর নাম শুভ বলে জানায়। উত্তেজিত জনতা ধৃত ছিনতাইকারীর চোখ তুলে ফেলার চেষ্টা করলে তার চোখ জখম হয়। পরে টহল পলিশ ঘটনাস্থলে এসে আহত ছিনতাইকারীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এর পর তিনি তার ভাই জাহিদ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে থানায় গিয়ে শাহজামাল ওরফে শাহজালাল ওরফে শাহ এবং তার সহযোগী শুভ’র নামে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন। তিনি বয়রা সরকারী কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী উল্লেখ করে ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে মামলা করে এখন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। সোমা আক্তার আরও অভিযোগ করেন, তার দায়ের করা ছিনতাই মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তার মামলার সাক্ষী ও তাকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি শুনেছেন, আদালতে দায়েরকৃত মামলার ১৩ নং আসামি রাসেল ছিনতাইকারী শাহজালালের আপন মামাত ভাই। তিনি বলেন, হয়রনির উদ্দেশে তাকে অসামি করে আদালতে মামলা করা হয়। তিনি আদালতের মামলা প্রত্যাহার ও ধৃত ছিনতাইকারীর শাস্তি দাবি করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সোমা আক্তার বলেন, তার ভাই সেলিম জাহাঙ্গীর ও নুরুল ইসলাম পুলিশের কনস্টেবল। সেলিম ডিএমপিতে ও নুরুল ইসলাম কেএমপির যানবাহন শাখায় কর্মরত। তারা ছিনতাই মামলা নিয়ে কোন খবরদারি করছেন না। ঘটনার রাতে তার সঙ্গে ভাই জাহিদ হোসেন থানায় ছিল। ছিনতাইয়ের ঘটনার পর সোমা আক্তার ভয় পেয়েছিলেন। এর আগে গত রবিবার খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে শাহজালাল অভিযোগ করেন, খালিশপুর থানা পুলিশ ১৮ জুলাই হঠাৎ করেই তাকে আটক করে এবং থানায় নিয়ে ২ দফা প্রহারের পর গভীর রাতে বিশ্বরোড এলাকায় নিয়ে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলে। এ ঘটনায় তার মা রেনু বেগম গত ৭ সেপ্টেম্বর খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম খানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
×