ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় যৌতুকের জন্য হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে গৃহবধূকে হত্যা

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

কুমিল্লায় যৌতুকের জন্য হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে গৃহবধূকে হত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১৮ অক্টোবর ॥ যৌতুকের দাবিতে রুবিনা আক্তার নামের এক গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে শরীরে অকটেন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুবিনা মারা যায়। গত সোমবার গভীর রাতে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে স্বামীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে রুবিনার স্বামী সাজ্জাদ হোসেন ও পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে। রুবিনা এক সন্তানের জননী এবং মুরাদনগর উপজেলার চাপিতলা গ্রামের আবদুস সালামের মেয়ে। রুবিনার মরদেহ ময়নাতদন্তের পর বুধবার রাতে কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয় বলে জানিয়েছেন তার বাবা। রুবিনার বাবা আবদুস সালাম জানান, জেলার আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইতালী মার্কেট এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে রং মিস্ত্রী সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে প্রায় ২ বছর আগে রুবিনা আক্তারের (২১) বিয়ে হয়। সংসারে সে সুখী ছিল না। বিয়ের পর থেকে সাজ্জাদ আমাদের কাছ থেকে যৌতুক নিয়ে তাকে দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল, কিন্তু তা না পেয়ে প্রায়ই তাকে মারধর করা হতো। একপর্যায়ে রুবিনা তার ১০ মাসের কন্যাসন্তান নুসরাতকে নিয়ে কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স ধানম-ি এলাকায় আমাদের বাসায় চলে আসে। ৩ দিন আগে তার স্বামী সাজ্জাদ এসে তাকে দুর্গাপুরের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, সোমবার রাত ১টার দিকে রুবিনার শাশুড়ি ফোনে জানায়, রুবিনা নিজের গায়ে আগুন দিয়েছে। এতে সেখানে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ও পরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। রুবিনার ভাই শামীম জানান, ঘুমন্ত অবস্থায় তার বোনের হাত-পা বেঁধে শরীরে অকটেন ঢেলে আগুন দিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় তার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে রুবিনাকে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে রেখে তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন পালিয়ে যায়। শামীম আরও জানান, মৃত্যুর আগে সে (রুবিনা) শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে বলেছে ‘ঘুম থেকে তুলে তার স্বামী সাজ্জাদ তাকে মারধর করে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।’ বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডাঃ পার্থ শংকর পাল জানান, রুবিনার দেহের ৪৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল, তাই তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বুধবার রাতে রুবিনার বাবা আবদুস সালাম জানান, রুবিনার মরদেহ ময়নাতদন্তের পর কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়েছে। জানা গেছে, রুবিনার বাবা কুমিল্লা নগরীর বাদশাহ মিয়া বাজারে মুদি মালের ব্যবসা করেন। তার মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ গোটা পরিবার। তারা এ ঘটনায় জড়িত রুবিনার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন। বিকেলে এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ সালাউদ্দিন জানান, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×