ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;আবদুস সালামের জবানবন্দী

রিয়াজ ও রাজাকাররা মিলে আমার ভাই, মামাসহ ১৩ জনকে জবাই করে

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

রিয়াজ ও রাজাকাররা মিলে আমার ভাই, মামাসহ ১৩ জনকে জবাই করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার মোফাজ্জল হোসেন ওরফে আবুল বাশার ওরফে এবিএম মোফাজ্জল হোসেনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এ মামলায় তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আলবদর রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের নবম সাক্ষী মোঃ আব্দুস সালম জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আসামি রিয়াজ উদ্দিন ফকির এবং অন্য রাজাকাররা আমার ভাই আব্দুর রশিদ ও দুই মামাসহ ১৩ জনকে ধরে ভালুকজান ব্রিজের কাছে নিয়ে তাদের জবাই করে লাশ নদীতে ভাসিতে দেয়। সাক্ষী গ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ৫ নবেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর আবুল কালাম ও রেজিয়া সুলতানা বেগম চমন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার মোফাজ্জল হোসেন ওরফে আবুল বাশার ওরফে এবিএম মোফাজ্জল হোসেনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে সকালে মোফাজ্জল হোসেনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো (শ্যোন এ্যারেস্ট) আবেদন করে প্রসিকিউশন। পরে রেজিয়া সুলতানা চমন সাংবাদিকদের জানান, একাত্তর সালের তিনটি হত্যাকা-ের সঙ্গে মোফাজ্জল হোসেনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। এ কারণে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করি। আদালত আমাদের আবেদনের বিষয়ে শুনানি করে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এ মামলায় তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। রিয়াজ উদ্দিন ফকির ॥ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আলবদর রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের নবম সাক্ষী মোঃ আব্দুস সালম জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আসামি রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও অন্য রাজাকাররা আমার ভাই আব্দুর রশিদ আমার দুই মামাসহ ১৩ জন ধরে ভালুক জান ব্রিজের কাছে নিয়ে তাদের জবাই করে লাশ নদীতে ভাসিতে দেয়। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন আমার নাম মোঃ আব্দুল সালাম। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-বেতবাড়ি, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৭/১৮ বছর। আমি লেখাপড়া করি নাই। তখন আমি কৃষি কাজ করতাম। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেই। একাত্তরের ১৩ নবেম্বর আসামি রিয়াজ উদ্দিন ফকিরসহ অন্য রাজাকাররা আছিমবাজারে গিয়ে ২০/৩০ জন মানুষকে হত্যা করে। আমি লোকজনের কাছে আরও শুনেছি যে, ঐ দিনই আছিমবাজার থেকে রাজাকাররা আমার ভাই আব্দুর রশিদ ও দুই মামা করিম এবং কাদির ওরফে কাদুসহ ১৩ জনকে জবাই করে হত্যা করে। পরে তাদের লাশ নদীতে ভাসিতে দেয়। ঘটনাস্থল ভালুকজান ব্রিজের কাছে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।
×