ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গান, কবিতা আর আলোচনায় ‘সরগম’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপন

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

গান, কবিতা আর আলোচনায় ‘সরগম’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাইকে সম্মেলক কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথের গান ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’। গানটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পীরা গেয়ে উঠলেন নজরুল সঙ্গীত ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী’। মিলনায়তনে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতা করতালি দিয়ে শিল্পীদের উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি নিজেরাও যেন সমৃদ্ধ হলেন পরিবেশিত গানে। এর আগে ছিল আলোচনা পর্ব। শ্রোতার উপস্থিতি নেহাত কম নয়। প্রকৃত সঙ্গীতপ্রেমীদের আগমনে সরব হয়ে ওঠে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন বুধবার বিকেলে। উদ্দেশ্য একটাই, দেশের একমাত্র সঙ্গীত পত্রিকা সরগমের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন। মাসিক ‘সরগম’ ২২ বছরে পা রেখেছে এ মাসের ১ তারিখ। পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এদিন। পুরো অনুষ্ঠানটি দুটি পর্বে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্বে ছিল আলোচনা এবং শেষ পর্বে গান ও কবিতা পাঠ। ‘সরগম’ সম্পাদক ও সরগম সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি কাজী রওনাক হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চিত্রশিল্পী হাশেম খান, গীতিকবি কেজি মোস্তফা, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী, সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী প্রমুখ। শুরুতেই সম্প্রতি যে সকল সঙ্গীতপ্রাণ প্রয়াত হয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সরগম সাংস্কৃতিক দলের সাধারণ সম্পাদক স্বপন দত্তের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। এর পর বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী। তিনি বলেন, সাহিত্যভুবনের একটি হচ্ছে সঙ্গীত। এই সঙ্গীত হচ্ছে মনের ও আত্মার খোরাক। সরগম যেহেতু সঙ্গীত নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে, তাই সরগমও আমাদের আত্মা ও মনের খোরাক যোগায়। প্রতিমাসে পত্রিকাটি পড়ে আমি নিজেও সমৃদ্ধ হই। আমি একদিন থাকব না কিন্তু সরগম থাকবে। সরগম পরিবারকে আমার প্রাঢালা শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি। চিত্রশিল্পী হাসেম খান বলেন, আমি ছবি আঁকলেও সঙ্গীত পত্রিকার সঙ্গে জড়িত। যদি আমরা সুস্থ সাংস্কৃতিক সমাজ গড়তে চাই তাহলে সঙ্গীতের বিকল্প নেই। শুধু গান শুনলে চলবে না, গানের বিষয়ে অনেক কিছু জানতে হবে। সরগম সেই কাজটি করে আসছে একুশ বছর ধরে। আমি সঙ্গীত নিয়ে এ বছর বেশ কিছু ছবি এঁকেছি। আমাদের সরগম পত্রিকার আরও প্রচার ও প্রসারে এগিয়ে আসতে হবে। গীতিকবি কেজি মোস্তফা বলেন, আমি আগামী দিনের সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকারদের বলতে চাই, আপনারা এ দেশের মাটি ও মানুষের প্রাণের কথা সঙ্গীতে তুলে আনুন। নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, কেবল বিষয়ভিত্তিক একটি পত্রিকাকে এতদিন চালিয়ে আনা যে কতবড় কঠিন তা আমি বুঝতে পারি। কেননা, আমিও নাটকের একটি পত্রিকা দীর্ঘদিন চালিয়ে নিয়ে আসছি। সরগমের ২২ বছরে পদার্পণ এ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এক বিরল ও গৌরবময় অধ্যায় বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন তার দায়িত্ব পালন করেছেন একক প্রচেষ্টায়। সরগমকে এগিয়ে নিয়ে এর সঙ্গে সবার সহযোগিতা করা উচিত। গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী বলেন, যারা গানের মানুষ তাদের পত্রিকা সরগম। সরগমকে এখন সাহিত্যের পত্রিকাও বলতে পারি। সভাপতির বক্তব্যে কাজী রওনাক হোসেন বলেন, সরগম ও সরগম সাংস্কৃতিক দলের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা। সরগম সাংস্কৃতিক দলের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও ছিল এ মাসের ১ তারিখে। ইতোমধ্যে সাফল্যের সঙ্গে বেশ কিছু অনুষ্ঠান করেছে সাংস্কৃতিক দলটি। অর্জন করেছেন শ্রোতা-দর্শকের মনোযোগ ও প্রশংসা। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও মঞ্চে দলের শিল্পীরা নিয়মিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন। আলোচনার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। এ পর্বের শুরুতে সরগম সাংস্কৃতিক দলের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রনাথের গান ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ ও নজরুল সঙ্গীত ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী’। গানের ফাঁকে এ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম রনির চমৎকার আবৃত্তি কাজী নজরুল ইসলামের ‘অভিভাষণ’ দর্শক-শ্রোতাকে মুগ্ধ করে। দেশের প্রখ্যাত গিটারশিল্পী এনামুল কবিরের গিটার বাদন অনুষ্ঠানটিকে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী খুরশিদ আলম, আসফ খান, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, দিপ্তী রাজবংশী, রূপু খান, প্রমোদ দত্ত, রেবেকা সুলতানা, নাহার জামিল, ইফফাত আরা নার্গিস, ফেরদৌস আরা, ইয়াসমীন মুশতারী, মুনতারিন মহল, লতিফা হেলেন, মুর্শিদ জাহান, কামাল আহমেদ, নারায়ণ চন্দ্র শীল, আলম আরা মিনু, তারেক জুবায়ের, মঞ্জুষা, শিরীন শীলা, রোকেয়া হাসিনা নীলি, জামিল ইব্রাহীম এবং সরগম সাংস্কৃতিক দলের শিল্পীবৃন্দ। সবশেষে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন শামিমা চৌধুরী এলিস। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর হামলার পেছনে রাজনৈতিক উস্কানিÑসংস্কৃতিমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনপদে হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় রাজনৈতিক উস্কানি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বুধবার বিকেলে রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে রাঙামাটির লংগদুতে পাহাড়ী জনপদে হামলার ঘটনায় প্রতিবাদী একটি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সমতলের মানুষের মধ্যে কিন্তু সাম্প্রদায়িক ভাবনা-চিন্ত নেই। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে বা পাহাড়ীদের ভূমি দখলের লোভে তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। ধর্ম ব্যবহার করে রাজনৈতিকভাবে তাদের উস্কানি দেয়া হচ্ছে। সংস্কৃতিমন্ত্রী তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কিন্তু আমাদের কিছু করার থাকবে না। আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়ে পাহাড়ীরা যখন দেশান্তরী হচ্ছেন তখন তাতে আশঙ্কা প্রকাশ করে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলছেন, আমরা যখন এসডিজি বাস্তবায়নের কথা বলি তখন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে তা আমরা ভাবতে পারি না। টেরাকোটা ক্রিয়েটিভসও আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আয়োজনে ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয় প্রতিবাদী এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। দৃক গ্যালারির সহায়তায় প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে ৮০টি চিত্রকর্ম , ৫০টি আলোকচিত্র। বুধবারের সমাপনী আয়োজনে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সমন্বয়কারী অধ্যাপক মেসবাহ কামাল সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফিলিপিন্সের রাষ্ট্রদূত ভিসেন্তে ভিভেনসিও টি বান্দিলো, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্য ইফতেখারুজ্জামান। ভিসেন্তে ভিভেনসিও টি বান্দিলো বলেন, ফিলিপিন্সে শতাধিক ভাষাভাষীর মানুষ রয়েছেন। আমাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা রয়েছে। কিন্তু খুব বেশি কর্তৃত্বকারী একক কোন সংস্কৃতি আমাদের নেই। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা থেকে ক্রমেই সরে আসছে। লংগদুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যে ধরনের সহযোগিতা, সহমর্মিতা দরকার ছিল, তা কিন্তু তারা পায়নি। সিভিল ও মিলিটারি প্রশাসন বাস্তবে ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সভাপতির বক্তব্যে মেসবাহ কামাল বলেন, আজ অন্য একটি দেশের নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছি আমরা। অথচ নিজ দেশের নাগরিকরা একে একে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে । এ কেমন কথা! তাদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি এখন সময়ের দাবি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং, শিল্পী কনকচাঁপা চাকমা, টেরাকোটা ক্রিয়েটিভসের পরিচালক মৃত্তিকা কামাল।
×