ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ আফ্রিকা ১০৪ রানে জয়ী

সিরিজ হারল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

সিরিজ হারল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হেরে গেল বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হার হলো। বুধবার পার্লের বোল্যান্ড পার্কে এবি ডি ভিলিয়ার্সের ১৭৬ রানে ১০৪ রানের বড় ব্যবধানে হার হলো বাংলাদেশের। তাতে সিরিজের ব্যবধান ২-০ দাঁড়িয়ে গেল। এখন রবিবার যদি তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে হারে বাংলাদেশ তাহলে ওয়ানডে সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হবে। ওয়ানডে সিরিজের আগে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজে হারের ক্ষত যেন কোনভাবেই সারছে না। এমনই অবস্থা দাঁড় হয়েছে, ওয়ানডে সিরিজেও সেই ক্ষত দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা কঠিন। তা সবারই জানা ছিল। তাই বলে যে বাংলাদেশ দল ওয়ানডেতে সাফল্যে ভেসেছে, সেই বাংলাদেশের এতটাই কঠিন হবে। জয়তো দূরে থাক, চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিতে পারবে না! দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভিলিয়ার্সের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে যখন দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৫৩ রানের পাহাড়সম রান গড়ল, তখনই বাংলাদেশের হার আসলে নিশ্চিত হয়ে গেল। দেখার বাকি ছিল, হারের ব্যবধান কত বড় হয়। শেষ পর্যন্ত ৪৭.৫ ওভারে ২৪৯ রান করে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ইমরুল সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেন। মুশফিক ৬০ রান করেন। পেহলুকওয়ায়ো ৪ উইকেট নেন। বোল্যান্ড পার্কে প্রচুর রান হয়। মাঠ ছোট্ট। উইকেট ব্যাটিংনির্ভর। কিন্তু দল জিততে পারে যদি পেসাররা ভাল করেন। প্রতিপক্ষকে চাপে রাখেন। তা জানাই ছিল। এমন স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ফিল্ডিং নেয়ার কোন যুক্তিই নেই। আগে বিশাল রান করে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দেওয়াই তো আসল কাজ হওয়ার কথা। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা টস জিতে যখন ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন তখন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস তো হতভাগ! বিস্ময় প্রকাশ করতেও ভুলেননি। একবাক্যে বলে দিয়েছেন, ‘আমি বিস্মিত’। কেন বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্লেসিস, সেই প্রমাণ দিতে বেশি দেরিও করেননি দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটসম্যানরা। আগে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে যায়। এমনই বুমেরাং হলো দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শেষ হতেই যেন বাংলাদেশের হার নিশ্চিত হয়ে গেল। বাংলাদেশ যে এর আগে কখনই ৩২৯ রানের বেশি রান করতে পারেনি। সেখানে ৩৫৪ রানের টার্গেট তো অনেক বড়! শুরুতে ৬৯ রানের মধ্যে তামিম (২৩) ও লিটনের (১৪) উইকেট হারাল বাংলাদেশ। এরপর ইমরুল ও মুশফিক মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। দুইজনই দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন। ১৮তম ওভারেই দলকে ১০০ রানের ওপরে নিয়ে যান। ইমরুল হাফসেঞ্চুরিও পেয়ে যান। মুশফিকও হাফসেঞ্চুরি করেন। দুইজন মিলে দলকে দেড় ’শ রানের ওপরেও নিয়ে যান। যখন দল ১৬২ রানে যায় এমন সময়ে গিয়ে ইমরান তাহিরের বলে ইমরুল (৬৮) আউট হয়ে যান। ৯৩ রানের জুটি হয়। এরপর সাকিব ব্যাট হাতে নেমে ৫ রানের বেশি করতে পারেননি। যখন তার উইকেটে টিকে থাকা দরকার ছিল তখন ব্যর্থ হয়ে মাঠ ছাড়েন সাকিব। কিছুক্ষণ পর প্রথম ওয়ানডের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকও (৬০) সাজঘরে ফেরেন। ১৮৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংও ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। এরপরও মাহমুদুল্লাহ-সাব্বির মিলে চেষ্টা করেছিলেন। দুইজন মিলে দলকে ২০০ রানের ওপরেও নিয়ে যান। কিন্তু ২১৯ রান হতেই সাব্বিরও (১৭) সাজঘরে ফেরেন। এরপর যেন আউট হওয়ার মিছিল লেগে যায়। মাহমুদুল্লাহ (৩৫) চেষ্টা করেও পারেননি। নাসির, মাশরাফি, তাসকিন, রুবেলরা আর কতদূর নিয়ে যেতে পারতেন। পারেনওনি। ২৪৯ রানেই শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। বাংলাদেশের ইনিংসের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা যে এত রান করল তা হয়তো সম্ভব হতো না। যদি ভিলিয়ার্সের উইকেটটি শুরুতেই নেয়া যেত। ৯০ রানের সময় ডি কক ও প্লেসিসকে আউট করে দেন সাকিব। ভিলিয়ার্সকেও ২ রানের সময় আউট করতে পারতেন। কিন্তু স্লিপে নাসির ক্যাচটি ধরার সেইরকম চেষ্টাই করলেন না। ভিলিয়ার্স সুযোগটি পেয়ে ওয়ানডেতে ২৫তম সেঞ্চুরি করার সঙ্গে ক্যারিয়ার সেরা ১৭৬ রানের ইনিংস খেলেন। তার এই ইনিংসেই দক্ষিণ আফ্রিকা বিশাল স্কোর গড়ে ফেলে। এর আগে আমলাকে (৮৫) আউট করে ভিলিয়ার্স-আমলার জুটি (১৩৬ রানের জুটি) ভাঙ্গেন রুবেল হোসেন। যিনি পরে বল হাতে শেমুহূর্তে ঝলক দেখান। আমলাকে আউট করা গেলেও ভিলিয়ার্সকে কোনভাবেই থামানো যাচ্ছিল না। চতুর্থ উইকেটে গিয়ে ভিলিয়ার্স ও ডুমিনি মিলে আরেকটি শতরানের জুটি গড়েন। শেষ পর্যন্ত ৩৪৩ রানে গিয়ে থামেন ভিলিয়ার্স (১০৪ বলে ১৫ চার ও ৭ ছক্কায় ১৭৬ রান)। ভিলিয়ার্সকে থামান রুবেল। কিন্তু ততক্ষণে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশাল রান গড়ে ফেলে। এরপরও স্বস্তি মিলে। ভিলিয়ার্সকে যদি এই সময়ে আউট না করা যেত তাহলে রান তো ৪০০ রানের কাছাকাছি চলে যেত। ভিলিয়ার্সকে থামানোর কাজটি করেন রুবেল। এরপর ৫০তম ওভারের শেষ দুই বলে ডুমিনি ও প্রিটোরিয়াসকেও আউট করে দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন রুবেল। বোলিং অন্ধকারের মাঝে রুবেল যেন আলো হয়ে ধরা দেন। ততক্ষণে দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য ৩৫৩ রান করে ফেলে। পার্লে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরটি গড়ে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই রান গড়ার পরই যেন দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বড় জয়ই পায় প্রোটিয়ারা। সিরিজ হারে বাংলাদেশ।
×