ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পার্টি কংগ্রেস উদ্বোধনকালে শি জিন পিং

সম্ভাবনার নতুন যুগে চীন

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

সম্ভাবনার নতুন যুগে চীন

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বুধবার কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম কংগ্রেসের উদ্বোধনকালে ঘোষণা করেন যে, চীন সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের এক নতুন যুগে পদার্পণ করেছে। এই কংগ্রেসে তার অপ্রতিহত ক্ষমতা আরও সুসংহত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর এএফপির। সুবিশাল গ্রেট হলে সমবেত প্রায় ২৩০০ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট শি বলেন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে যে নেতৃত্ব জাতিকে পরিচালনা করার সুকঠিন দায়িত্ব নিয়েছে তাকে বাধাগ্রস্ত করার সব ধরনের অপচেষ্টা পার্টি অবশ্যই দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করবে। তিনি বলেন, দেশের ভেতর এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি গভীর ও জটিল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চীনের উন্নয়ন এখনও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। এখানে যেমন উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার খোলা আছে, তেমনি ঝুঁকিও রয়েছে অনেক। কারণ চীনা বৈশিষ্ট্যের সমাজতন্ত্র এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। বিশাল হাতুড়ি ও কাস্তে প্রতীক শোভিত মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে শি আন্তর্জাতিক বলয়ে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব, স্বদেশে দারিদ্র্য ও অসাম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সেই সঙ্গে পার্টির অভ্যন্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ অভিযানের উচ্চ প্রশংসা করেন। শি জিনপিং তার অনুগত পার্টি সদস্যদের সমর্থন নিয়ে আরও পাঁচ বছরের জন্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের নেতৃত্ব দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, শি জিনপিং নিজেকে চীনের আধুনিক অর্থনীতির জনক দেং জিয়াও পিং, এমন কী চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুং-এর সমকক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন এবং এই লক্ষ্যে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির ৮ কোটি ৯০ লাখ ভোটকে কাজে লাগাবেন। আরকেটি সূত্র জানিয়েছে, শি তার চিন্তাধারা কমিউনিস্ট পার্টির সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেবেন, এতে করে তার নামের মহিমা চেয়ারম্যান মাও বা দেং জিয়াও পিং-এর পাশাপাশি উচ্চারিত হবে। কমিউনিস্ট পার্টিতে বর্তমানে শি জিন পিংয়ের অনুগতদের ছড়াছড়ি, প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করার মতো কেউ আর পার্টিতে নেই। বিগত পাঁচ বছর ধরে শির ব্যাপক দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে তার সম্ভাব্য বিরোধীদের অনেকেই ক্ষমতাচ্যুত, বহু লোক কারাগারে এবং অনেকে আটক অবস্থায় কাল কাটাচ্ছেন। এদের সংখ্যা ১৩ লাখের মতো। তাই তিনি তার অনুগত পার্টি সদস্যদের নিয়ে সাংবিধানিকভাবে যে কোন পদ, যতদিন খুশি ততদিন আঁকড়ে ধরে থাকতে পারবেন বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। তাদের অভিযোগ প্রেসিডেন্ট শির বিরতিহীন দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে ভিন্ন মতাবলম্বী বা স্বপক্ষত্যাগী প-িত সাহিত্যিকগণও রেহাই পাননি। চীনা কর্তৃপক্ষ সে দেশের নোবেল জয়ী লিও জিয়াবোকেও মুক্তি দেয়নি। তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ছিলেন এবং গত জুলাই মাসে কারারুদ্ধ অবস্থায়ই তার মৃত্যু হয়। প্রেসিডেন্ট শি সামরিক বাহিনী পুনর্গঠন এবং বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের মাধ্যমে চীনের সমর শক্তির সম্প্রসারণ করে দেশে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেন। প্রেসিডেন্ট শির আরেকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির বিপক্ষে তিনি তার বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সম্প্রসারণ করেছেন। তিনি ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতির আওতায় চীনের অর্থনৈতিক শক্তির আরও বিকাশ ঘটানোর অঙ্গীকার করেন এবং তার এই উদ্যোগের সঙ্গে বিশ্বের বহুদেশ সংযুক্ত হয়েছে। কিন্তু চীনে কর্মরত বিদেশী কোম্পানিগুলো অভিযোগ করেছে যে, শির কথার সঙ্গে কাজের সঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কেননা রাষ্ট্রীয় প্রশাসন এখনও অর্থনীতির উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। এদের মধ্যে মার্কিন ও ইউরোপীয় ফার্মগুলো জানিয়েছে যে, কোন কোন সেক্টরে তাদের ব্যবসা করার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং তাদের নিজস্ব প্রযুক্তি জ্ঞান স্থানীয় চীনা কোম্পানির সঙ্গে ভাগাভাগি করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে।
×