ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সেলিনা জাহান

অভিভাবকের কর্তব্য

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

অভিভাবকের কর্তব্য

খেলার প্রতি আসক্তি মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি এবং শিশু বয়স থেকেই নানা রকম খেলার ভেতর দিয়েই মানুষ বড় হয়ে ওঠে। খেলাধুলা মানুষের জীবনের একটা অপরিহার্য অঙ্গ। কারণ খেলাধুলা মানুষের পরিপূর্ণ শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের সহায়ক। তবে একটা কথা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে খেলা কথাটার সঙ্গে ধুলা শব্দটি কিন্তু অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। তাই আগে আউটডোর এবং ইনডোর এই দুটো খেলারই ভীষণ প্রচলন ছিল। কিন্তু আজকাল সব খেলাই কম্পিউটারভিত্তিক হওয়াতে সব হিসেবেই কেমন যেন ওলট পালট হয়ে গেছে। অবশ্য যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার অনেক অভ্যাসের পরিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক। আধুনিক জীবনের অনেক ভাল জিনিসের ¯্র্েরাতের সঙ্গে অনেক সূক্ষ্ম নোংরা আবর্জনাও যে ঢুকে যাবে সেটাও অস্বীকার করার যো নেই। তবে আপাতদৃষ্টিতে এই সূক্ষ্ম জিনিসগুলো যতই নিষ্পাপ মনে হোক এগুলোই এতদিন মহীরুহ হয়ে ওঠে মানবসভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে, যেমন কম্পিউটার গেম। শিশু-কিশোরদের এটির প্রতি আসক্তি আজ এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে জীবনের জন্য তা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ মানুষের চিরন্তন। আগেকার দিনে বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি সবাই মিলে যে জীবন, তাতে সবাইকে সবাই সময় দিত, তাই কারও কোন বিশেষ ব্যাপারে আসক্তি জন্মাবার ফুরসত মিলত না। বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শী সব কিছু মিলে ছিল সে জীবন, সেখানে সবাই মিলে হৈচৈ করে লুডু, ক্যারম, দাবা, ব্রিজ (কার্ডে) হাডুডু, এক্কা-দোক্কা মায় ক্রিকেট পর্যন্ত চলত। সে সময় একটা কথার খুব প্রচলন ছিল, খেলার সময় খেলা, পড়ার সময় পড়া, সারাদিন বসে যেমন পড়াশোনা করা যাবে না, সারাদিন বসে কিন্তু খেলাও যাবে না, এখন সময় পাল্টে গেছে। যার যার জীবন তার তার। বাবা-মার সময় নেই ছেলেমেয়েদের বেশি সময় দেয়ার আর ছেলেমেয়েদের তো নেই-ই। এ ছাড়া শহরকেন্দ্রিক ছেলেমেয়েদের সবচেয়ে বড় অসুবিধা যেটা সেটা হচ্ছে মাঠের অভাব। আগে প্রতিটি পাড়ায় একটি করে মাঠ থাকত। সব মানুষের জীবনেই একটা কল্পনার জগত থাকে, শিশু-কিশোরদের মনেও আছে, কিন্তু এখনকার শিশু-কিশোরদের মন জুড়েই থাকে কিছু অবাস্তব অতি শক্তিধর চরিত্র, যাদের একেক জনের একেক ধরনের পাওয়ার। এই অবাস্তব ক্ষমতাই তাদের কল্পনা বিলাসের সহায়ক। সমাজের এই ভয়ঙ্কর সমস্যার আপাতত উত্তরণের উপায় হয়ত একটাই এবং সেটা হচ্ছে বাবা-মায়ের ছেলেমেয়েকে যতটুকু সম্ভব সময় দেয়া এবং তাদের সঙ্গে সহজভাবে বন্ধুর মতো মেশা। মহাখালী, ঢাকা থেকে
×