ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক চাপ

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

আন্তর্জাতিক চাপ

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে ক্রমাগত। রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও জোরপূর্বক দেশ ত্যাগের ঘটনায় দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধানসহ সামরিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। একই সঙ্গে দেশটিকে প্রদত্ত সব ধরনের সহযোগিতা পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ দমন নীতিতে ব্যবহার করা যায় এমন কোন অস্ত্র মিয়ানমারের কাছে বিক্রি না করার বিষয়ে ইইউ ব্যবস্থা নিচ্ছে। এতে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাড়তি পদক্ষেপ নেবে তারা। তাদের এ ভূমিকা রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে ধারণা করা হয়। ২৮টি দেশের সমন্বিত ইইউ রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নকারীদের বিচার করার যে আহ্বান জানিয়েছে তা রোহিঙ্গাসহ মানবতাবাদী বিশ্বজনেরও দাবি। আন্তর্জাতিক চাপ তৈরিতে এবার বিশ্বব্যাংকও এগিয়ে এসেছে। পুরো বিষয়টিতে নীরব থাকার পর এবার সরব হয়েছে তারা। জাতিগত নিধনের প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের দুই শ’ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক। মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বলেছেন, তারা বাংলাদেশের পাশেই আছেন। এভাবে ক্রমশ বিশ্ব জনমতের দাবিতে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হবে সঙ্কটের সমাধানে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা সমস্যা সমাধানের পথে আরও এক ধাপ অগ্রগতি বলে চিহ্নিত করা যায়। এই পথ ধরে আরও দেশ ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে। আগামী ২০ ও ২১ নবেম্বর মিয়ানমারে অনুষ্ঠেয় আসেম (এশিয়া-ইউরোপ)-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠককে কাজে লাগাতে চাইবে ইইউ। সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি এশিয়ার অংশীদারদের সঙ্গেও ইইউ চালাবে ইতিবাচক আলোচনা। ইইউ সেনাবাহিনীর ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশলের নীতি নিয়েছে। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অবশ্যই এটি গুরুত্বপূর্ণ। ধীরে ধীরে ইউরোপ আরও শক্ত পদক্ষেপের দিকে যাবে বলে আশা করা যায়। ইইউ বলেছে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তারা আরও পদক্ষেপ নেবে। রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরতে পারে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হলে মিয়ানমার নমনীয় হতে বাধ্য। দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী অসামঞ্জস্যপূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করছে নিজ দেশের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের ওপর। তাই ইইউ চলমান সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা বাতিল করে দিতে চায়। তা না হলে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে। একথা বলা যায়, রাখাইনে হত্যাযজ্ঞ বন্ধে সরব ইইউ। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর যে সুযোগ ইইউর সামনে তা কার্যকর করা গেলে মানবিক সঙ্কট নিরসন হবে। নতুবা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আরও সঙ্কটে পড়বে। বাস্তবতা হচ্ছে, রাখাইন থেকে অধিকাংশ রোহিঙ্গাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। কাজেই ইইউকে গিয়ে দেখতে হবে সেখানে কী ঘটেছে এবং ঘটছে। তাদের ফ্যাক্টস এ্যান্ড ফাইন্ডিং কমিশন যেন সেখানে যেতে পারে সে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। মিয়ানমার সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ দিতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা নিধন কর্মসূচী তারা বন্ধ করে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পরিবেশ মিয়ানমারকে তৈরি করার জন্য ইইউর চাপ অব্যাহত রাখতে পারে। জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদ যে চাপ সৃষ্টি করেছে সেখানে ইইউর চাপ আরও কঠোর অবস্থানে। আর বিশ্বব্যাংক যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করছে। এভাবে অন্যান্য দেশ ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে সমস্যার আশু সমাধানের পথ প্রশস্ত হতে পারে।
×